বিএনপির ১০ দফা : নতুন বোতলে পুরনো মদ,আশাহত তৃণমূল!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:০২, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮ পৌষ ১৪২৯

১০ দফা' ঘোষণা ছাড়া আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই বক্তব্য এসেছে বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে,যদিও প্রদত্ত ১০ দফায়ও নতুন কিছু নেই। বিগত কয়েকবছর যাবৎ বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, দশ দফায় সেগুলোই মূলত তুলে ধরা হয়েছে।

জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, পাঁচ নেতাকর্মী হত্যা, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ম ধাপে ঢাকার ১৬ টি স্থানে সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপে ১২ অক্টোবর চট্রগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশগুলো শেষে নানান নাটকীয়তার পর তৃতীয় ধাপে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। তবে সমাবেশ পূর্ববর্তী কয়েকমাসে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার অতিকথন আলোচিত-সমালোচিত হলেও জাতীয় সংসদ থেকে দলের সাতজন সদস্যের পদত্যাগ এবং '১০ দফা' ঘোষণা ছাড়া আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই বক্তব্য এসেছে বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে,যদিও প্রদত্ত ১০ দফায়ও নতুন কিছু নেই বলে অভিমত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।বিগত কয়েকবছর যাবৎ  বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, দশ দফায় সেগুলোই মূলত তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক  কথা হলেও তা নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণ চোখে পড়েনি তেমন।

গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ থেকে বিএনপি যে ১০ দফা ঘোষণা করে তা হলো:

(১) 'জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকাররের পদত্যাগ।'
 
   এটি বিএনপির পুরোনো দাবি এবং এই দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে।আর এটাকে জনদাবি বলা যাবে না।এটি তাদের দলীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা।কারণ যে প্রক্রিয়াতেই হোক, ভোটের মাধ্যমে এই সংসদ হয়েছে।আর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি বিএনপির রাজনৈতিক দাবি। এর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা কতোটুকু তা ভাবনার বিষয়।কেননা জনসম্পৃক্ততা,গভীর সংকট বা নিরুপায় অবস্থা ব্যতীত একটি রাজনৈতিক দলের দাবির প্রেক্ষিতে কোন সরকার পদত্যাগ করার তেমন উদাহরণ পৃথিবীতে নেই।

(২) 'একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।'
   
  এটি মিমাংসিত ইস্যু। কারণ ২০১১ সালের ১০ মে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তত্বাবধায়ক সরকার তথা সংবিধানের ৫৮খ অনুচ্ছেদ অবৈধ ঘোষণার মাধ্যমে বাতিল করে।ফলে এই ইস্যুটি সরকারের হাতে  নেই। এটা পুনঃস্থাপন করতে হলে আবার আদালতে যেতে হবে। রিভিউ করার আবেদন করা যেতে পারে। কাজেই এ দাবিটিও বিএনপি সরকারের কাছে করতে পারে না।তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হবার ক্ষেত্রে বিএনপিরও দায় রয়েছে। বিচারপতি কেএম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে বিচারপতিদের বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়েছিল।এই অনৈতিক কর্মের ধারাবাহিকতায় 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার' ব্যবস্থাটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে অবশেষ তা বাতিল হয়।

(৩) 'বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।'
   
   নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটি দলের আপত্তি থাকতেই পারে।বিএনপির এই দাবির রাজনৈতিক যৌক্তিকতা আছে বটে।তবে এবারের নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিকভাবেই প্রশংসিত হয়েছিল।কমিশন গঠনের জন্য একজন বিচারকের নেতৃত্বে 'সার্চ কমিটি' গঠন করা হয়েছিল যারা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল,সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে কমিশন গঠন করেন।রাজনীতির মাঠে সরব বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা.জাফরুল্লাহও সার্চ কমিটির সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন এবং বর্তমান সিইসির নিয়োগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন।
    
  ইভিএম নিয়ে বিএনপি বরাবরই নেতিবাচক ছিল  কারচুপি বা ফলাফল পরিবর্তনের সুযোগ আছে এই যুক্তিতে।এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী দলটিকে আহবান করেছিলেন বিশেষজ্ঞ দ্বারা তার প্রমান দেখাতে।তাহলে সেটি বাতিল করা হবে।কিন্তু বিএনপি তা করেনি।ফলে বিএনপি নৈতিকভাবে এই দাবিকে জোরালো করতে পারেনি।এছাড়া পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেই এখন ইভিএম এ ভোট হয়,যা সর্বোচ্চ নির্ভুল ও দ্রুত গণনা করা যায় এবং সময় বাঁচায়।  সমালোচকরা বলেন, প্রযুক্তি যখন বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যেটি পৃথিবীর উন্নত গনতান্ত্রিক দেশগুলোও নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছে  তখন সেটির একতরফা বিরোধিতা একপ্রকার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। তাই বিএনপির উচিত ইভিএম প্রযুক্তির বিরোধিতা না করে তার ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দেয়া, যাতে তা সংশোধন করা যায়।
     
  স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের যে দাবি সেটি বিবেচনা করা যেতেই পারে।তবে সেক্ষেত্রে নিজেদের দলীয় প্রার্থী দেয়া কি বন্ধ করবেন রাজনৈতিক দলগুলো?

