ভারী হচ্ছে রোহিঙ্গা বোঝা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫২, শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩, ১০ ভাদ্র ১৪৩০

জুলকার নাইন
ঢলের ছয় বছর, পরাশক্তিদের তৎপরতায় জটিল হচ্ছে প্রত্যাবাসন, তীব্র অর্থ সংকট

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। তাদের ফিরে যাওয়া নিয়ে দিন দিন জটিলতা বাড়ছে। এমনিতেই মিয়ানমারের টালবাহানা আর রোহিঙ্গাদের শর্তের গ্যাঁড়াকলে আটকে আছে প্রত্যাবাসন। এর মধ্যে এখন যুক্ত পাইলট প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই বিশ্ব পরাশক্তির বিপরীতমুখী অবস্থান। কেউ বলতে পারছে না কবে ফিরবে এই রোহিঙ্গারা। আদৌ সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। ইতোমধ্যেই সংকট বাড়ছে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থের সংস্থান নিয়েও। দায় না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশকেই। এমন পরিস্থিতিতেই রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর পূরণ হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা দিনটিকে পালন করবে গণহত্যা দিবস হিসেবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য পাইলট প্রকল্প নিয়ে আলাপ চলছে। চীন এই প্রকল্পের জন্য বেশ তোড়জোড় চালালেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা এই পাইলট প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পর কোথায় থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই প্রকল্প বন্ধ করতে চতুর্মুখী বাধা দেওয়া হচ্ছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের আগের ঘরবাড়ি নেই, তবে অন্য ধরনের সুবিধা রয়েছে। সেখানে গিয়ে কিছুদিন না থাকলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে না। ফলে রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়ানো কারও উচিত নয়। পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসনের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের রাখাইন দেখে আসা নিয়ে শাহরিয়ার বলেন, এ মানুষগুলো একবার গেছেন, দুবার গেছেন। দেখে এসেছেন, তাদের বাড়িঘর নেই। তবে অন্য ধরনের সুবিধা তৈরি রয়েছে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানের সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর প্রসঙ্গে শাহরিয়ার বলেন, তাদেরও রোহিঙ্গারা বলেছিলেন তারা ফেরত যেতে চান।

যত বিশ্বনেতা এসেছেন, তাদের সামনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রোহিঙ্গারা বলেছেন আমরা রাখাইনে যেতে চাই। তারা সেখানে কয়েকদিন থাকলে রাখাইনের সমস্যা আরও ভালোমতো বুঝতে পারবে। তবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাবে প্রত্যাবাসন হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহরিয়ার বলেন, তহবিল কমে আসছে। রোহিঙ্গা খরচের পুরোপুরি দায়িত্ব জাতিসংঘের। বাংলাদেশের কোনো দায়িত্ব নেই।

তার পরও রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার। রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিসহ প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে সহায়তা করতে মানবিক সংস্থাগুলো ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের আবেদন করেছিল। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত যৌথ কর্মপরিকল্পনা বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ বা প্রায় ২৫ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এটি একটি বৃহত্তর মানবিক সংকটে আর্থিক সহায়তার হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরে।

অথচ গেল ছয় বছরে ক্যাম্পে নতুন করে জন্ম নিয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু। এই সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের কোনো দুর্বলতা নেই। প্রস্তুতিরও অভাব নেই। কিন্তু প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের যে ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা কখনো মিয়ানমারের সে প্রস্তুতি ছিল না। ২০১৮ সালে সব রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে হস্তান্তর করি। কিন্তু ছয় বছর হতে চলল সেই ডাটাবেজের এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই শেষ করেনি।

গুটিকয়েক মাত্র ৫৬ হাজারের মতো সম্পন্ন করেছে। কমিশনার মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তারপরও আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মিয়ানমার থেকে সাড়া পাচ্ছি যে, তারা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে স্ব-স্ব ভিটেতে সেখানে নিয়ে যেতে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। মিয়ানমার বলছে, অন্তত দক্ষিণ মংডু থেকে যারা ফেরত এসেছে তাদের সেখানে ফেরত দেবে। আশা করছি, শিগগিরই হয় তো বহুল প্রত্যাশিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ এ দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। এখনো নানান শঙ্কার কথা বলছেন রোহিঙ্গারা।

Share This Article