কথা-সুরেই বেঁচে থাকবেন আলাউদ্দিন আলী

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৪৯, বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩০

যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না, এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই, একবার যদি কেউ ভালোবাসতোসহ অসংখ্য কালজয়ী গানের সুর-স্রষ্টা আলাউদ্দিন আলীর আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী ২০২০ সালের ৯ আগস্ট ৬৮ বছর বয়সে চলে যান না ফেরার দেশে। ২০১৫ সালের জুন মাসে আলাউদ্দিন আলীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি কয়েক দফায় বিদেশেও চিকিৎসা নেন। কিংবদন্তি এই সুরকার সংগীত পরিচালক ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে, ফিরতে পারেননি তিনি সংগীতে।

১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে তার জন্ম। বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন। দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী।

তার বাবা ও কাকা দুজনেই ওস্তাদ। তার কাকা ওস্তাদ সাদেক আলী একটা বেহালা কিনে দেন ছোটবেলায়। তার বোন সেই আমলের একমাত্র মহিলা সেতারবাদক। বিখ্যাত সুরকার আলী আকবর রুপুর মা। তিনি শিখেছেন সব কিছুই। 

সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন। 

এসরাজ, পিয়ানো, তবলা অল্প অল্প সবই পারতেন। বিভিন্ন সিনেমার সংগীতায়োজনে বেহালা বাজাতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তার বন্ধুর জন্য সুর করেন দেশের গান, ‘ও আমার বাংলা মা তোর’। পরে এটা সাবিনা ইয়াসমিনকে দিয়েও গাওয়ান। টিভিতে কাজ করতেন তখন।

জাফর ইকবালকে গান গাওয়ানো পুরোটাই ওনার অবদান। নায়ক জাফর ইকবালের সব গানের সুরকার ও সংগীত পরিচালক তিনি। ‘সন্ধিক্ষণ’ সিনেমা দিয়ে তার কাজ শুরু। পরিচালক আমজাদ হোসেন তাকে ব্রেক দেন। ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ সিনেমা দিয়ে পাল্টে যায় তার সংগীতজীবনের গল্প। 

‘ফকির মজনু শাহ’ ছবির কাজ পেয়ে যান। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোর, সৈয়দ আবদুল হাদী, রুনা লায়লা, শাহনাজ রহমাততুল্লাহ, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ শিল্পীর জন্য তৈরি করেছেন অসংখ্য গান। 

সেই সময়ের ব্যস্ত ও প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক সত্য সাহা, সুবল দাস, খান আতা, আলম খানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করে হয়ে যান পরিচিত নাম। তার সুর করা গানের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। পেয়েছেন আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার অসংখ্য গান হয়েছে জনপ্রিয়। কথা, সুরে, গানেই বেঁচে থাকবেন আলাউদ্দিন আলী।

আলাউদ্দিন আলীর কালজয়ী কিছু গান

একবার যদি কেউ ভালোবাসতো

যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়,

ইস্টিশনের রেলগাড়িটা

হয় যদি বদনাম হোক আরো

ও আমার বাংলা মা তোর

আছেন আমার মোক্তার

সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী

কেউ কোনোদিন আমারে তো

জন্ম থেকে জ¦লছি মাগো

ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা

সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি

যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে

এমনও তো প্রেম হয়

সবাই বলে বয়স বাড়ে

আকাশের সব তারা ঝরে যাবে

আমার মতো এত সুখী নয়তো কারো জীবন

ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়

এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই

আমায় গেঁথে দাওনা মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা

হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ

Share This Article