চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল

ক্যান্সারে ভুগছে ক্যান্সার চিকিৎসা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৩, শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ১৩ মাঘ ১৪৩০

কালবেলা: কোনো ব্যক্তি ক্যান্সার বা কর্কট রোগে আক্রান্ত মানে তার জীবনীশক্তি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে একই অবস্থা। এসব হাসপাতালও যেন ভুগছে ক্যান্সার রোগে। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটসহ দেশের ৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার চিকিৎসায় অতিপ্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপির যন্ত্রের ৫০ শতাংশই বিকল। হাসপাতালগুলোতে গিয়ে রোগীরা ঠিকমতো রেডিওথেরাপি না পেয়ে ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতালে। বেসরকারিতে একজন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা, যা সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ৮ থেকে ১০ গুণ। এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।

বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর অন্তত তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তাদের একটি বড় অংশ চিকিৎসার বাইরে থেকে যায়। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিৎসার আওতায় আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। সে সময় চিকিৎসা হয়ে পড়ে জটিল। আর বছরে এই রোগে ১ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।

একাধিক চিকিৎসক জানান, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে দেওয়া হয় ক্যান্সার চিকিৎসা। সাধারণত অস্ত্রোপচারের পর কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর দিতে হয় রেডিওথেরাপি। রোগীর অবস্থা ও ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করেন চিকিৎসকরা। একজন রোগীকে কয়টি রেডিওথেরাপি দেওয়া হবে তা নির্ভর করে রোগের অবস্থা অনুযায়ী। অন্তত ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অন্যান্য চিকিৎসার পর রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।


বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্যমতে, দেশে জাতীয় পর্যায়ে কোনো ক্যান্সার রেজিস্ট্রি নেই। বছরে সারা দেশে কতজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন বা মারা গেছেন এমন হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) তাদের সর্বশেষ হিসাবে জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে এখনো ক্যান্সারে আক্রান্ত ২ লাখ ৭১ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ক্যান্সার রোগীর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যান্সার রোগীর প্রায় ৮০ শতাংশের চিকিৎসার অংশ হিসেবে রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে স্তন, জরায়ু, কোলোরেক্টাল (পায়ুপথ ও বৃহদন্ত্র) ও ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য রেডিওথেরাপি অপরিহার্য। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) বলছে, প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে রেডিওথেরাপির যন্ত্রের প্রয়োজন শূন্য দশমিক ১৬টি। সে হিসাবে বাংলাদেশে রেডিওথেরাপি যন্ত্রের প্রয়োজন ১৭০টি। ২০৩০ সালে গিয়ে ২৪০টি যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে। বাংলাদেশে সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলজিস্টসের (বিএসআরও) তথ্যমতে, শুধু ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্র নয়, দেশে চিকিৎসকের সংখ্যাও অপ্রতুল। দেশে অনকোলজিস্টের সংখ্যা ২৮০ জনের মতো। দরকার কম করে হলেও দেড় হাজার।

একদিকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সারের রোগী, অন্যদিকে এর চিকিৎসাসেবাও অপ্রতুল। গরিব ও স্বল্প আয়ের রোগীদের একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। সেখানেও ক্যান্সার চিকিৎসার বেহাল দশা। ক্যান্সার চিকিৎসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রেডিওথেরাপির যন্ত্র নষ্ট অনেক হাসপাতালে। কোনো কোনো হাসপাতালে পুরোনো যন্ত্র দিয়ে কোনোমতে চলছে চিকিৎসা। কোনো হাসপাতালে একটিমাত্র যন্ত্র দিয়ে অসংখ্য রোগীকে থেরাপি দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালসহ ৯টি হাসপাতালের অর্ধেক রেডিওথেরাপি যন্ত্রই বিকল হয়ে আছে। বিকল যন্ত্রের মধ্যে মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে চারটি, ঢাকা মেডিকেলে দুটি এবং চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়া, খুলনা ও বরিশাল মেডিকেলে একটি করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা ১০টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে যেসব হাসপাতালে মোট ছয়টি রেডিওথেরাপি যন্ত্র সচল রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুটি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি।

