জনবিচ্ছিন্ন গণঅভ্যুত্থান : ভূতের মুখে রাম নাম

জেনারেল জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা পুত্র তারেক রহমানের একটি ভিডিও বার্তা সম্প্রতি (২০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ণ অসহযোগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত করার ডাক দিয়েছেন।

তার এই ভিডিও বার্তা বাংলাদেশের সার্বিক জনগণের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে? এটি কি যুক্তিসঙ্গত? নাকি এটি তার আবেগ তাড়িত ভিডিও বার্তা অথবা বিকৃত মস্তিষ্কের বহিঃপ্রকাশ? এ বিশ্লেষণে যাওয়ার পূর্বে তারেক রহমানের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের এবং ওয়ান-ইলেভেনের পরবর্তী সময়ে লন্ডনে পলাতক আসামী হিসেবে বসবাসরত অবস্থায় ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পূর্বে এরশাদ প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যতীত তারেক রহমানের কোন বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও ১৯৯১ সাল থেকে তার ব্যবসায়িক জীবন শুরু হয়। তারেক রহমানের একাধিক ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ছিলেন অন্যতম।

২৮ মার্চ ২০০৮ সালের দি ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ মতে তারেক রহমানের ব্যবসায়িক প্রধান অংশীদার ১৯৯১ সালে মাত্র ৩৯০০০ টাকা মূলধনে ব্যবসা শুরু করলেও বিএনপি সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তিনি কিছুদিনের মধ্যেই রহমান শিপার্স ডান্ডি ডাইংসহ আরও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন যেগুলোর প্রধান অংশীদার ছিলেন বেগম জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান।

ব্যবসায়িক বিস্তার করে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে তারেক রহমানের আজীবন ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লালসা বেড়ে যায়। যার ফলে বিএনপিকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মত নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেয় তারেক রহমান।

১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার চাপের মুখে সরকার ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এবং সে নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারেক রহমান অত্যন্ত সুকৌশলে জামায়াতের সাথে সখ্য গড়তে থাকেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে।

বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবন হাওয়া ভবন হয়ে উঠে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের কেন্দ্রস্থল। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পূর্বে তারেক রহমান দিল্লিতে গিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সঙ্গে বৈঠক করতে সক্ষম হয়। সে বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত জয়লাভ করলে ভারতকে কী কী সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে তার একটি মুচলেকা প্রদান করে তারেক রহমান।

একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আশ্বস্ত করে যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে মার্কিন চাহিদা মেটানো হবে। এভাবেই ভারত ও আমেরিকার সমর্থনে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে।

১ অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পূর্বেই হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে উদযাপন শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনের সূত্র মোতাবেক জানা যায় ঐদিন হোটেল পূর্বাণী থেকে শেফ আসে, থরে থরে সাজানো হয় দামি বিদেশী মদ। উপস্থিত হন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুর রহমান পটল, লুৎফুজ্জামান বাবর, ব্যারিস্টার আমিনুল হকসহ অনেকেই। তারেকের দৌরাত্ম্যে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের গোপন তারবার্তা ফাঁস করে। উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথি মারফৎ জানা যায় সেরাতেই তারেকের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব নিলামে ওঠানোর ঘোষণা আসে।

পরে ৬ অক্টোবর রাতে হাওয়া ভবনে মন্ত্রিসভার পদ নিলাম হয়। সেইসাথে তারেক রহমানকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেয়ার চুক্তিতে ভাগ-বাটোয়ারা হয় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর। সেই মন্ত্রিসভার বড় চমক ছিল লুৎফুজ্জামান বাবর যিনি বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

তারেকের আস্থাভাজন এবং যারা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডোনেশন দিতে সক্ষম এবং যাদের সাথে তার ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব আছে তাদেরকে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অধিষ্ঠিত করেন। তারেকের প্রত্যক্ষ আগ্রহেই মাহমুদুর রহমানকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা করা হয়।

