ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হাতে চার হাজার চোরের তালিকা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:০০, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১৩ আশ্বিন ১৪২৯

ডেস্ক নিউজ : রাজধানীতে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, গত মাসে বিভিন্ন থানায় ৭৩টি চুরির মামলা হয়েছে। বাস্তবিক চিত্র এরচেয়েও বেশি। অল্প চুরির ঘটনায় আইনি জটিলতা ভেবে ভুক্তভোগীরা মামলাই করেন না। চুরির ঘটনা কমাতে চোরের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকার চার হাজারের বেশি চোরের ডাটাবেজ আমাদের কাছে আছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, যখনই কোনো একটি ঘটনা বাড়তে থাকে তখনই তা কমানোর জন্য চেষ্টা করে ডিএমপি। এখন আমরা বিশেষভাবে চুরির ঘটনা মনিটরিং করছি। এটা নিয়ে কাজ করছি। চুরির ঘটনায় আমরা একটি ডাটাবেজ ডেভেলপ করেছি। ঢাকার চার হাজারের বেশি চোরের ডাটাবেজ আমাদের কাছে আছে। মনিটরিংগুলো করা হয়েছে, কে কীভাবে কোথায় চুরি করছে। কখনো দিনে, কখনো রাতে চুরি হচ্ছে। ফাঁকা বাসাতে চুরি হচ্ছে। দিনের বেলা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বেশি চুরি হয়। আর রাতে ফাঁকা বাসায় কাউকে স্পর্শ না করেই চুরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে মার্ডার কখনো বাড়ে কখনো কমে। আবার ডাকাতিও কখনো বাড়ে। ইদানিং ডাকাতির চেয়ে চুরি বেশি হচ্ছে। অপরাধীরা হয়তো মনে করছে চুরিটা বেশি নিরাপদ। চুরির পর ধরা পড়লেও দ্রুত জামিন পেয়ে যায়। তাছাড়া অল্প চুরির ঘটনায় থানায় রিপোর্টও করেন না অনেক ভুক্তভোগী।

তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে বড় বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ আগস্ট কলাবাগান থানার ডলফিন গলিতে একটি বাসার গ্রিল কেটে বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই বাড়ি থেকে ৭২ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ টাকা নিয়ে যায়। সেই চোরের দলকে তিনটি পিস্তল, গুলি, স্বর্ণ ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

কাউকে বল প্রয়োগ না করে যদি গ্রিল কেটে চুরি করা যায় সেটা তো অনেকাংশে তাদের জন্য নিরাপদ। তারা মোবাইলও ব্যবহার করে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো ডিভাইস বা অন্য কিছু স্পর্শ না করেই শুধু স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে চলে যায়, বলেন হাফিজ আক্তার।

চোর চক্রের নেতৃত্বে মাদারীপুরের ইউপি সদস্য আজিজুল

হাফিজ আক্তার বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে বাসা-বাড়ি ও দোকানে গ্রিল কাটা/তালা কাটা চোর চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার ও প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম আজিজুল হক ফকির (৪৭)। তিনি মাদারীপুরের শিরখাঁড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর বিভাগের কাফরুল থানা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি লোহার শাবল সাদৃশ্য (খুন্তি), একটি বোল্ড কাটার, দুটি মেট্রো-গ-১৩-৮৫৮৯ লেখা গাড়ির নম্বর প্লেট, একটি তালা, একটি বড় স্কু ড্রাইভার, ১২টি শাড়ি, একটি প্লাস, একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ১৭-৬৫৬৯), একটি মোবাইল ফোন, একটি প্রেসার মাপার যন্ত্র রাখার ব্যাগ, নগদ টাকা, হ্যান্ড ব্যাগ ও ৪৩৯ টাকার কয়েন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিএমপির কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

আজিজুলের নেতৃত্বে ঢাকায় ৫০০ চুরির ঘটনা

গ্রেপ্তার আজিজুল হক তার সহযোগী অন্যান্য আসামিদের তথ্য ও নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছে। আজিজুল হক আসামিদের সহায়তায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে রাতে গ্রিল কেটে অন্তত ৫০০টি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে।

ইউপি সদস্য আজিজুলের চক্রে চার চোর

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে হাফিজ আক্তার বলেন, এই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি চোর চক্র রয়েছে। তারা প্রাইভেটকার নিয়ে সারা ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ায়। তারা নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে প্রায়ই চুরি করে। তারা গ্রিল কাটা যন্ত্রাংশ তাদের সাথেই থাকে। ছোটখাটো যা পায় টার্গেট করে দ্রুত গ্রিল কেটে বা দরজা ভেঙে চুরি করে।

এক রাতে চার চুরি, স্ত্রীর জন্য কেনাকাটা

এক রাতে চোরটি চুরির ঘটনার পর চোর চক্র স্ত্রীদের জন্য কেনাকাটাও করে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, তারা চুরি শেষে বেনারশি পল্লীতে মিলিত হয়। সেখানে চোরচক্র তাদের স্ত্রীদের জন্য লেহেঙ্গা কেনে। যদি পছন্দ না হয়! সেজন্য তারা শাড়িও কিনে। আবার বলেও যায়, যদি পছন্দ না হয় তাহলে এসে পরিবর্তন করে নিয়ে যাবে। কতটা কনফিডেন্টলি তারা চলছিল!

চুরির ঘটনা কমাতে স্পেশাল ড্রাইভ

ছোট হোক বড় হোক চুরির ঘটনা কমাতে হবে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, চোর ও ছিনতাইয়ের ওপর স্পেশাল ড্রাইভ দেওয়া হচ্ছে। সবগুলো ডিভিশন ও ডিবি ড্রাইভ দিচ্ছে। কারণ এ ধরনের উপদ্রবে বিরক্ত সাধারণ মানুষ। আমরা আশ্বস্ত করব এসব ঘটনা কমবে। ইতোমধ্যে আজিজুল হাকিম গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বাকি সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি গ্রেপ্তারের রাতেই চারটি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। একটি মামলা মাদারীপুরে হয়েছে।

চোরের ডাটাবেজ তৈরিতে প্রতি থানায় নির্দেশ

চোরের ডাটাবেজ তৈরির জন্য প্রতিটি থানাতেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করছি, আমাদের পুলিশিং যেন বিশ্বমানের হয়। কোনো কোনো থানায় এখনো হাই ও ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে সংরক্ষণ করে তা ডাটাবেজে তুলে রাখা হচ্ছে। একবার কোনো চোর ডাটাবেজে ঢুকলে পরবর্তিতে জেল থেকে বের হলেও সে সার্ভিলেন্সে থাকবে। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। এটা প্রতিনিয়ত চলতে থাকবে। চোর ভাল হলেও ডাটাবেজ থেকে যাবে। হয়তো তার বিরুদ্ধে ভাল হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। অপরাধীদের ডাটাবেজ যদি স্ট্রং না হয় তাহলে পুলিশিংয়ে সমস্যা হয়।

বিষয়ঃ পুলিশ

Share This Article