অনিয়মের ঘুণপোকায় জর্জরিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন
![অনিয়মের ঘুণপোকায় জর্জরিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন](/Uploads/Images/News/2024/2/Image-31530-20240214115158.webp)
বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন পাকিস্তানের জনগণ। তবে জাতীয় নির্বাচনের পদে পদে ছিল অনিয়ম। এখন ভোটাররা এসব অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চাইছেন জবাব। তাদেরকে দ্রুতই যথাযথ উত্তর দিতে বাধ্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে এক দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ ফেব্রুয়ারির মাঝেই গঠন করতে হবে সরকার। এ সরকারের হাল ধরবেন কে বা কারা, তা নিয়ে চলছে একের পর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক। এই অধ্যায়টি শেষ হলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে কিছু মহল।
বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন পাকিস্তানের জনগণ। তবে জাতীয় নির্বাচনের পদে পদে ছিল অনিয়ম। এখন ভোটাররা এসব অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চাইছেন জবাব। তাদেরকে দ্রুতই যথাযথ উত্তর দিতে বাধ্য পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন।
সব অনিয়ম ছাপিয়ে সবার চোখে যেটা বড় হয়ে ধরা দিয়েছে, তা হলো দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ভোটাধিকার হরণ। ভোটের ফলাফলে বড় ধরনের অসঙ্গতি থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা ভোটের হিসাবের সাথে প্রার্থীদের নিজস্ব হিসাব এমনকি নিরপেক্ষ হিসাবের (বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত) গরমিল দেখা গেছে। বিভিন্ন মহল- বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহল থেকে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ইতোমধ্যেই।
কিছু কিছু আসনের রিটার্নিং অফিসারদের রিপোর্টে গরমিল পাওয়া যায়, এছাড়া ফলাফল ‘চূড়ান্ত’ করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়। এসব কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হতে থাকে।
নানা অসঙ্গতির মাঝে একটি হলো, দেশটির বেশিরভাগ আসনে টিভি চ্যানেলগুলোর প্রকাশ করা ভোটের হিসাব আর পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা ভোটের হিসাব মিলে যায়। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর- যেখানে সংবাদমাধ্যমগুলো বেশি শক্তিশালী, সেখানে আবার তাদের হিসাবের সাথে নির্বাচন কমিশনের হিসাবের বড় পার্থক্য। এতে পরিষ্কারভাবেই ধরে নেওয়া যায় এসব আসনে ভোট গণনার সময়ে কিছু না কিছু অনিয়ম হয়েছে এবং এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত প্রয়োজন।
কিছু এলাকায় সুষ্ঠু তদন্ত চালানো কঠিন হবে। কারণ, সেসব এলাকায় সব প্রার্থীদেরকে ‘ফরম ৪৫’ দেওয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনার একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হলো এই ফরম। ওই এলাকায় ভোটে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকতে হবে প্রতিটি ফর্মে। কিন্তু পাকিস্তানের কিছু জায়গায় এই ফরমে সব প্রার্থীর এজেন্টদের সই নেওয়া হয়নি। বেশকিছু নির্বাচন পর্যবেক্ষক এ বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
করাচি, লাহোর, মুলতান এবং ইসলামাবাদের কিছু পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন নির্বাচন কমিশনের ফলাফল আসে একেবারে উলটো। ইতোমধ্যেই সালমান আকরাম রাজা নামে লাহোরের এক প্রার্থী তার এলাকার রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। আরও কয়েকজন প্রার্থী একইভাবে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের উচিত পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উপ-নির্বাচনে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল এই একই কমিশন। ওই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে ফলাফল আটকে দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন হবে।
শুধু তাই নয়, আইনগতভাবে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ করে দেওয়াও এখন সময়ের দাবি। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছেন পাকিস্তানের জনগণ। তার ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও বেড়ে চলেছে। ফলে এসব অনিয়মের তদন্ত দ্রুতই শুরু করাটা নির্বাচন কমিশনের জন্য সবদিক থেকেই মঙ্গলজনক।
ডনের সম্পাদকীয় থেকে অনুবাদ করেছেন কে এন দেয়া