দল চাঙ্গা করতে উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে জামায়াত

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৯, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বর্তমান সরকার নিয়ে দলের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে বর্তমান ব্যবস্থার অধীনে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে না। তবে স্থানীয় নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, আগ্রহী এবং জয়ী হওয়ার মতো নেতারা ইচ্ছুক হলে প্রার্থী হতে পারবে।

আন্দোলনের ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীকে চাঙ্গা রাখতে উপজেলা নির্বাচনে যাবে জামায়াতে ইসলামী। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়ে নয়, স্থানীয়ভাবে প্রার্থী হবেন দলটির নেতারা। জামায়াত সূত্র সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছে।

যদিও কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, এখনও অনেক নেতাকর্মী কারাগারে। আসামি হয়ে পলাতক আরও কয়েক হাজার। এ অবস্থায় নতুন করে আন্দোলনে নামা সম্ভব নয়। আন্দোলনের পরিবেশ-পরিস্থিতিও নেই। ভোট করলে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবে– এই ভাবনা থেকে নির্বাচনের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলছে জামায়াত। আগে নেতাকর্মীরা বারবার জামিন পেলেও কারাফটক থেকে ফের নতুন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা একে একে মুক্তি পেয়েছেন। একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সমকালকে বলেন, আন্দোলন নয়, নেতাকর্মীকে মুক্ত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

বিএনপির পথ ধরে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে নিবন্ধন হারানো জামায়াত। বিএনপি হরতাল-অবরোধ করলেও নির্বাচন হয়েছে অনেকটাই নির্বিঘ্নে। আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। নতুন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দিতে পারেনি নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো।

গত বছরের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপিকে অনুসরণ করে কর্মসূচি দিলেও ৭ জানুয়ারির পর নীরব রয়েছে জামায়াত। সূত্র জানিয়েছে, দলটির মধ্যে আলোচনা রয়েছে আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে বেরোনোর পথ হতে পারে উপজেলা নির্বাচন। ভোটে জিতলে, জনসমর্থন প্রমাণ করা যাবে। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে।

এ ভাবনা দলে রয়েছে জানিয়ে জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তবে চাইলেই রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বর্তমান সরকার নিয়ে দলের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে বর্তমান ব্যবস্থার অধীনে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ অসম্ভব। তাই স্থানীয় নেতৃত্বকে বলা হয়েছে, আগ্রহী এবং জয়ী হওয়ার মতো নেতারা ইচ্ছুক হলে প্রার্থী হতে পারবেন।

এর ব্যাখ্যায় জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরের পর ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামি হয়েছেন পৌনে তিন লাখ। প্রায় সবার আর্থিক অবস্থা সঙিন। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জামিন করাতে বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে। এ অবস্থায় উপজেলার প্রার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রার্থীদের ১ লাখ টাকা করেও দেওয়া কঠিন হবে। কারও যদি আর্থিক সামর্থ্য ও জনপ্রিয়তা থাকে, তাহলে তিনি প্রার্থী হলে বাধা থাকবে না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন।

২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন জামায়াত সমর্থিতরা। ওই বছর ২৭ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১২ উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন তারা। ২০১৪ সালে ৩৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান হন জামায়াত সমর্থিতরা। একই নির্বাচনে ১২৯ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৩৬ উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান হন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ‘ভরাডুবির’ পর ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে কেউ অংশ নেননি।
এবারও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেবে না। দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। বিএনপি জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে না। দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবে জামায়াত এতটা কঠোর অবস্থানে নেই।

এরই মধ্যে খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী জামায়াতের নেতারা অনানুষ্ঠানিক প্রচারে নেমে পড়েছেন। গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উপনির্বাচনে অংশ নেন দলের নেতারা। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হোসেন জয়ী হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও স্থানীয় জামায়াত সর্বাত্মকভাবে নির্বাচনে ছিল।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, নৌকা না থাকায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হতে পারেন। আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হওয়ায়, যেসব উপজেলায় দলীয় ভোটব্যাংক এবং জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে জামায়াতের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে জামায়াতের কয়েক নেতার অভিমত, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ছাড়া অন্য ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন না। আন্দোলন সফল হলে, ভোটের যে আর্থিক সহযোগিতা এবং নেতাকর্মীর উদ্দীপনা থাকত, তা এখন পাওয়া যাবে না।