খুলনায় বাক্সবন্দি, রংপুরে তালাবদ্ধ রেডিওথেরাপি যন্ত্র : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য একটি যন্ত্র দেওয়া হলেও সেটি একযুগ ধরে বাক্সবন্দি। এ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের সামনে ২৪ কোটি টাকার যন্ত্র (লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর) পড়ে আছে। জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য যন্ত্রটি কেনা হলেও অবকাঠামোগত সক্ষমতার অভাবে তা পাঠানো হয় খুলনায়। এরপর থেকে যন্ত্রটি আর খোলা হয়নি। এক দশকে যন্ত্রটি খোলার আগেই বিকল হয়ে গেছে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, যন্ত্রটি স্থাপনের জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, তা হাসপাতালে নেই। তা ছাড়া যন্ত্র চালানোর মতো দক্ষ জনবলও নেই।

হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অন্য বিভাগের ধার করা ৮ শয্যাসহ ১২ শয্যার রেডিওথেরাপি ও অনকোলজি নামে বিভাগ রয়েছে। এখন শুধু বহির্বিভাগে নতুন রোগী দেখা ও ফলোআপ কার্যক্রম চলছে। সেইসঙ্গে কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়ে থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কার্যত এই ইউনিটের কোনো সেবা নেই। প্রত্যেক রোগীকে নির্দিষ্ট কোম্পানির কেমোথেরাপির ওষুধের তালিকা দেওয়া হয় চিকিৎসকের রুম থেকেই। তালিকার নিচে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিকে ফোন করে বাড়তি দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা।

অন্যদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি যন্ত্রের রুম তালাবদ্ধ ৯ বছর ধরে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে অসংখ্যবার চিঠি দেওয়ার পরও তালা খুলছে না রেডিওথেরাপি যন্ত্রের রুমের। ৯ বছর ধরে যন্ত্রটি অচল থাকায় ঘরটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের থেরাপি চিকিৎসা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

উন্নত চিকিৎসার জন্য রমেক হাসপাতালে ২০০০ সালে স্থাপন করা হয় রেডিওথেরাপি কোবাল্ট-৬০ নামের একটি যন্ত্র। সেটি ২০০১ সালে চালু করা হয়। যন্ত্রটি ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সচল ছিল। এরপর বিকল হয়ে যায়।

হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের প্রধান ডা. জাহান আফরোজা খানম লাকি কালবেলাকে বলেন, আমার কাছে প্রতিদিনই বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী আসছেন। যাদের ৮০-৯০ ভাগ রোগীর রেডিওথেরাপি প্রয়োজন; কিন্তু এখানে মেশিন বন্ধ বা নষ্ট থাকায় সেই থেরাপি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রেফার্ড করা হচ্ছে সরকারি অন্যান্য হাসপাতালে।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে যেসব রোগী আসছে, তাদের সবাই গরিব। এই রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপি নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে এই থেরাপি নিতে ১২ থেকে ১৪ গুণ বেশি টাকার প্রয়োজন।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, আমি আসার বহু আগে থেকেই এই মেশিন নষ্ট। শুধু এটি-ই নয়, হাসপাতালের বহু মেশিন নষ্ট। যেগুলো মেরামত করলে ঠিক হবে, সেগুলো মেরামতের জন্য এবং যেটা একদম বিকল সেটা পরিবর্তনের জন্য পত্র দিয়েছি সংশ্লিষ্ট স্থানে। দেখা যাক কী সিদ্ধান্ত আসে।

বরিশাল, ময়মনসিংহ, বগুড়ায় বিকল রেডিওথেরাপি যন্ত্র: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আধুনিক সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার একমাত্র রেডিওথেরাপি যান্ত্রটি ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিকল। হাসপাতালে ২০০২ সালে ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা মূল্যের কোবাল্ট-৬০ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। ১৩ বছরে এই যন্ত্র দিয়ে প্রতিমাসে গড়ে ৩০০ ক্যান্সার রোগীকে ৯ হাজার বার রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর যন্ত্রটি অচল হয়ে যায়।

একই চিত্র ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের। ক্যান্সার বিভাগের একমাত্র কোবাল্ট-৬০ রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি প্রায় ৯ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে যন্ত্রটি সচল ছিলে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার বিভাগের জন্য নতুন ভবনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে আধুনিক প্রযুক্তির রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য লিনিয়ার এক্সেলেটর মেশিন বসানো হবে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রেডিওথেরাপি সেবা। হাসপাতালের একমাত্র লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্রটি বিকল থাকায় রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রেডিওথেরাপি সেবার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে গড়ে প্রতি মাসে ৭০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে আসেন। একমাত্র লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্রটি বিকল থাকায় রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

