ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরেছে প্রবাসী আয় ও পোশাক শিল্পে!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:১৯, শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪, ২ চৈত্র ১৪৩০
  • ইউনুস উদ্ভাবিত ক্ষুদ্র ঋণ থিওরি সুন্দর, তবে বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই 
  • নির্ভুল বিশ্লেষণ বলছে, ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা শূন্য
  • ক্ষুদ্রঋণ আসলে ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য কমায় না, বরং আরও বাড়ায় 
  • ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার অবস্থার আরো অবনতি ঘটে
  • দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরেছে প্রবাসী আয় ও পোশাক শিল্পে

দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ অবদান রাখছে বলে দাবি করছেন ইউনুস ঘনিষ্ঠরা। তবে এই দাবি মানতে নারাজ অর্থনৈতিক ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ক্ষুদ্র ঋণ নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরেছে প্রবাসী আয় ও পোশাক শিল্পে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির মানদণ্ড রিজার্ভ। আর রিজার্ভ সমৃদ্ধ হয় বৈদেশিক মুদ্রায়, যা আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। রিজার্ভ কখনো ক্ষুদ্র ঋণে পুষ্ট হয় না। ড. ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প একটি আইওয়াশ ও লোক দেখানো কর্মসূচি বৈ কিছু নয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের অজুহাতে বৈদেশিক অনুদান হাতিয়ে নিয়ে ইউনুস গংদের উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠি রয়ে গেছে ঋণের তলেই। তাই তো এতো বছর পরেও ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বিষয়টি ড. ইউনুস গর্বের সাথে বলেন, কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ড ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য ফিরলে এতো বছর পরও কি করে কোটি লোককে ঋণের বোঝা টানতে হয়?

অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস ও কর্মরত ১ কোটি ৫৫ লাখ প্রবাসী অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ‘সেফটি বাল্ব’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তাদের কারণে প্রতি বছর ব্যাংকিং চ্যানেল ও হুন্ডির মাধ্যমে ৪৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে ঢুকছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের চমকপ্রদ উল্লম্ফনও ঘটাচ্ছে রেমিট্যান্স। গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে বিপুল গতিশীলতা সৃষ্টি করেছে এটি। 

৪৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স-প্রবাহ অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসন হচ্ছে, ঘর-বাড়ি পাকা হচ্ছে, ছেলে-মেয়েরা ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ছে, ভালো স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিং মল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। এসবের ফলে গ্রামীণ ৫ কোটি মানুষ এখন মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে পোশাক শিল্পের দ্রুত প্রসারও দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে তুলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে যেখানে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৭৫ কোটি ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে।  

পোশাক খাতে প্রায় ৩০ লাখ নারীর কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বড়সড় সামাজিক বিপ্লবের সূচনা করেছে। দেশের নারীদের প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ির বাইরে কর্মরত, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ হার। কর্মসংস্থান হওয়ায় গৃহকর্মীর মতো অমর্যাদাকর পেশায় কাজ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছেন নারী। স্বামী-স্ত্রীর আয়ে সংসার ভালো চলছে।

দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও কৃতিত্বের প্রধান দাবিদার রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস। তবে প্রফেসর ইউনূস উদ্ভাবিত ক্ষুদ্র ঋণও এই দাবিদার বলে মনে করেন ইউনুস অনুসারিরা। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে যতটা সুন্দর এই থিওরি, বাস্তবে তার এক ভাগও সঠিকভাবে কার্যকর হয় না।

সবচেয়ে নির্ভুল বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের গড় ভূমিকা শূন্য। সত্যিকার অর্থে যেটা দেখা যায় তা হচ্ছে, ক্ষুদ্রঋণ আসলে ঋণগ্রহীতার দারিদ্র্য কমায় না, বরং আরও বাড়ায়। ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়, ঋণগ্রহীতার অবস্থা উন্নতির পরিবর্তে বরং আরো অবনতি ঘটে। ঋণের বোঝা দিনকে দিন বাড়তে থাকে, অথচ তা পরিশোধের সম্ভাবনা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে।

এর মূল কারণ আসলে খুব সহজ।

প্রথমত, ঋণগ্রহীতারা বেশিরভাগই হয় নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন। তারা এই ঋণের অর্থ অনেক সময়ই মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করে। ফলে ঐ অর্থ থেকে আসলে অর্থসৃষ্টি হয় না এবং তারা বরং ঋণের চাপে পিষ্ট হতে থাকে।

দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এসব উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার থাকে ওই পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীই। সেখানে যা ঘটে তা হলো, হয় ওই পণ্যের চাহিদা অনেক কম, অথবা তার মত বিকল্প পণ্য ইতোমধ্যেই বাজারে আছে। তখন অনেক সময় উদ্যোগ গ্রহণ করেও টিকে থাকা সম্ভব হয় না।

ইউনুসের তৎকালীন গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল ফুলেফেঁপে উঠলেও ঋণ গ্রহীতাদের ভাগ্যের সত্যিকার অর্থে কতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্র নারীদের দারিদ্র্যমুক্ত করে ক্ষমতায়িত করছে, না তাদের ঋণজালে বেঁধে শৃঙ্খলিত করছে– সে প্রশ্নের সহজ জবাব নেই। 

কেন না ড. ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে দেশে দেশে এত হৈ চৈ, অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা এই ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কতটা উপকৃত হয়েছেন, তাদের অবস্থা ও অবস্থানের সত্যিকার অর্থে কী পরিবর্তন হয়েছে তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা আজ পর্যন্ত হয়েছে কি? ড. ইউনূস উদ্যোগী হয়ে কেন এই কাজটি করেন নি? গ্রামীণ ব্যাংকের যে লাখ লাখ সুবিধাভোগীর কথা বলা হয় তাদের ঋণ সুবিধা নেওয়ার আগে-পরের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কি পাওয়া যায়? প্রশ্ন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ইউনুসের হাত!

ঈদযাত্রায় স্বস্তি আনতে ১৫ বছরে সরকারের যত উদ্যোগ

বৃদ্ধির পথে রিজার্ভ: বাড়ল ৫১ কোটি ডলার!

গ্রামীণ ফোনের ইনকামিং কল চার্জ বন্ধ করলেও বিদেশী বন্ধুদের দ্বারা সরকারকে থ্রেট দিয়েছিলেন ইউনুস!

পোশাকের নতুন বাজার: আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে ১০ গুণ বেড়েছে রপ্তানি!

পাহাড়ে ‘কেএনএফ’ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আসলে কারা?

বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তায় শঙ্কা: বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়

প্রধানমন্ত্রীর মুখে গ্রামীন ফোন নিয়ে ধোঁকাবাজির গল্প!

কেমন আছে ইউনুসবিহীন গ্রামীন ব্যাংক?

ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণের ‘সাপ্তাহিক কিস্তি’ চক্র যখন ফাঁদ

ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের স্বারক পুরস্কারকে কেন ইউনেস্কোর বলে চালালেন ইউনুস?

গ্রেফতার হবার আগেই যেভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধু