চুইঝাল মশলাকৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:০৯, রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

খুলনার ঐতিহ্যবাহী মসলা চুুইঝাল মশলার কদর রয়েছে দেশজুড়ে। ভোজন রসিকদের জিভে পানি চলে আসে চুইঝাল দিয়ে রান্না করা গোশত শুনলেই। স্বাদ-ঘ্রাণ ও ওষধি গুণে সমৃদ্ধ জনপ্রিয় মশলা চুইঝাল। গরু, খাসি কিংবা হাঁসের গোশত চুইঝাল ছাড়া যেন জমেই না। ক্রেতাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এখন তৈরি হচ্ছে চুইঝালের পাউডার। এই মশলা রফতানি হবে থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে।

চুইঝালের বৈজ্ঞানিক নাম পিপার চাবা। এর গাছ পানের লতার মতো। পাতা কিছুটা লম্বা ও পুরু। পাতায় ঝাল নেই। গাছের কাণ্ড বা লতা মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। উঁচু জায়গায় চুইঝাল গাছ ভালো হয়। গোড়ায় পানি জমলে গাছ মরে যায়। গাছে ফুল-ফল হয়। বীজ থেকেও চারা হয়। তবে শিকড়সহ গিঁট কেটে লাগালে সহজে চারা হয়।

চুইঝালের রয়েছে নানা ওষধি গুণ। চিকিৎসকদের কথায়, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী। স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে। শারীরিক দুর্বলতা কাটায় এবং শরীরের ব্যথা সারায়। সদ্য প্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করে। চুই লতার সাথে আদা পিষে খেলে সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলে চুইঝাল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। অনেকেই চুইঝাল চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং খুলনায় গড়ে উঠছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট। নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে দূর দূরান্ত থেকে চুইঝাল দিয়ে রান্না সুস্বাদু গরুর গোশত খেতে অনেকেই আসেন। ডুমুরিয়ার চুকনগরের চুইঝাল দিয়ে রান্না গোশত বিক্রির আব্বাস হোটেলের নাম সারা দেশ জানে। খুলনা শহরের মধ্যে অন্তত ১০০টি এ ধরণের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

ঈদুল আযহার সময় চুইঝালের দাম বেড়ে যায়। আকার ও প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চিকন ডালের চেয়ে কাণ্ডের মোটা ডালের দাম বেশি। কাণ্ড যত মোটাই হোক, রান্নার পর তা গলে নরম হয়ে যায়।

খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও ছায়াময় উঁচু জমিতে সাধারণত চুই চাষ করা হয়। সাধারণ জমি চুইয়ের জন্য উপযুক্ত। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বর্ষায় বা বন্যায় যেন চুইঝাল গাছের গোড়ায় পানি না জমে।

তিনি বলেন, এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাস হচ্ছে দু’বার চুইঝালের লতা রোপণের উপযুক্ত সময়। বাণ্যিজিকভাবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। তারপর পলিব্যাগ থেকে চারা নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। চুইঝাল যেহেতু লতা জাতীয় তাই এর জন্য আরোহণের সাপোর্ট লাগে। চুই লাগানো বা রোপণের ১ বছরের মাথায় খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য ৫ থেকে ৬ বছর বয়সের গাছই উত্তম।

চাহিদা বাড়ায় চুইঝাল শুকিয়ে পাউডার করে তা বিক্রি করা শুরু হয়েছে। পাউডার করা হলে চুইয়ের স্বাদ পরিবর্তন হয় না। এই গুড়া মশলা শুধু দেশিয় বাজারেই নয়, যাবে বিদেশেও। প্রথমবারের মতো চুইঝালের গুড়া মশলা পাঠানো হচ্ছে থাইল্যান্ডে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চুইঝাল খুলনাঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে আমুল পরিবর্তন আনতে পারে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article