বগুড়া জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বজলুল করিম বাহার বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের শেষ ভরসা রেডিওথেরাপি। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর জীবন বিপন্ন করা চলবে না। রেডিওথেরাপির গুরুত্ব বুঝতে হবে।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানোর পর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এসে বিকল যন্ত্রাংশ শনাক্ত করেছেন। যন্ত্রাংশ কিনে মেরামত করতে সময় লাগবে। আশা করি শিগগিরই যন্ত্রটি মেরামত করা সম্ভব হবে। তবে মেরামত না হওয়া পর্যন্ত রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ থাকছে।

যন্ত্র ও জনবল সংকট সিলেট ওসমানী হাসপাতালে: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি রেডিওথেরাপি যন্ত্র চালু রয়েছে। দুটি মেশিনের কারণে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। রেডিওথেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ এস্তেফছার হোছাইন কালবেলাকে বলেন, মেশিন ও জনবল কম। এ কারণে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জনকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালটির পরিচালক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে অবকাঠামোর সংকট রয়েছে। নতুন ভবন করা হলে ক্যান্সার চিকিৎসা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।

রাজশাহীতে পুরোনো যন্ত্র দিয়ে কোনোমতে চলছে সেবা: রামেক হাসপাতালে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য পুরনো একটি কোবাল্ট রেডিওথেরাপি মেশিন সচল রয়েছে। নতুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত সক্ষমতা হারাচ্ছে রামেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগ।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, ক্যান্সার বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে নতুন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৫২৯ জন। নতুন ও পুরাতন মিলে গড়ে প্রতিদিন এখানে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী রেডিওথেরাপির জন্য আসেন। তবে হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সক্ষমতা প্রতিদিন মাত্র ৬০ জনের।

হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. অসীম কুমার ঘোষ কালবেলাকে বলেন, রাজশাহীতে প্রতিদিনই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি এখন আর কোন বয়স সীমায় নেই। শিশু থেকে সবার মাঝেই এখন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীতে বেশি শনাক্ত হচ্ছে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার। ১৫ শতাংশ রোগই ব্রেস্ট ক্যান্সারের। যেভাবে শনাক্ত হচ্ছে, আমাদের চিকিৎসার উপকরণ সেভাবে নেই। প্রতিদিনই আমাদের এখানে গড়ে ৬০ জনকে রেডিওথেরাপি দিতে পারি। চাহিদা থাকে তারও দ্বিগুণ বা তিনগুণ। পর্যায়ক্রমে আমাদের থেরাপি দিতে হয়।

একটিমাত্র যন্ত্র দিয়ে চলছে চমেকের কার্যক্রম: ক্যান্সারের রেডিওথেরাপি চিকিৎসায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি কোবাল্ট মেশিন সচল রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রোগীরা রেডিওথেরাপি নিতে পারেন। এছাড়াও ব্রোকি থেরাপিরও একটি মেশিন সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. শামীম আহসান।

পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক বললেন ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার: জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, দরিদ্র মানুষের সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হয়; কিন্তু সেখানে রেডিওথেরাপির ভয়াবহ অবস্থা। আগে এক-দেড় মাস স্বাভাবিক সময়েই অপেক্ষা করতে হতো; কিন্তু এখন অধিকাংশ মেশিন নষ্ট হওয়ায় ৬ থেকে ৭ মাস বা এক বছর পরেও অনেককে তারিখ দেওয়া হয়। দেখা যাবে তারা তখনো চিকিৎসা পান না। এত লম্বা সময় চিকিৎসা না পেলে সেই চিকিৎসা আর কোনো কাজেও আসে না। অনেকে তার আগেই চিকিৎসার বাইরে চলে যায়। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও হতাশাজনক।

তিনি আরও বলেন, যেখানে বিভিন্ন সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে, সেখানে মাত্র ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা দামের মেশিন একসঙ্গে ৬টা কিনলেও কোনো সমস্যা হতো না। এটা সম্ভব ছিল। যারা এসবের দায়িত্বে আছেন তাদের কারণেই এটা হচ্ছে না। এর জন্য কোনো জবাবদিহিতাও নেই।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান আমজাদ হোসেন শিমুল, বগুড়া ব্যুরোপ্রধান প্রদীপ মোহন্ত, ময়মনসিংহ ব্যুরোপ্রধান ওবায়দুল হক, রংপুর ব্যুরোপ্রধান মো. রফিকুল ইসলাম, বরিশাল ব্যুরোপ্রধান আরিফিন তুষার, সিলেট ব্যুরোপ্রধান লিয়াকত শাহ ফরিদি, চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক আসিফ পিনন ও খুলনা প্রতিনিধি বশির হোসেন)।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article