জঙ্গি মামলায় খালাস ৯১ ভাগ আসামি

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৪৯, রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩, ১৮ আষাঢ় ১৪৩০

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে গত ২২ জুন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর উলাই’য়াহ বাংলাদেশের সক্রিয় সদস্য মো. ইফতেখারুল ইসলাম ওরফে ইফতি এক জঙ্গি মামলায় খালাস পেয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, শুধু এজাহারকারীর (এসআই মো. রবিউল হকের) সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কোনোভাবেই প্রমাণ হয় না, আসামি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯ ধারায় অপরাধ করেছে। এর আগে একই ট্রাইব্যুনাল থেকে গত ২১ জুনও একটি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে একমাত্র আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য বলে অভিযুক্ত মো. নাফিজ সালাম ওরফে উদয়কে খালাস দেওয়া হয়। হিযবুত তাহরীরের ব্যানার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সভা-সমাবেশের চেষ্টাসহ লিফলেট বিতরণকালে ঘটনাস্থল থেকে এই আসামি ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়েছিল।

শুধু এই মামলা দুটিই নয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একই ধরনের ৭৪টি মামলার রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ৯১ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে গেছেন। সাজা পেয়েছেন ৯ শতাংশেরও কম আসামি। মামলার হিসাবে শতকরা ৮২ ভাগের বেশি মামলার আসামি খালাস পেয়েছেন। সাজা পেয়েছেন ১৭ ভাগের সামান্য বেশি মামলায়। অভিযুক্তরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, হিযবুত তাহরীর উলাই’য়াহ বাংলাদেশসহ আরও কিছু জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে এসব মামলায় উল্লেখ ছিল। এসব রায় গত ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে ঢাকার এবং গত বছরের মাঝামাঝিতে রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। ৭৪টি মামলার বেশিরভাগ রায়ে আসামি খালাসের প্রায় একই ধরনের কারণ উল্লেখ রয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭৪টি মামলায় মোট আসামি ছিলেন ২৩৪ জন। এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন ২১৩ আসামি। মাত্র ২১ আসামির সাজা হয়েছে। মামলা হিসেবে বিবেচনা করলে দেখা যায়, মাত্র ১৩টি মামলায় সাজা হয়েছে। বাকি ৬১টি মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ৭৪টি রায়ের মধ্যে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ৬৭টি। এর মধ্যে ৫৪টি মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছেন। এতে খালাসপ্রাপ্ত আসামি ১৪৬ জন। বাকি ১৩টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২১ জন। এ ছাড়া রাজশাহীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ৭টি। এতে আসামি ৬৭ জন। তারা সবাই খালাস পেয়েছেন।

এত বিপুলসংখ্যক আসামি খালাসের পেছনে রাষ্ট্রপক্ষের (প্রসিকিউশন পক্ষের) ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে এসব রায়ে। বেশিরভাগ মামলা বছরের পর বছর ধরে বিচার চললেও সাক্ষী হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। যাদের হাজির করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই মামলার এজাহারকারী (বাদী) ও গ্রেপ্তারকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আবার সাক্ষী হাজির হলেও মামলার এজাহারে উল্লেখিত বক্তব্যের সঙ্গে সাক্ষীর দেওয়া বক্তব্যের কোনো মিল নেই। অনেক মামলার আলামত সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ছিল না প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টও। নিরপেক্ষ সাক্ষী না থাকায় এবং সাক্ষ্য প্রদানকারী অধিকাংশ সাক্ষীর বক্তব্যে অসংগতি থাকায় ট্রাইব্যুনালের বিচারক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ফলে আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির খালাস পাওয়ার এসব কারণের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, অনেক সময় নিষিদ্ধ সংগঠনের বই হিসেবে জব্দ করা হচ্ছে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে বইগুলো নিষিদ্ধ না। আবার আলামত জব্দ করা হলেও তার রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট থাকছে না। এ ছাড়া নিরপেক্ষ (পাবলিক) সাক্ষীরা অনেক সময় অস্থায়ী ঠিকানা দেন। সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায় না। সাক্ষীকে চিহ্নিত করার কোনো উপায় থাকে না। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক সময় সাক্ষীকে হাজির করার চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হবে। সাক্ষীর মোবাইল নম্বর থাকতে হবে। আলামত সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে এবং রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট থাকতে হবে। বইগুলো জব্দ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো নিষিদ্ধ বই কি না। তাহলেই খালাসের হার কমে আসবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ৭টি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। জঙ্গি কর্মকাণ্ড ও জঙ্গি হিসেবে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে এসব বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তথ্যানুযায়ী, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই ৭টি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ৬৭২টি। এর মধ্যে ঢাকার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা সবচেয়ে বেশি (৪৪৮ টি)। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ এই তিন মাসে ঢাকার ট্রাইব্যুনালে দায়ের হয়েছে ৩৪টি এবং নিষ্পত্তি ৩৬টি মামলা। এরপর চট্টগ্রামের ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ১২০টি, রাজশাহীতে ৪১টি, খুলনায় ১৩টি, বরিশালে ১০টি, সিলেটে ২৯টি এবং রংপুরে বিচারাধীন ১১টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের বাইরেও প্রতিটি জেলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা কিছু মামলা বিচারাধীন। দুটি ট্রাইব্যুনালের রায় বিশ্লেষণ করা হলেও অন্যান্য ট্রাইব্যুনালের রায়গুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

