সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, আদমদীঘি ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন

প্রার্থী হলেন এমপির বাবা-ছেলে-ভাই-শ্যালক, বললেন ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমাদের জন্য নয়’

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৬, রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ৮ বৈশাখ ১৪৩০

উপজেলা নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অমান্য করে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল ও ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন।

তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ এমপি (সাহাদারা মান্নান) আমাদের পক্ষে কাজ করছেন না। আমাদের ভোট দিতে কাউকে বাধ্য করছেন না। কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। কাজেই আমরা নির্বাচন করলে কোনও ধরনের সমস্যা নেই। 

আসন্ন চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সে অনুযায়ী, নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়টি জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সজল অন্যতম। তিনি দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে গত শুক্রবার দিনভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা ও উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন।

এদিন সকালে তিনি উপজেলার হাটফুলবাড়ি ইউনিয়নের মাঝবাড়ী গ্রামে গণসংযোগ করেন। এই গ্রামে নির্বাচনি উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সজল এই ইউনিয়নের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় ও সেখানে তার জন্য ভোট চান। বিকালে ইউনিয়নের হরিণাগাড়ি গ্রামে নির্বাচনি উঠান বৈঠক করেন।

এ ব্যাপারে জানতে সাখাওয়াত হোসেন সজলকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। এমনকি তার মা এমপি সাহাদারা মান্নানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সজলের মামা সোনাতলা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সজল আমাকে জানিয়েছে, সে ভোট করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানি। সজলকেও জানিয়েছি। তখন বলেছে, প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন এমপি-মন্ত্রীর ছেলেদের সংগ্রাম করে দলে থাকতে হবে। আমি আমার মাকে (এমপি) ব্যবহার করে নয়; দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে ভোট করছি।’

বগুড়া উপজেলা.২jpg

অপরদিকে, সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এমপি সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান ও সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনসহ চার জন প্রার্থী হয়েছেন।

শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা ও নির্বাচনি উঠান বৈঠক করেছেন তিনি। এদিন দুপুরে পূর্ব তেকানী জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। এরপর পাকুল্লা ইউনিয়নের সুজাইতপুর বালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদব্যালয়ে নির্বাচনি সভা করেছেন। বিকালে একই ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে মোমিনের বাড়িতে উঠান বৈঠক করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে ভোট করার বিষয়ে জানতে চাইলে মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নাটোরের সিংড়া উপজেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত যারা নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও প্রভাব বিস্তার করছেন; তাদের এই নির্দেশ দিয়েছেন। এটি তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। অথচ দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনসহ কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। দলীয় প্রতীক কাউ দিচ্ছে না দল; নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে সবার জন্য। কাজেই আমাদের প্রার্থী হওয়াতে কোনও বাধা নেই।’

মিনহাদুজ্জামান লিটন আরও বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে আমার বোন (সাহাদারা মান্নান) এমপি হয়েছেন। বোন এমপি হওয়ার পর আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এই নির্বাচনে এমপি আমাকে ও তার ছেলেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা করছেন না। আমি নির্বাচন থেকে সরে গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। যা নির্বাচন কমিশনের পছন্দ নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।’

দ্বিতীয় ধাপে আদমদীঘি, দুপচাচিঁয়া ও কাহালু উপজেলায় ২১ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধন গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বগুড়া-৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মা মঞ্জুয়ারা বেগম বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য। সংসদ সদস্য নির্বাচনে সিরাজুল ইসলামকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছিল। এজন্য তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন। পরে আওয়ামী লীগ তাকে প্রার্থিতা না দেওয়ায় তার ছেলে জাপা প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি হন। উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে সিরাজুল ইসলাম আবারও আদমদীঘি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কোনও কাগজপত্র এখনও পাইনি। মনে হয় না, এই নির্দেশনা আমার জন্য। তবু দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

তৃতীয় ধাপে বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুর উপজেলায় আগামী ২৯ মে নির্বাচন হবে। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে আবারও সংসদ সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগের মিত্র জাপার জেলা শাখার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আবারও প্রার্থী হচ্ছেন জিন্নাহর শ্যালক ফিরোজ আহম্মেদ রিজু।

এ বিষয়ে ফিরোজ আহম্মেদ রিজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; আমার জন্য নয়। তাই আবারও প্রার্থী হয়েছি এবং প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

Share This Article