একে একে কারামুক্ত নেতারা
সংসদ নির্বাচনের পর জামিন পাওয়া নেতাদের আগের মতো জেলগেট থেকে ফের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের মামলা রয়েছে।

২০২১ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার মজলিশে শূরার সদস্য শাহজাহান চৌধুরী তিনবার সব মামলায় জামিন পেলেও ­ভোটের আগে ছাড়া পাননি। গত ১৭ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পেয়েছেন।

গোলাম পরওয়ার ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হন। তিনবার জামিন পেয়েও জেলগেট থেকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার হন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এর আগে তিনবার সব মামলায় জামিন পেয়েও ছাড়া পাননি। শতাধিক মামলায় জামিন পেয়ে তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়েছেন। ১০ মাস কারাভোগের পর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। আগেই মুক্তি পেয়েছেন নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম।

সরকারের সঙ্গে আপস বা আঁতাত নেই জানিয়ে জামায়াত নেতারা বলেছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি না থাকায় ছাড় দিচ্ছে। যদিও দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, জামায়াত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে রয়েছে। শিক্ষায় নৈরাজ্য, জ্বালানি সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলছে
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা হয়। যদিও পুলিশের অলিখিত অনুমতিতে সেদিন অনেকটাই নির্বিঘ্নে মহাসমাবেশ করে জামায়াত। ওই দিন থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি যখন যে কর্মসূচি দিয়েছে, জামায়াত তা অনুসরণ করেছে। কিন্তু ভোটের পর বিএনপির অনুসরণে কালো পতাকা মিছিল ও গণসংযোগ কর্মসূচি দেয়নি জামায়াত।

জামায়াত সূত্রের ভাষ্য, কর্মসূচির ধরনে স্পষ্ট– আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের আশা ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। গণসংযোগ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচির মতো মুখরক্ষার কর্মসূচির চেয়ে সাংগঠনিক কাজ এবং নেতাকর্মীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের কারামুক্ত করা এখন প্রধান লক্ষ্য।

আন্দোলনে ব্যর্থতা সম্পর্কে জামায়াতের মূল্যায়ন, বিএনপি অতিমাত্রায় বিদেশনির্ভর ছিল। ভারত সম্পর্কে মূল্যায়নও ভুল ছিল। ভারতবিরোধী অবস্থান যতদিনে নিয়েছে, তখন আর কিছুই করার ছিল না। নির্বাচন বর্জনকারী সব পক্ষকে এক কাতারে আনতে পারেনি বিএনপি। এ কারণে বিপুল জনসমর্থনকে কাজে লাগানো যায়নি।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, দূরত্ব থাকলেও বা বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ এবং পরিস্থিতি তৈরি হলে আন্দোলনে থাকবে জামায়াত। তা না হওয়া পর্যন্ত অস্তিত্ব ধরে রাখতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ভাবনা রয়েছে।

Share This Article

আমেরিকা ছাড়িয়ে ইউরোপে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন

ক্ষমতায় যেতে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

নিজের প্রচারের স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার ব্যক্তিত্ব বিলিয়ে দেওয়া: অপু

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ নথি সই, চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান

চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর


‘মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া’

উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা

নির্দলীয় উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন দলের বর্জন কি তাৎপর্যপূর্ণ?

তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় মসৃণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন: মার্কিন থিংক ট্যাংক

ফখরুলের কাছে ৬০ লাখ কারাবন্দির তালিকা চাইলেন কাদের

নাশকতার ১২ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন ইশরাক

হাসপাতালে ভর্তি রফিকুল ইসলাম মিয়া

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গোটা বাংলাদেশ গিলে খাবে : ওবায়দুল কাদের

গ্রামীণ ফোনের ইনকামিং কল চার্জ বন্ধ করলেও বিদেশী বন্ধুদের দ্বারা সরকারকে থ্রেট দিয়েছিলেন ইউনুস!

মোহাম্মদ নাসিমের জন্মদিন আজ