জানা যায়, সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথম রায়টি দেওয়া হয় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। রায়ে হিজবুত তাওহীদ সন্দেহে আটক দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর সিলেটের আতিয়া মহলে আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় করা মামলার তিন আসামিকে গত ৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল খালাস দেন। ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ রাত থেকে ওই জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। অভিযানে র্যাব, পুলিশ, পুলিশের বিশেষ ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি), সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষে ভবনের ভেতর থেকে এক নারীসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হামলায় র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, দুই পুলিশ সদস্যসহ সাতজন নিহত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পিবিআই। তিনজনকে অভিযুক্ত করা হলেও মামলার যুক্তিতর্কে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস প্রদান করা হয়। একই ভাবে জঙ্গি মামলাগুলোর বেশিরভাগ আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার তদন্তে কিছু দুর্বলতা থাকে। আতিয়া মহলের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত বিশ্লেষণ করে আমরা এটা দেখেছি। এসব ঘটনায় নিরপেক্ষ সাক্ষী পাওয়া দুষ্কর। সেজন্য আমরা তদন্তকারী ও তদারকি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ সাক্ষী ছাড়াই অন্যান্য কাগজপত্র ও আলামত দিয়ে কীভাবে মামলা প্রমাণ করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে।’ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু কালবেলাকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সাক্ষী, মামলার আলামত সঠিকভাবে উপস্থাপন ও সাক্ষী হাজির করতে না পারলে বিচারক তো খালাসই দেবেন। প্রসিকউশন ও তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও ব্যর্থতা রয়েছে। অভিযুক্ত জঙ্গীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হলে প্রসিকিউশন ও তদন্ত কর্মকর্তাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

‘খালাসের যেসব কারণ রয়েছে রায়ে’

যাত্রাবাড়ী থানায় করা একটি মামলায় গত ১৯ জুন রায় দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায় অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই সায়েদাবাদ এলাকায় সায়েদাবাদী হুজুরের বাড়ির প্রবেশ গেটের সামনের রাস্তার ওপর থেকে শামীম মাহফুজ সুমনকে একটি ল্যাপটপ এবং ৫টি লাল স্কচটেপ মোড়ানো ককটেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদুর রহমানকে ৫টি ককটেল; বোমা তৈরির ম্যানুয়েল এবং ইসমাইলকে ৪টি উগ্রবাদী বইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। রায়ে এই চারজনই খালাস পেয়েছেন।

রায়ে বলা হয়েছে, ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে পরীক্ষা করে প্রসিকিউশন। দীর্ঘ ৬ বছরের বেশি সময় ধরে প্রসিকিউশন শুধু এজাহারকারী, ৪ জন অ্যারেস্টিং পার্টির (গ্রেপ্তারকারী দলের) সদস্য, একজন তথ্য যাচাইকারী কর্মকর্তা এবং একজন এফআইআর প্রস্তুতকারী কর্মকর্তাকে পরীক্ষা করেছে। এ মামলায় জব্দ তালিকার পাবলিক সাক্ষীসহ অ্যারেস্টিং পার্টির অন্যান্য সদস্যকে পরীক্ষা করা হয়নি। বিচারকালে প্রসিকিউশন জব্দকৃত বোমা ও ককটেলের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেনি। জব্দকৃত বইগুলো সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ বই নয় এবং নিষিদ্ধ সংগঠনেরও বই নয়। শুধু এজাহারকারী এবং দুজন অ্যারেস্টিং পার্টির সদস্যের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনোভাবেই বলা যায় না যে, তারা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)/১০/১১ ধারার অপরাধ করেছে।

