নওগাঁর মাঠে এবার বাহুবলী টমেটোর চাষ

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৮, সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪, ১১ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরের জেলা নওগাঁ। খাদ্যশস্যের ভান্ডার ধানের পাশাপাশি নিত্য নতুন ফসল ও সবজি উৎপাদনে মেতেছেন এ জেলার কৃষকরা। কেউ ইউটিউব দেখে কেউবা বিভিন্ন উপায়ে উৎপাদন করছেন নতুন নতুন ফসল। ফলে দিন দিন পরিচিতি বাড়ছে এ জেলার কৃষকদের। এবার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চাষি মইনুল হক। বাহুবলী টমেটো চাষ করে সাড়া ফেলেছেন তিনি।

এই বাহুবলী টমেটো চাষ করেছেন নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের চক-আতিথা গ্রামের চাষি মইনুল হক। অগ্রহায়ণ মাসে ১০ শতক জমিতে আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে বাহুবলী টমেটোর চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। দেড় মাসেই গাছে ফুল ও ফল আসে। বাজারে চাহিদাও বেশি। প্রথম চালানে প্রায় ৪০ মন টমেটো বিক্রি করেছেন প্রায় ৪২ হাজার টাকার। দ্বিতীয় চালানে ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রির আশা করছেন তিনি। তাই এটি চাষাবাদে ভাগ্য বদলেছে চাষি মইনুল হকের।

আধুনিক মালচিং প্রযুক্তি অনুসরণ করে উৎপাদন খরচ হয়েছে কম বেড়েছে ফলনও। প্রথম দফায় মূলধনের চারগুণ বেশি লাভ করার পরও দ্বিত্বীয় দফায় সমপরিমাণ লাভের আশা দেখছেন এ কৃষক। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং কৃষকের পরিচর্যায় বেড়েছে উৎপাদন সঙ্গে পেয়েছেন মূল্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূর্বে মিন্টু সুপার, রতন, রাজাবাবু সহ বেশ কয়েকটি জাতের টমেটো চাষ করেছেন কৃষক মইনুল হক। কিন্তু ফলন ও দাম না পাওয়ায় সেই জাতগুলো বাদ দিয়ে সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবারই প্রথম বাহুবলী জাতের টমেটো চাষ করেন তিনি। প্রথমেই বাম্পার ফলন পেয়েছেন। কৃষক মইনুল হক জানান, সব জাতের থেকে বাহুবলী জাতের টমেটো চাষে ভাগ্য ফিরেছে তার। প্রতি মন টমেটো ১২শ থেকে ১৪শ টাকা বিক্রি করেছেন তিনি। ১০ শতক জমিতে তার সর্বসাকূল্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা ।

প্রথম চালানে ৪২ হাজার টাকা বিক্রি করেও দ্বিতীয় চালানে ওই একই গাছ থেকে আরও ৫০ হাজার বিক্রির সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। পাইকাররা মাঠে এসে তার কাছ থেকে টমেটো নিয়ে যায়। কৃষক মইনুলকে তার স্ত্রী শেলী আখতার সার্বিক সহযোগিতা করেন। গাছ থেকে টমেটো উত্তোলন, বিক্রি হিসাব সংরক্ষণসহ সকল কাজে সহযোগিতা করেন।

তিনি জানান, এইবার ঈদে ফসল থেকে লাভের টাকায় বাড়ির সকলকে উপহার দেবেন। এতে করে বরাবরের তুলনায় এইবার ঈদে তাদের আনন্দটা ব্যতিক্রম হবে। বাহুবলী টমেটো তাদের পারিবারিক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।

এইদিকে কৃষক মইনুল হককে দেখে তার গ্রামের কৃষকরাও আগামীতে বাহুবলী টমেটো চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, অল্প খরচে অধিক লাভ হয় বাহুবলী টমেটো চাষে। তাই তারাও তাদের জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বাহুবলী টমেটো চাষ করবেন।

সদর উপজেলার মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বীজ, সার, কীটনাশকসহ সকল সুবিধা কৃষক মইনুলকে দেওয়া হয়েছে। তার সুফল তিনি পেয়েছেন। সার্বক্ষণিক সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ তার পাশে ছিল এবং থাকবে। মইনুল হক বাহুবলী টমেটো অল্প খরচে যে উৎপাদন করেছেন তার লাভের ভাগ শতভাগ। তার মতো অন্যান্য কৃষকদেরও বহুবলী টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধকরণ করতে সার্বিক সহযোগিতা করবেন তারা বলে জানান।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মুনিরুল ইসলাম জানান, কৃষক মইনুল হক তার ১০ শতক জমিতে বাহুবলী টমেটো চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মালচিং পদ্ধতিতে এই চাষ শুরু করেন তিনি। সময় অনুযায়ী এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। এই বাহুবলী জাতের টমেটোর বাজারে দাম বেশি। ফলে কৃষক লাভবানও হবে বেশি। উপজেলার আরও কৃষকদের এই জাতের টমেটো চাষে মনোযোগী করতে উপজেলা কৃষি বিভাগ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলার রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের স্বপ্নবাজ কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল বাড়ির পাশে ৮ শতক জমিতে জিরা চাষ করেন। অনেক চেষ্টা করে অনলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ করে ৫০০ গ্রাম জিরা বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাড়ির পাশের জমিতে জিরা বীজ রোপণ করে সফল তিনি। এই নিয়ে দেশে খুব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।

যেকোনো নতুন ফসল উৎপাদন করা কৃষক জহুরুলের নেশা। উৎপাদন করে পান আনন্দ। এর আগে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন তিনি। সফলও হয়েছেন। তবে এবার বাজারে জিরার দাম বেশি হওয়ায় সেই জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরবর্তীতে ইউটিউবে জিরা চাষের পদ্ধতি দেখে সিদ্ধান্ত নেন জিরা চাষের। জিরার বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন জিরা চাষ। তাই প্রথমবারের মতো জিরা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। হয়েছেন প্রশংসিত।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article