(৪) খালেদা জিয়াসহ সকল বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক কারাবন্দিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া  সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে  কোন ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা,নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার দাবি জানানো হয়েছে।
   
  খালেদা জিয়াসহ নেতৃবৃন্দের সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বলতে হয়, বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত।স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেগম জিয়াকে সর্বোচ্চ আদালত  কতৃক যে সাজা প্রদান করা হয়েছে,আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবীকারী কোন দলের পক্ষে সেটি বাতিলের দাবি সমীচীন নয়।আর ঢালাওভাবে সকলের সাজা বাতিলের দাবীও কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ।এছাড়া এক্ষেত্রে সরকারের এখতিয়ার কতটুকু সেটি ভাবতে হবে।

   অন্যদিকে আলেম ও সাংবাদিক সমাজকে ভুক্তভোগী হিসেবে চিহ্নিত করে এই দাবির  অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা অনভিপ্রেত।কেননা কোন আলেম বা সাংবাদিক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে মামলা ও সাজাপ্রাপ্ত হবার নজির নেই,যদি না তিনি প্রচলিত আইন লঙ্ঘন বা অপরাধ না করে থাকেন।তবে  যদি কেউ মিথ্যা মামলার শিকার হয় তা হলে অবশ্যই এর বিহিত হওয়া দরকার। মিথ্যা বা প্রতিহিংসার মামলায় কোন নাগরিককে হয়রানি করার এখতিয়ার সরকারেরও নেই।

 এছাড়া 'গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সরকার বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না'-এটি অবশ্যই যুক্তিযুক্ত দাবি,যদি জনজীবন বিপর্যস্ত ও নিরাপত্তা হুমকিতে না পড়ে।তবে এক্ষেত্রে বিএনপির তেমন অভিযোগ থাকার কথা নয়, কেননা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের ছোট-বড় সকল কর্মসূচিসহ এযাবৎ সকল    আন্দোলন-কর্মসূচিই  বিএনপি নির্বিঘ্নে পালন করতে পেরেছে,যা অতীতে আওয়ামীলীগও পারেনি।

 (৫)ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।
  
  বিএনপির এই দাবিটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলা চলে, তবে বলা বাহুল্য, বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও তা বাতিল করবে না। কারণ এর আগে বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় ছিলো কিন্তু তারা ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করে নি। ভবিষ্যতেও বাতিল করবে বলে মনে হয় না। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সৌজন্যতা বিএনপি দেখাবে তাও ভাবার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আমলে 'সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন আইন' করা হয় এবং এ আইনে নির্যাতন চালানো হয় বিরোধীদের ওপর। সন্ত্রাস দমন আইন বাতিলের জন্য অনেক দাবি জানানো হয়েছিল কিন্তু তা বাতিল করেনি তারা।বরং এটি কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল।

  প্রসঙ্গত বলা যায়, বিশ্বের অনেক দেশেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুরক্ষায় এমন 'বিশেষ ক্ষমতা' আইন প্ৰচলিত রয়েছে।তবে তার প্রয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।তাই এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

 (৬) বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ জনসেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির  সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়েছে বিএনপি।
 
  দলটির এ দাবি যৌক্তিক ও জনদাবি। এর সঙ্গে একমত হবেন সকলেই। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এটি বাতিল করবে না কোন সরকারই।কারণ এর সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনায় সরকারের আর্থিক বিষয় জড়িত এবং বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, সহজলভ্যতা ও মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ও জড়িত, যা কোন সরকারই এড়িয়ে যেতে পারেনা।

(৭) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি করা হয়েছে।
  
  বিএনপির এই দাবির সঙ্গেও সকলেই একমত  এবং এটিও জনদাবি বটে।বাজারে কোন জবাবদিহিতা না থাকলে 
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মাত্রাতিরিক্ত দাম জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তোলে।সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট।কিন্তু এই ধরনের সিন্ডিকেট নতুন নয়।সব সরকারের আমলেই সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। বিএনপি আমলেও সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে।দ্রব্যমূল্য বেড়েছে।কাজেই বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সিন্ডিকেট থাকবে না, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবেনা এমন নিশ্চয়তা কি বিএনপি দিতে পারবে?