গত ১৮ জুন দেওয়া অন্য একটি রায় বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসামি মো. সুহাইল আহম্মেদ, মো. মুফতি সাইফুল ইসলাম এবং মো. আমীর হোসেন ওরফে সুলতানকে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর রাজধানীর আমিন বাজারের তুরাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইফুলের কাছ থেকে ২টি মোবাইল, ১টি ল্যাপটপ, ১টি চাপাতি, নিষিদ্ধ ঘোষিত ৭টি বই এবং জুনায়েদের কাছ থেকে ৪টি বই উদ্ধার করে। এ মামলায় মোট ২৬ জন সাক্ষী রাখা হয় অভিযোগপত্রে। বিচার চলাকালে প্রসিকিউশন মাত্র দুজন সাক্ষী হাজির করে। পরীক্ষিত সাক্ষীরা হলেন (পি.ডাব্লিউ-১) পুলিশ পরিদর্শক মো. গোলাম ইয়াজদানী এবং পিডব্লিউ-২ এএসআই মো. আরিফ হোসেন হলেন অ্যারেস্টিং পার্টির সদস্য। রায়ে বলা হয়েছে, এজাহারকারী এবং জব্দ তালিকার সাক্ষীদের পরীক্ষা না করায়, জব্দকৃত বইগুলো সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ না হওয়ায় কোনোভাবেই বলা যায় না যে, আসামিরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯(৩)/১২ ধারার অপরাধ করেছে।

রাজশাহীর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ৩ অক্টোবর একটি রায় প্রদান করেন। ওই রায় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পুঠিয়া থানার বেলপুকুরিয়ার ডাউল মিল থেকে মো. শরিফুল ইসলামের কোমরে গোঁজা অবস্থায় ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন; মো. জাকারিয়ার দেহ তল্লাশি করে কোমরে গোঁজা অবস্থায় ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি মোবাইল, নগদ টাকা এবং আতাউর রহমানের দেহ তল্লাশি করে কোমরে গোঁজা অবস্থায় ২টি জিহাদি বই ও ১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া সেখানে টিনশেডের বারান্দায় থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগ তল্লাশি করে গানপাউডার ৫০০ গ্রাম, ৫০ গ্রাম চুন, ৫০ গ্রাম সোডা, ২টি ব্যাটারি, ১টি সুপার গ্লু আঠা, রাংতা, ইলেকট্রিক তার, সুইচ, সার্কিট, ইনডিকেটর লাইট ৫টি, ১টি স্কচটেপ, সাদা পলিথিনের মধ্যে রাখা কাচের বোতলের ভাঙা অংশ ও মার্বেল, এবং ধৃত আসামিদের দেখানো মতে ওই টিনশেডের বারান্দা থেকে ৫০ গজ পশ্চিমে আমগাছের নিচ হতে ৪টি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার ও জব্দ করেন। বোমা ডিসপোজাল ইউনিট র্যাব-৫-এর সহযোগিতায় অবিস্ফোরিত ৪টি বোমা ঘটনাস্থলে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিচার চলাকালে অভিযোগপত্রে বর্ণিত ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

রায়ে বলা হয়েছে, মামলার এজাহার বর্ণিত ঘটনা বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত সাক্ষীদের কেউই এজাহার বা পুলিশ প্রতিবেদন সমর্থন করে কোনো সাক্ষ্য প্রদান করেননি। আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির সদস্য—এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা দালিলিক সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি। অস্ত্রের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা হয়নি, বোমা ধ্বংস করা হয় কিন্তু বোমার কোনো অংশ আলামত হিসেবে রাখা হয়নি। মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট নেই। আসামিরা কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনকে সমর্থন করে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন কি না এ সংক্রান্ত কোনো কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। এর সমর্থনে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণও আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। সব সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনায় আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দায় থেকে তারা খালাস পাওয়ার যোগ্য।

বিষয়ঃ অভিযান

Share This Article