তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা : প্রয়োজন হবে না ভারতের সাথে পানি চুক্তি
হোয়াংহো নদীকে এক সময় বলা হতো চীনের দুঃখ। প্রতিবছর ওই নদীর পানি ভাসিয়ে দিত শত শত মাইল জনপদ। আবার শুষ্ক মৌসুমেও ছিল পানির জন্য হাহাকার। সেই সর্বনাশা নদীশাসন করায় (পরিকল্পিত ড্রেজিং) চীনের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। হোয়াংহো এখন হয়ে গেছে চীনের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে চীন সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। সেই সময় তিনি হোয়াংহো নদী নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের তিস্তাকে আশীর্বাদে রূপ দেয়া যায় কি না তার প্রস্তাব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার তিস্তা নদীর ওপর সমীক্ষা চালায়।
সম্প্রতি সেই সমীক্ষা শেষে তিস্তা পাড়ে প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব আসে। এরই অংশ হিসেবে হোয়াংহোর মতোই চীন তিস্তা নদীতে ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘুচানোর মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যেখানে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় তিস্তা নদী ড্রেজিং করে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দু’পাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার করা হবে। এতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে।
অন্যদিকে, খননের ফলে নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত পানি দেয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না। বন্যায় উছলে ভাসাবে না জনপদ। সারা বছর নৌ-চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় তিস্তা নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাঁধের দুই পাশে থাকবে সমুদ্র সৈকতের মতো মেরিন ড্রাইভ। নদী পাড়ের দুই ধারে গড়ে তোলা হবে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন নগরী।
নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভারতের সাথে তিস্তার পানি চুক্তির প্রয়োজন পড়বে না। তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। এতে করে উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ নেবে। পাল্টে যাবে এসব জেলার মানুষের জনজীবন। কর্মসংস্থান হবে লাখো মানুষের।