প্রযুক্তিবিদরাই থাকেন প্রযুক্তির বাইরে!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রায় সবকটির আবিষ্কারই পশ্চিমা দেশগুলোতে। মানুষের কল্যাণের জন্য এগুলোর আবিষ্কার হলেও এখন অকল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অপব্যবহারের কারণে হাজারো তরুণ-তরুণী বিপথগামী হচ্ছে, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে, পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে, খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে দিনরাত ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। অথচ, যারা এই প্রযুক্তির আবিষ্কারক তাদের সন্তানরাই এই প্রযুক্তি থেকে দুরে।
বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস কখনো তার সন্তানদের আইপড ব্যবহার করতে দেননি। ফেসবুকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চামাথ পালিহাপিতিয়া সাত বছর ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর দায়িত্বে থাকলেও নিজে ফেসবুক ব্যবহার করেন না।
শুধু কি তাই, ফেসবুকের পোস্ট বা ছবিতে লাইক পাওয়ার জন্য মানুষ কত উদ্ভট কাজ করে, অথচ এই লাইকের উদ্ভাবক জাস্টিন রোজেস্টাইন নিজের ফোন থেকে সযত্নে লাইক বাটনটি সরিয়ে দিয়েছেন আসক্ত হওয়ার ভয়ে। ফেসবুক-টুইটারের শীর্ষ নির্বাহীরা কেউই আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করেন না। কালেভদ্রে স্ট্যাটাস দেন বা টুইট করেন।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ তো আরও বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখভালের দায়িত্বে আছে ১২ জন সহকারী। অর্থাৎ সিলিকন ভ্যালির হর্তাকর্তারা ও তাদের সন্তানরা প্রযুক্তিপণ্য-সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশে শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা একটি সমস্যা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তা হচ্ছে ক্লাসরুমেও ছাত্রছাত্রীরা মোবাইলে মেসেজ চালাচালি করছে। টিফিন বিরতিতেও নেই খেলাধুলায় আগ্রহ। আসক্তদের মতোই তারা ডুবে থাকছে ভার্চুয়াল জগতে। বন্ধু বা পরিচতজন পাশে বসে থাকলেও তাদের মস্তিষ্ক কাজ করছে তথাকথিত এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধমেই।
অনলাইন এই আসক্তি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. তারেক মাহমুদ হোসেন জানান, ‘ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে প্রযুক্তির একটা স্বচ্ছ এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে পৃথক কাউন্সিলিং সেন্টার। কিন্তু বাংলাদেশে সে সুযোগ না থাকায় পরিবারকেই দায়িত্ব নিয়ে স্মার্টফোন আসক্তি কমিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে কাউন্সিলিং করাটা জরুরি। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিছুটা থাকতে পারলেও তা যেন প্রধান কিছু হয়ে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।’
সূত্র : দৈনিক আমার সংবাদ। ওয়াহিদ তাওসিফ এর ‘প্রযুক্তি মাফিয়াতে বাড়ছে হতাশা’ অবলম্বনে