(৮)বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন এবং দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

  এটাও নিশ্চিত ভাবেই জনদাবি।বহু বছর ধরেই দেশের মানুষ এ দাবি জানিয়ে আসছে। এরশাদের পতনের পর থেকে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, শেয়ার বাজার লুট হয়েছে তা তদন্তের জন্য কমিশন গঠন হতেই পারে। তবে সেটি শুধু আওয়ামী লীগ  আমলেই হয়েছে সেটা ভাবার কোন কারণ নেই। বিএনপি আমলেও একই অপরাধ ঘটেছে। কাজেই শুধু আওয়ামী লীগ আমলে সংগঠিত অপরাধের বিচার চাওয়া সঙ্গত নয়।বিএনপি- জামায়াত আমলে সংগঠিত অপরাধের বিচারও হতে হবে।প্রসঙ্গত বলা যায়,অতীতে বিএনপি দুদককে কার্যকর করেনি এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েও ন্যায়পাল নিয়োগ দেয়নি।

(৯) গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সকল নাগরিকদের উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা ও শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, উপসানালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়েছে।

  এটাও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বটে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এই দাবি শোভা পায় না। কারণ গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা বিএনপি আমলে কোন অংশে কম হয় নি।কিন্তু সেটা তৎকালীন মিডিয়ার অপ্রতুলতা, নিষ্ক্রিয়তা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে না আসায় তেমন আলোচণায় আসেনি।এমনকি জিয়ার শাসনামলে সেনা সদস্য গুম এবং প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে সেনা হত্যার ঘটনাও সবাই জানেন।অতি সম্প্রতি গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে বিষয়টির আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি সম্বলিত স্বারকলিপি পেশ করতে গেলে তিনি বিব্রত হন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

  অন্যদিকে ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের ওপর নির্যাতন এখন কমেছে বলা যায়, বিএনপি আমলে বরং বেশি হয়েছিল।কিন্তু কোন ঘটনারই বিচার হয় নি।সরকারও বিচার করার উদ্যোগ নেয়নি।তবে সামগ্রিকভাবে দাবিটি সব সরকারের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন।

(১০) সর্বশেষ দফায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করতে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

   এসব দাবির পেছনে যুক্তি ও জনসমর্থন থাকলেও বাস্তবে কার্যকর হয় না।সব সরকারের আমলেই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং থাকেও।এমনকি বিচারবিভাগও সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে,অতীতেও ছিল, যা মোটেও কাম্য নয়।তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বর্তমানে যেকোনও সময়ের চাইতে অনেক বেশি জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে।ফলে ছাড় পাচ্ছেননা শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও যা অতীতে তেমন একটা ঘটেনি।

  উপরোক্ত আলোচনা থেকে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা পর্যালোচনা করে এটা বলা যায়, এসব দাবির কোনটাই নতুন কিছু নয়।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন "শুরু হওয়া বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে জনগণের অভ্যুত্থানের প্রকাশ ঘটবে। এই অভ্যূত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা অনির্বাচিত, স্বৈরাচারী, গণতন্ত্রহরণকারী লুটেরা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো।" ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে চাঙ্গা ভাব ও আশার সঞ্চার হয়েছিল। অথচ দলটিকে  ধাপে ধাপে কর্মসূচি পালন এবং সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সমাবেশে চমক ও নতুনত্ব বা আশান্বিত করার মতো কোন ঘোষণা ছাড়াই দীর্ঘদিনের পুরনো দাবিগুলো পেশ করতে হলো,যা নতুন বোতলে পুরনো মদের মতো।ফলে আশাহত হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।এটি বিএনপি নেতৃবৃন্দও বোঝেন নিশ্চই।তবু কেন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে  তৃণমূল-কর্মীদের ঢাকায় একত্রিত করে অবশেষ নতুন বোতলে পুরোনো মদ পান করিয়ে বাড়ি ফেরাতে হলো? কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অতিকথন থেকে বিরত থাকা এবং  চূড়ান্ত কিছু  বলার আগে সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতা যাচাই করে দেখা।নইলে জনসম্পৃক্ততা দূরে থাক নিজ দলের নেতা-কর্মীদের আস্থার সংকটও তৈরি হবে।

লেখক:সৈয়দ আহমেদ(সাংবাদিক)

Share This Article