২০০১-২০০৬ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তারেক রহমান নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-রহমান গ্রুপ, ওয়ান গ্রুপ, রহমান নেভিগেশন, চ্যানেল ওয়ান, ইউনিটেক্স এ্যাপারেলস, ক্রিমেন্টাইন লিমিটেড, ক্রোনোটেক্স লিমিটেড, তুরাগ ফিশারিজ, তাজ ডিস্টিলারিজ, ওয়ান টেক্সটাইল, খাম্বা লিমিটেড, ওয়ান কম্পোজিট, ওয়ান স্পিনিং, ওয়ান ডেনিম, ওয়ান কনজ্যুমার প্রোডাক্ট লিঃ এবং সিলভার লাইন কম্পোজিট মিল। সেসময়ে খাম্বা লিমিটেড বেশ আলোড়ন তুলেছিল।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান তারেকের নির্দেশনা মোতাবেক খাম্বা প্রকল্প চালু করেন। এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৩ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার গোয়লাপাড়ায় ৯৯ একর জমির উপর খাম্বা লিমিটেডের উৎপাদন শুরু করেন। বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের ইস্যু বানিয়ে, শুধুমাত্র বিদ্যুতের খাম্বা পুঁতে তারা বিশ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছিল।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ সাল সময়ে তারেক রহমানকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। বস্তুত তারেক রহমানই হাওয়া ভবনকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমান্তরালে আর একটি ছায়া সরকারে পরিণত করে।

হাওয়া ভবনে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে এবং তার আস্থাভাজন হওয়ায় হারিছ চৌধুরীকে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেন এবং এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হারিছ চৌধুরীর মাধ্যমে তার কব্জায় আসে। এর মাধ্যমেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রশাসনের পদোন্নতি, টেন্ডার, নিয়োগ থেকে শুরু করে যে কোনো চুক্তি- সবকিছুর ক্ষেত্রেই কমিশন বাণিজ্য শুরু করে তারেক রহমান।দুর্নীতি এবং লুটপাটের এক মহোৎসব শুরু হয় দেশজুড়ে।

ব্যবসা-বাণিজ্য খেকে শুরু করে সকল কর্মকাণ্ডে ১০% কমিশনের ব্যবস্থা চালু করে তারেক রহমান। সমালোচকরা সেসময়ে তাকে আখ্যা দিয়েছিল মিঃ টেন পারসেন্ট। উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথিতেও এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।

বিদেশী কোম্পানিরও তার ঘুষ বাণিজ্যের কাছে মাথা নত করতে হতো। মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই তারেক রহমান এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মানি লন্ডারিং নিয়ে তদন্ত করেছে এবং বাংলাদেশের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি। এফবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে, তারেক ও মামুন তাদের সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্মাণ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর পরিচালক এবং চীনের হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন এর এদেশীয় এজেন্ট খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছিল।

হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির লোকাল এজেন্ট হিসেবে টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাওয়ার জন্য তারেক ও মামুনকে ওই টাকা দিয়েছিল ঘুষ হিসেবে। এফবিআইয়ের এজেন্ট ডেব্রা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ এই বিষয়ে তারেক ও মামুনের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের আদালতের সামনে সাক্ষ্য দেন যে, ব্যবসায়ী খাদিজা ইসলাম সিঙ্গাপুরে মামুনের সিটি ব্যাংকে (তারেকের বন্ধু মামুনের সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার: ১৫৮০৫২-০১৬-০০৮) ওই টাকা জমা দিয়েছিলেন। ওই একই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারেক রহমানের নামে সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ড ( যার নাম্বার: ৪৫৬৮-৮১৭০-১০০৬-৪১২২) ইস্যু করা হয়।

তারেক রহমান এই কার্ড বিভিন্ন দেশে যেমন; গ্রিস, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করেছিল এমন তথ্যই উঠে এসেছে এফবিআইয়ের তদন্তে। ২১ জুলাই ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের জেল এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে মানি লন্ডারিং এর জন্য।

জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করার পরই জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে তারেক রহমান নিয়ন্ত্রিত বিএনপি নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ে। জামায়াত যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাই ফিল্মি কায়দায় ক্ষমতা দখলে বিএনপিকে ব্যবহার করছে জামায়াত।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত শুধু রায়ই দেননি তখন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল যে, এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ ‘ফিনানশিয়াল ক্রাইম’ ছিল এবং এ ধরনের কাজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের একটি বাধা।

