যেভাবে যুক্ত হবেন চার ধরণের পেনশন স্কিমে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৮:৪২, বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩, ১ ভাদ্র ১৪৩০

 ‘প্রবাস’ ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ নামে পেনশন স্কিম চালুর কথা বলা হয়েছে। চার ধরনের স্কিমে আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। বিধিমালা মেনে যে যার সুবিধামতো স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগনেরর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিমের বিধান রেখে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা জারি করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল বেসরকারি চাকুরেদের। এই আক্ষেপ ঘুচাতে যাচ্ছে সরকার।

১৪ আগস্ট অর্থ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এই বিধিমালায় ‘প্রবাস’ ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ নামে পেনশন স্কিম চালুর কথা বলা হয়েছে। চার ধরনের স্কিমে আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। বিধিমালা মেনে যে যার সুবিধামতো স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা পেতে ন্যূনতম ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হবে। তবে পরপর তিন মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হয়ে যাবে। এরপর জরিমানাসহ সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।

১৭ আগস্ট বহুলপ্রতিক্ষীত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন।

প্রবাস স্কিম

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা যাবে। প্রয়োজনে স্কিমও পরিবর্তন করতে পারবেন প্রবাসীরা।

প্রবাসীতের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সেটির অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি জমা দিতে হবে।

প্ৰগতি স্কিম

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশ নিলে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং বাকি ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশ না নিলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিজ উদ্যোগে একাই এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

সুরক্ষা স্কিম

অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিরা এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে।

সমতা স্কিম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময় সময় প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, এসব স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার প্রাপ্যতা অর্জিত হবে।

কোন বয়সীরা পারবেন?

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক নিজেদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্কিমে অংশ নেওয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেয়া শেষ হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন পাবেন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তবে কোনো স্কিমে অংশ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

চাঁদার হার

প্রবাস স্কিমে মাসিক ৫ হাজার কিংবা সাড়ে ৭ হাজার কিংবা ১০ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা হারে। সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১১ হাজার ৪৭৭ এবং ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা, সাড়ে ৭ হাজার টাকার কিস্তিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার কিস্তিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা।

প্রগতি স্কিমে মাসিক ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৩ হাজার ৬০ টাকা হারে। ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।

সুরক্ষা স্কিমে মাসিক ১ হাজার কিংবা ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। ২ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৩ হাজার ৬০, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, ২ হাজার টাকার কিস্তিতে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।

সমতা স্কিমে মাসিক ১ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হতে হবে। ১০ বছর পূর্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে প্রতি মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা হারে।

নিবন্ধন, চাঁদা কীভাবে দিতে হবে?

পেনশন স্কিমে অংশ নিতে দেশ এবং প্রবাস থেকে অনলাইনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে।

আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা জমা দেয়ার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে।

যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হওয়ার পর পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।

সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছদ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে।

চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে এসএমএম দিয়ে জানান হবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে জরিমানার পরিমাণসহ জানিয়ে দেয়া হবে।

কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিকভাবে পেনশন স্কিমে অংশ নিলে প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মীদের চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে জমা দিতে হবে।

সময়মত চাঁদা না দিলে?

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা দিতে না পারলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা জমা দেয়া যাবে। এক মাস পার হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাব সচল রাখা যাবে।

কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে তিন কিস্তির চাঁদা জমা না দিলে তার পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। তবে নির্ধারিত বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমা দিয়ে হিসাব সচল করা যাবে।

মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম জমা দেয়া যাবে।

কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করতে পারবেন। অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও পেনশন হিসাব স্থগিত হবে না।

চাঁদাদাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে কীভাবে তা নিষ্পত্তি করা হবে বিধিমালায় সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বলা আছে।

পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতাকে নমিনী মনোনয়ন করে দিতে হবে। নমিনী মারা গেলে নতুন নমিনী মনোনয়ন করতে হবে।

জমার টাকা থেকে ঋণ

চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ের জন্য খরচ করতে পেনশন স্কিমে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে নিতে পারবেন। ঋণ হিসেবে নেয়া অর্থ পেনশন কর্তৃপক্ষ ধার্য করা ফিসহ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

Share This Article