মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে ইচ্ছেকৃত ভুল নাকি অপরিপক্কতা?
বাংলাদেশের মানবধিকার পরিস্থিতি সম্পর্ক না জেনেই ভুল তথ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে যথেষ্ট অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে দেশটি। তবে মনগড়া এসব অভিযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বাংলাদেশের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, যেন আর কখনোই এ ধরনের কাজ না হয়। দেশটি কূটনৈতিকভাবে এর জবাব দিতে বাধ্য।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বরাবরের মতোই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছে দেশটি। আনা হয়েছে মিথ্যা অভিযোগ। যদিও এ প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে উঠেছে নানান প্রশ্ন। তবে একে মনগড়া ও 'ত্রুটিপূর্ণ' বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন এখনও কমেনি। এছাড়া রাজনৈতিক বন্দি, মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে হস্তক্ষেপ, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। ২০২৩ সালে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া এমন কিছুই ঘটেনি, যা দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি সংস্থার রিপোর্টেও উঠে এসেছে।
মার্কিন এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় গুরুতর সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়। অথচ নির্বাচনের আগে-পরে দেশজুড়ে নজিরবিহীন নৈরাজ্য বা সহিংসতার দায়ে হওয়া বিভিন্ন মামলায় সরকারবিরোধীদের অনেকেই জামিন পেয়েছেন। এমনকি পাঁচ শতাধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতার একসঙ্গে মুক্তি মিলেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও বিচার বিভাগের প্রশংসা করেছেন।
প্রতিবেদনে সভা-সমাবেশে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে ২০২৩ সালে দুইশ’রও বেশি কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ অন্যান্য দল। নির্ভিগ্নে কর্মসূচি পালনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই এমপি- মন্ত্রীদের সমালোচনায় মুখর থাকেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতা থেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনেও নির্ভয়ে বাধাহীন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ভোটাররা। নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ হওয়ায় প্রশংসাও করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এত এত পরিবর্তনের পর এমন ঢালাও অভিযোগে মানবাধিকার প্রতিবেদনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। এর পেছনে কোনো দূরভিসন্ধি মতলব রয়েছে বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সমালোচকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্ক না জেনেই ভুল তথ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে যথেষ্ট অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে দেশটি। তবে মনগড়া এসব অভিযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বাংলাদেশের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, যেন আর কখনোই এ ধরনের কাজ না হয়। দেশটি কূটনৈতিকভাবে এর জবাব দিতে বাধ্য বলেও মনে করছেন তারা।