ড. ইউনুসের যত অর্থ কেলেঙ্কারি
- ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী, এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই
- তিনি বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বন্ধু ও সুহৃদ এটাও ঠিক
- কিন্তু বিশ্বজুড়ে খ্যাতির অধিকারী আর কোনো মানুষের নাম কি আমরা জানি যিনি লাভজনক ব্যবসায় জড়িয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের ঠকিয়েছেন?
ড. ইউনুস কি একজন অপরাধী? নাকি নিরাপরাধ ব্যক্তি? একদিকে ড. ইউনুস ও ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন তার অপরাধ নেই তিনি প্রতিহিংসার শিকার। অন্যদিকে বাংলাদেশের 'আইন' বলছে তিনি অপরাধী। বাংলাদেশের শ্রম আইনে তিনি সাজাও পেয়েছেন। দীর্ঘ শুনানির পর একজনের অপরাধ আদালতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হওয়ার পরও তাকে নির্দোষ বলার কোন উপায় থাকে না।
ইউনুসের মামলার নথি ঘেঁটে জানা যায়, অর্থ পাচার, শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অনিয়ম তিনি করেছেন, মামলা হয়েছে শতাধিক। এসব মামলার বাদী শুধু সরকার নয়, তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরাও।
গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই। তিনি শুধু পূর্ণকালীন একজন কর্মকর্তা ছিলেন। গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে ২৪ কোটি টাকা অনুদান নিয়েছেন। গ্রামীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে ৪৪৭ কোটি টাকা নিয়েছেন।
আর তার এসব অনৈতিক কাজের প্রমাণ লুকোতে ড. ইউনূস ১৯৯০-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন খতিয়ান পর্যন্ত ধ্বংসও করে দিয়েছেন।
সুস্পষ্ট আইনি বিধান থাকা সত্ত্বেও 'গ্রামীণ টেলিকম' 'গ্রামীণফোন লিমিটেড'-এ তার ৩৪.২০% শেয়ারের বিপরীতে প্রতিবছর যে পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জিত হয় তার ৪২.৬৫% লভ্যাংশ গ্রামীণ কল্যাণ নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করে আসছেন ড. ইউনুস, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
'গ্রামীণ টেলিকম' প্রতিষ্ঠার সময় প্রতিষ্ঠানটি 'গ্রামীণ কল্যাণ'র কাছ থেকে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিল। আইন অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণকে উল্লেখিত টাকার বিপরীতে গ্রামীণ টেলিকম সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিধান লঙ্ঘণ করে বার্ষিক ৪২.৬৫% লভ্যাংশ হিসেবে এ যাবৎ ৫০০০ কোটি টাকার উপরে প্রদান করেছে। অথচ ঋণের অর্থ এখনও পরিশোধ হয়নি।
উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে প্রদানের কোন আইনি ক্ষমতা নেই। গ্রামীণ কল্যাণের এই অর্থ গ্রহণ করার কোন আইনি অধিকারও নেই।
সূত্রমতে, গ্রামীণ টেলিকম।থেকে গ্রামীণ কল্যাণে ৫০০০ কোটি টাকার উপরে যে অর্থ প্রেরণ করা হয়েছিল, যা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের বাকি লভ্যাংশ অর্থাৎ ৫৭.৩৫ % লভ্যাংশ যার পরিমাণ ৭০০০ কোটি টাকার বেশি, সেই অর্থেরও প্রায় ৯০ ভাগ নামে-বেনামে অবৈধভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই অর্থও কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে ড. ইউনুস নিজের ব্যক্তিগত নামে বিভিন্ন দেশে সম্পদ ক্রয়সহ নানা রমরমা ব্যবসা করছেন।
শুধু তাই নয়, বিদেশি দানের টাকা নিয়েও ড. ইউনুস নয়-ছয় করেছেন। ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংককে দাতা সংস্থা নোরাড (NORAD) কতৃক ৩৪৭.১৮ কোটি টাকার অনুদানও গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করেন তিনি। পরবর্তীতে নোরাডের চাপের মুখে এই টাকা ফেরত দেন ড. ইউনুস।
১৯৯৬ সালে নোরাডের দানের টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন ইউনুস, যা পরবর্তী সময়ে কয়েক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বেআইনিভাবে হস্তান্তরিত এই বিপুল পরিমাণ অর্থও নানান হাত বদলের পর সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোন অপরাধেরই শাস্তি হওয়া উচিৎ। ইউনুসের বেলাতেও হয়েছে। কিন্তু নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য শেখ হাসিনার রোষানলকে বারবার সামনে আনছেন তিনি। শুধু বেআইনি কাজ করেছেন বলেই তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
কোনো মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ও খ্যাতিমান হয়ে উঠলে কি নিজ দেশের আইন আদালতের ঊর্ধ্বে উঠে যান? অন্য মানুষকে ঠকিয়ে আইনের আওতামুক্ত থাকার লাইসেন্স পেয়ে যান?
ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী, এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তিনি বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বন্ধু ও সুহৃদ এটাও ঠিক? কিন্তু বিশ্বজুড়ে খ্যাতির অধিকারী আর কোনো মানুষের নাম কি আমরা জানি যিনি লাভজনক ব্যবসায় জড়িয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের ঠকিয়েছেন?
তিনি যে শ্রমিকদের অধিকার নষ্ট করেছেন, তিনি যে কর্মচারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করেছেন এগুলো কি অস্বীকার করার কোনো উপায় আছে? তাবৎ বিশ্ব নেতাদের চিঠি কি তাঁর এই অনৈতিক কাজের সার্টিফিকেট দেবে?