এছাড়াও তারেক রহমানের ঘুষ এবং অর্থ পাচারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সৌদিতে অর্থ পাচার, নাইকো দুর্নীতি, দুবাই, মালয়েশিয়া ও বেলজিয়ামে অর্থ পাচার, জার্মান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি সিমেন্স থেকে ঘুষ গ্রহণ, ভারতের টাটা গ্রুপ থেকে ঘুষ চাওয়ায় বিনিয়োগে টাটার অসম্মতি, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট অর্থ দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি এবং গ্যাটকো দুর্নীতিসহ অনেক কেলেঙ্কারি যা সকলেরই জানা।

২০০১ সালের আগ থেকেই তারেক রহমান জামায়াতসহ দেশী-বিদেশী জঙ্গি সংগঠনের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে থাকেন যেগুলো ঐ বছরের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে।

তারেক রহমান জামায়াতকে প্রত্যক্ষ মদদ প্রদানের মাধ্যমে জামায়াতের ছত্রছায়ায় এবং বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় অসংখ্য ইসলামী জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলে এবং ২০০১ এর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথেই সারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। এর ফলে অনেক হিন্দু পরিবার দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়।

ভারতের সমর্থনে নির্বাচনে জয়লাভ করলেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা এবং জামায়াত নিয়ন্ত্রিত দেশী-বিদেশী জঙ্গি সংগঠনের মদদে ভারতের অভ্যন্তরে নাশকতা সৃষ্টি করে পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদেরকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহের মিশনে নামে হাওয়া ভবন। কিন্তু চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে যায় এক সাহসী পুলিশ কর্মকর্তার কারণে। এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন, তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী, রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদসহ বিএনপি-জামায়াত সরকারের ঊর্ধ্বতন অনেক নেতা।

তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনায় বিএনপি-জামায়াতের চিরস্থায়ী সরকারে থাকার বন্দোবস্ত করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের টার্গেট করে হত্যার মিশনে নামে। এর ফলে জীবন দিতে হয় আহসান উল্লাহ মাস্টার ও শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ অনেক প্রথিতযশা নেতাদের।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দকে হত্যার মিশনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হয় এবং আহত হন শতাধিক মানুষ যাদের মধ্যে অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। ওই হামলায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি থেকে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ অন্যান্যদের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে।

তারেক রহমান এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওইদিনের ঘটনায় দু’জন নিহত এবং অর্ধশত আহত হন। পরবর্তী সময়ে জেএমবির আরও কয়েকটি বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন।

হাওয়া ভবন এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি আর জঙ্গি তৎপরতার কারণেই বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং ২০০৯ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে এবং বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করার পরই জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে তারেক রহমান নিয়ন্ত্রিত বিএনপি নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ে। জামায়াত যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাই ফিল্মি কায়দায় ক্ষমতা দখলে বিএনপিকে ব্যবহার করছে জামায়াত।

অতএব ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন তারেক রহমান ও বিএনপি যে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিলো তাতে দেশের জনগণ কোনোভাবে সাড়া দেবে বলে মনে করি না। বিএনপির প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার এই ডাক কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে আহ্বান করেছেন এবং এর জন্য অনেকের জানমালের ক্ষতি হলেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতায় আনার ডাক দিয়েছেন।

মানুষের জীবন তারেক রহমানের কাছে কতটা সস্তা ভাবতেও কষ্ট হয়। তিনি থাকবেন আরামে আয়েসে লন্ডনে আর বাংলার মানুষ তার জন্য জীবন দেবে- যিনি কি না আবার দুর্নীতি আর অপকর্মের বরপুত্র। অতএব তারেক রহমানের সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তাটি নিঃসন্দেহে একটি জনবিচ্ছিন্ন আহ্বান যাকে কেবল ভূতের মুখে রাম নাম বলাই বাহুল্য।

লেখক :  ড. মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান , অধ্যাপক, সার্জারি ও থেরিওজেনোলজি বিভাগ, সিলেট কৃষি