অনলাইন আসক্তি না ‘ডিজিটাল কোকেন’?

বিশ্বের প্রায় ২৭০ কোটিরও অধিক মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। এর একটি ব্যাপক প্রভাব পড়েছে আমাদের সমাজে। যোগাযোগের সহজীকরণ এবং হাতের কাছেই পরিচিতি-অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি হওয়া, পছন্দ অপছন্দের সাথে মতামত জানানোর সুযোগ থাকায় আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।
গবেষকদের মতে, ফেসবুক মাদকের মতোই এক নেশা। স্মার্টফোন- ইন্টারনেটের লাগামহীন ব্যবহার আর অনলাইন গেম-ইউটিউব- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি জীবনঘাতী মাদকের চেয়েও বেশি মারাত্মক। অনলাইন নির্ভর এমন আসক্তিকে গবেষকরা ‘ডিজিটাল কোকেন’ নাম দিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকের চাহিদা সৃষ্টি হলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির স্নায়ুতে যে রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, ঠিক একই ঘটনা ঘটে এসব প্রযুক্তিপণ্য আসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কেও। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য হলো, ২০১০ সাল থেকেই ১৩-১৮ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের স্মার্টফোন ও প্রযুক্তি পণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিষণ্নতায় ভোগা ও আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে গেছে।
পরবর্তী পাঁচ বছরে যা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৬৫ ভাগে। যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন বা অন্যান্য ডিভাইসে দিনে পাঁচ ঘণ্টার অধিক সময় কাটাচ্ছেন তাদের ৪৮ ভাগ অন্তত একবার হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
২০১৬ সালের ইউনিসেফ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গেমে আসক্ত ব্যক্তি বাস্তবতা ও কল্পনার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এছাড়া অনলাইনে অশালীন কথা ও ছবি, অকথ্য গালিগালাজ বা সাইবার বুলিং থেকে হত্যার হুমকির মতো ঘটনাও ঘটছে।
অনলাইন নির্ভর এমন আসক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক ও স্নায়ুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাদকাসক্তরা সাধারণত দিনের একটি বিশেষ সময়ে মাদক গ্রহণ করে। কিন্তু স্মার্টফোন ইন্টারনেট-ফেসবুক আসক্তি ২৪ ঘণ্টাই মাথার মধ্য ঘুরতে থাকে। এতে আসক্তরা কর্মক্ষেত্র, খাবার টেবিল, এমনকি টয়লেটে গিয়েও স্মার্টফোন চালাতে থাকে।’
সূত্র : দৈনিক আমার সংবাদ। ওয়াহিদ তাওসিফ এর ‘প্রযুক্তি মাফিয়াতে বাড়ছে হতাশা’ অবলম্বনে