‘ব্র্যান্ডিং না হওয়ায় বিদেশি পর্যটক আসছে না বাংলাদেশে’

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:১০, সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ২ মাঘ ১৪২৯

বাংলাদেশে হসপিটালিটি খাতের প্রধান দুটি বিষয় হলো এভিয়েশন ও ট্যুরিজম। কিন্তু এ খাতে তেমন দক্ষ কর্মী নেই। আবার দক্ষ করে তোলার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষণের অভাব। অন্যদিকে বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথভাবে বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিং না হওয়ায় বিদেশি পর্যটকও আসছেন না।

 

দেশের হসপিটালিটি খাতের নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সহসভাপতি আজীম শাহ। তিনি কক্সবাজারের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্প্যার জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।

আজীম শাহ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে হোটেল ও বিলাসবহুল আতিথেয়তা শিল্পের সঙ্গে কাজ করছেন। বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ব্র্যান্ডিং যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে মন্তব্য তার।

আজীম শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক বিদেশি আসেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। কিন্তু বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসার হার খুবই কম। বাংলাদেশের ফোকাস পোশাক খাত নিয়ে, কিন্তু পর্যটনও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হতে পারে। এই কক্সবাজার বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। কক্সবাজার নিয়ে কোনও ব্র্যান্ডিং নেই। সারা দুনিয়ার মানুষ কক্সবাজার সম্পর্কে জানে না। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পর্যটনকে প্রমোট করা হচ্ছে না। সবাই শুধু বলার জন্য বলেন, কিন্তু কেউ কার্যকর পদক্ষেপ নেন না।’

আজীম শাহের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার হোটেল খাতে কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বখ্যাত হোটেল ব্র্যান্ড স্টারউড, ম্যারিয়ট, চয়েস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের হসপিটালিটি খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হসপিটালিটি খাতটা অনেক বড়। এভিয়েশন ও ট্যুরিজম এই দুই জায়গা হসপিটালিটি নির্ভর। এ খাতে কাজ করতে হলে আগ্রহ থাকতে হবে, লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অতিথিপরায়ণতা আছে। বাংলাদেশের মানুষ ঘুরতে-খেতে পছন্দ করে। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে দক্ষজন গোষ্ঠী তৈরি করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাতে দক্ষ কর্মী তৈরি জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে এ খাতে দক্ষতা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নেই তেমন একটা। আর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে।’


বাংলাদেশি হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের ওপর আস্থা কম করেন বলে মনে করেন আজীম শাহ। এ কারণে দেশের তারকা হোটেলগুলোর উচ্চপর্যায়ের কর্মী এখনও বিদেশি।

আজীম শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক ট্যালেন্ট জনবল আছে। তারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশি মানুষ হোটেল খাতে কাজ করছেন। কিন্তু তারা নিজের দেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি মনে করি, দেশের হোটেল মালিকরা দেশি কর্মীদের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। কিন্তু দেশি কর্মীদের তো আগে সুযোগ দিতে হবে।’

প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে আজীম শাহ বলেন, ‘বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ দিলেও তাদের মান ভালো নয়। দক্ষ কর্মী তৈরির মতো সক্ষমতা তাদের নেই। তারা বেসিক কিছু ট্রেনিং দেয়, কিন্তু তা দিয়ে হোটেলগুলোর প্রয়োজন পূরণ হয় না। ফলে হোটেলগুলোয় আবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দক্ষ কর্মী তৈরিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে আমি প্রতিবছর সেখান থেকে কর্মী নিয়োগ করি। তাদের আবার হোটেলেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং তারা এখন ভালো করছে। অনেকেই ভালো অবস্থানে কাজ করছেন।’

দক্ষতা তৈরিতে হোটল মালিকদেরও ভূমিকা থাকা প্রয়োজন মনে করে আজীম শাহ বলেন, ‘হোটেলে খরচ কমাতে অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়ার প্রবণতা আছে। অদক্ষ কর্মী কম বেতনে নিয়োগ দিয়ে তারপর তাদের হোটেল কর্তৃপক্ষ বেসিক কিছু ট্রেনিং দেয়। কিন্তু এতে ভালো সার্ভিস আশা করা যায় না। অদক্ষ কর্মীরা তো জানেন না কীভাবে সার্ভিস দিতে হয়। দক্ষ কর্মী তৈরি হতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে।’

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article