যুদ্ধ নয়, শান্তি চায় ইউরোপবাসী

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪১, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২, ১৮ কার্তিক ১৪২৯

প্রথমে কোভিড-১৯, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে অস্থির ইউরোপ- যার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর তা যুদ্ধের রূপ নেওয়ায় যে অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিশ্ব অর্থনীতি এখন হুমকির মুখে। 

বিশেষ করে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলোয় অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রকট হতে শুরু করেছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপবাসী সাধারণ মানুষ যুদ্ধবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়ে বলছেন, তারা যুদ্ধ চান না, শান্তি চান।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর পর যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ হয়েছে লন্ডন, রিগা, মিউনিখ, প্যারিস ও অন্যান্য শহরে। শান্তির পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়েছে সেসব সমাবেশ থেকে। ‘যুদ্ধ থামাও,’ ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে এ কী করছ!’ ইত্যাদি লেখা পোস্টার দেখানো হয়েছে। বার্লিনের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন জার্মানিতে লেখাপড়া করতে আসা রুশ নাগরিক আলেক্সান্দ্রা বেলোজেরোভা। তার ভাষ্য, ‘আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, তাই সংহতি প্রকাশ করছি।’ তবে জরিপে দেখা যায়, মূল রাশিয়ায় ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ রয়েছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষে। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপের অধিবাসীরা অধিকাংশই যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশন্স (ইসিএফআর) ১০টি দেশের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখিয়েছে, ৩৫ শতাংশেরও বেশি ইউরোপীয় ‘শান্তির পক্ষে।’ তারা চান, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ হোক। জরিপে দেখা যায়, শান্তির পক্ষে জনমত ইতালিতে ৫৮, জার্মানিতে ৫২, রোমানিয়ায় ৪৪, ফ্রান্সে ৪১, সুইডেনে ৪০, স্পেনে ৩৯, পর্তুগালে ৩৪, ব্রিটেনে ২৭, ফিনল্যান্ডে ২৬ শতাংশ। জরিপে যুদ্ধের পক্ষে জনমতও তুলে ধরা হয়েছে, তবে তা অনেক কম। যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সবচেয়ে বেশি অনুকূলে রয়েছে ইতালি, জার্মানি ও রোমানিয়া।

গত মে মাসে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তৎপরতার ওপর আঘাত হেনেছে যুদ্ধ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ কেনেথ রোগোফ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি একটা ঝড়ের মধ্যে পড়ছে। ইউরোপ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অবনতিশীল হলে বৈশ্বিক সংকট প্রকট হয়ে উঠবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে। সে কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক পরিণতি এড়ানোর উপায় নেই ওই দেশগুলোর। অন্যদিকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যে পরিমাণ শরণার্থীর আগমন ঘটেছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নজিরবিহীন। ফলে অর্থনীতির ওপর চাপ বেড়েছে আরও। যুদ্ধের পরিণতিতে মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। খাদ্য, জ্বালানি ও জরুরি পণ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়ে চলেছে প্রতিদিন।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে পড়ায় সেখানকার মানুষদের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব আরও জোরদার হচ্ছে। যুদ্ধ রুখতে ইউরোপবাসী ব্যর্থ হলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন যুদ্ধবিরোধীরা। প্রমিত হোসেন, দৈনিক আমাদের সময়

বিষয়ঃ ইউক্রেন

Share This Article