টাঙ্গাইলে উৎপাদিত 'অর্গানিক' এই চা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও প্রশংসিত হয়েছে

পাট পাতার চা যাচ্ছে বিদেশে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৮, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৬ পৌষ ১৪২৯

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে বেসরকারি উদ্যোগে পুরোপুরি অর্গানিক পদ্ধতিতে তেতো পাট পাতার চা উৎপাদন হচ্ছে। আধুনিক টি-ব্যাগ পদ্ধতিতে বাজারজাত করা হচ্ছে। বর্তমানে পাট পাতার অর্গানিক চা ডেনমার্ক, ইউরোপ, আমেরিকা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোক্তা পর্যায়ে এ চা উৎপাদন করছেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন গ্রামের জাকির হোসেন তপু।

 

তার উৎপাদিত পাট পাতার 'অর্গানিক' চা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও স্থান পেয়েছিল। বাণিজ্যিকভাবে এ চা বাজারজাত করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি। জানা গেছে, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা জাকির হোসেন তপু বেসরকারি পর্যায়ে পাট পাতার চা নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণায় সফল হয়েছেন। খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক কোম্পানি মহিমা প্রোডাক্টসের ব্যানারে তার উৎপাদিত পাট পাতার চা বাজারজাত করা হচ্ছে।

এদিকে, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) জানায়, স্কটল্যান্ডের গস্নাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অতিথিদের জন্য উপহার হিসেবে তারা বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেনের পাট পাতার অর্গানিক চা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে এ চা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এরপর থেকে এ চায়ের চাহিদা ক্রমেই দেশ-বিদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, পাট পাতার চা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। এ চা পানে ডায়াবেটিস রোগের বিশেষ উপকার হয়। শরীরের ইনফ্লামেশন কমিয়ে ওজন কমায়, ক্যান্সার, পেটের বিভিন্ন পীড়া, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এটি কাজ করে। পাশাপাশি ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।

জ্বর, ঠান্ডা, ফ্লু নিয়ন্ত্রণ, দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি, দাঁতের সুরক্ষা, পায়ের অসাড়তা দূর, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে এটি অদ্বিতীয়। পাট পাতার চা ২০১৮ সালে বাজারে এসেছে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ওই বছর পরীক্ষামূলকভাবে এ চা বাজারে ছাড়ে। সফলতা পাওয়ায় ২০১৯ সালে এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয়। একেবারে নতুন এ পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ লক্ষ করে বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। প্রচলিত চায়ের বিকল্প হিসেবে পাট পাতার চা দিন দিন প্রসার লাভ করছে।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পাট পাতার এ চা রপ্তানি হচ্ছে। পাট পাতার চায়ের স্থানীয় ক্রেতারা জানায়, এ চায়ের অনেক গুণ রয়েছে। মানব দেহের অনেক রোগ মুক্তির ওষুধ হিসেবে কাজ করে এই পাট পাতার চা। তাই তারা উদ্যোক্তা জাকিরের কাছ থেকে কিনে নিয়মিত পান করছেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে পাট পাতার চায়ের বাজারও তৈরি হচ্ছে। লোক মুখে ও অনলাইনে জানতে পেরে প্রতিদিন প্রচুর উৎসুক দর্শনার্থী জাকিরের প্রজেক্টে ভিড় করছে। কারখানা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানায়, দেশে চাষ হওয়া পাট এক সময় দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে- এখনও রাখছে।

সেই তেতো পাট পাতা দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চা তৈরি হচ্ছে জেনে তাদের মধ্যে পদ্ধতি দেখার আগ্রহ জন্ম নিয়েছে। তারা প্রজেক্ট দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের ও পরিবারের সবার জন্য পাট পাতার চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রজেক্টের কর্মচারীরা জানায়, এ পাট পাতার চা কারখানায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে তাদের বেকারত্ব ঘুচেছে-লেখাপড়ার খরচ চালাতে পরিবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। তরুণ উদ্যোক্তা জাকির হোসেন তপু জানান, দেশীয় পাটের পাতা থেকে শতভাগ অর্গানিক পদ্ধতিতে পাট পাতার পানীয় বা চা প্রস্তুত করছেন। গুঁড়ো পাতা নয়- একেবারে স্বাস্থ্যসম্মত টি-ব্যাগ আকারে পাট পাতার চা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে।

উপকারী এ পানীয়র ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে মানুষ যেমন উপকৃত হবে তেমনি পাটের ব্যবহার আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে সাফল্যের নতুন একটা ধারা যোগ হবে। তিনি আরও জানান, চাষের পর পাট গাছ বড় হলে গাছের আগার দিকের কিছু স্বাস্থ্যকর পাতা ছিঁড়ে মেশিনে শুকিয়ে সেগুলো গুঁড়া করে চা পাতার উপযোগী করা হয়। পরে সেগুলো সুদৃশ্য প্যাকেটে ভর্তি করে বাজারজাত করা হয়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাট পাতার এ চা ডেনমার্ক, ইউরোপ, আমেরিকা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

এলসি বন্ধ থাকায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে চা পাঠাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এ চা উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বপ্ন দেখেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। টাঙ্গাইল বহুমুখী পাট শিল্প উদ্যোক্তা সেবা কেন্দ্রের (জেইএসসি) সেন্টার ইনচার্জ মোহাম্মদ মেহের হুসাইন জানান, উদ্যোক্তা জাকির হোসেন তপু বেসরকারিভাবে ২০০৯ সাল থেকে পাট পাতার উপর গবেষণা শুরু করেন। এরপর তিনি পুরোপুরি অর্গানিক পদ্ধতিতে পাট পাতার চা উৎপাদন করছেন।

এই চা সারা দেশেই পাওয়া যায়। পাটপাতার চা দেশের একটি বড় সম্পদ। সরকারিভাবে পাট চা উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে পাট পাতা চা ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই চা বর্তমানে ডেনমার্ক, ইউরোপ, আমেরিকা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তপুর এই উদ্যোগকে তারা সাধুবাদ জানান। দেশের পাট পাতার চা এক সময় বিশ্বের বাজার দখল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Share This Article

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

নিজের প্রচারের স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার ব্যক্তিত্ব বিলিয়ে দেওয়া: অপু

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ নথি সই, চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান

চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর

দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, বিএনপি দেখে না: কাদের

মার্কিন চাপ নয়, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হলেই জিম্মি মুক্তি দেবে হামাস