শিক্ষার্থীদের এখন কোনও আনন্দ নেই: ড. জাফর ইকবাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের এখন আর কোনও আনন্দ নেই। একমাত্র কারণ লেখাপড়া সংক্রান্ত বিষয়।
আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন কোচিং নামে কোনও শব্দ ছিল না। একান্ত প্রাইভেট বিষয়টি ছিল। যারা প্রাইভেট পড়তো তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতো না। মুখস্থ করার জন্য তো ছাত্র-ছাত্রীদের মস্তিষ্ক তৈরি হয়নি, মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে বিশ্লেষণ করার জন্য।’
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মিলনায়তনে নতুন ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ও শিক্ষাক্রম পরিচিতি’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে কোচিং করতে হয়, প্রাইভেট পড়তে হয়। তাদের বাবামায়ের ধারণা, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাটাই মূল উদ্দেশ্য। যদি জিপিএ-৫ না পায় তাহলে অনেক অপমান করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে ফেলে। এটা আমাদের একটি চরম ব্যর্থতা। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের শৈশবে কোনও আনন্দ নেই। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি সবসময় বাচ্চাদের বলি, তোমরা মুখস্ত করো না। বলে তো লাভ নেই, তাদের বাবামায়েরা কোচিংয়ে পাঠাবে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এমন একটি সিস্টেম করে রাখবে যদি শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে না পড়ে ভালো নম্বর পবে না। সিস্টেমটা এমন হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ে পাঠ্যবই মুখস্ত করে লেখাপড়া করে। মুখস্থ করার জন্য তো ছাত্র-ছাত্রীদের মস্তিষ্ক তৈরি হয়নি।’
ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘অভিভাবকরা কোচিং করা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের যন্ত্রণা দেয়। সকালে একটি কোচিংয়ে দেয়, বিকালে আরেকটা কোচিংয়ে দেয়। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে প্রাইভেট পড়ে। পাঠ্যবই মুখস্ত করে, গাইড বই মুখস্ত করে। তাদের জীবন বলে কিছু নেই। দেশের সব পত্রপত্রিকায় গাইড বই ছাপায়। সেই গাইড মুখস্ত করে। আমরা ভেবেছিলাম এভাবেই বোধ হয় বাকি জীবনটা কেটে যাবে। যখন দেখলাম নতুন শিক্ষাক্রম শুরু করা হয়েছে। মেঘ না চাইতেই জল না শরবত।’
ড. জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘শিশুর শিক্ষা আনন্দময় করে তোলার জন্য এবার নতুন কারিকুলামে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে শিখন, পঠন আনন্দময় করতে চাই। শিক্ষার্থীরা যেন মুখস্ত করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে পড়তে পড়তে শিখবে। আনন্দময় পরিবেশে তারা পাঠ গ্রহণ করবে।’
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের দায়িত্ব বেশি পালন করতে হবে। নোট-গাইড থেকে বের হয়ে এসে নতুন শিক্ষাক্রমে ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দের সঙ্গে পাঠ গ্রহণ করবে।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল মোমেন, অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রমুখ।