গ্রেফতার হবার আগেই যেভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধু
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন ঘুমন্ত বাঙালিদের গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের আকাশে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ উদিত হয় নতুন সূর্য, স্বাধীনতার সূর্য।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে লিখিত ঘোষণাপত্রটি দেশবাসীর উদ্দেশে তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার সেই ঘোষণা।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে' শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পরে চট্টগ্রামের বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’
এছাড়া ওয়্যারলেস বার্তায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক ও দক্ষিণ এশিয়া করেসপনডেন্ট ডেভিড লোশাক লিখেছেন, ‘ স্বাধীনতার ঘোষণাকারী শেখ মুজিবের গলার আওয়াজ খুব ক্ষীণ ছিল। খুব সম্ভবত ঘোষণাটি তিনি গ্রেফতারের কিছু সময় আগেই রেকর্ড করেছিলেন, পরে তা সারাদেশে প্রচার করা হয়েছিলো।’
এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন এম এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান ৷
(সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’, বিবিসি, ডয়চে ভেলে।)