সহজে পাপমুক্ত হওয়া যায় রমজানে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:২৪, শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০

রমজানের পবিত্র দিনে বান্দা যখন কৃত পাপ থেকে তাওবা করেন, তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় বলে কুরআন-হাদিসে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য রমজানে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতিগফার ছিল নবি, সাহাবি ও বুজুর্গদের আমল।

মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। নবি-রাসূল ছাড়া কেউই নিষ্পাপ নয়। তবে পাপের ওপর অবিচল থাকা শয়তানের কাজ। মুমিন কখনো অপরাধ করে তাওবাহীন থাকতে পারে না। পাপমুক্ত জীবন গঠনের লক্ষ্যে তাওবা-ইসতিগফারে সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার মাস হওয়ায় স্বভাবতই রোজাদারের প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এ মাসে নিজেকে সহজে পাপমুক্ত রাখা যায়। রমজানে আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দার জন্য ক্ষমা, করুণা ও মুক্তির ডালি সাজিয়ে প্রতীক্ষা করেন, কখন বান্দা তার কাছে ক্ষমা চাইবে- সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষমা করবেন।

রমজানের পবিত্র দিনে বান্দা যখন কৃত পাপ থেকে তাওবা করেন, তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় বলে কুরআন-হাদিসে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য রমজানে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতিগফার ছিল নবি, সাহাবি ও বুজুর্গদের আমল।

হাদিস শরিফে এসেছে, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো।’ (বুখারি) আল­াহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করও, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। ফলে তিনি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি সুষম বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদের সম্পদে প্রাচুর্য ও সন্তানে বরকত দেবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা পানির ফোয়ারায় শোভিত করবেন।’ (সূরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)

‘তাওবা’ শব্দটির বাংলা অর্থ হলো ফিরে আসা। কোনো ভুলত্রুটি, অপরাধ বা পাপ কাজ থেকে ফিরে আসাকে শরিয়তের পরিভাষায় তাওবা বলা হয়। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) যে তওবা করেছিলেন, তা হলো- ‘হে আমাদের রব! আমরা জুলুম করেছি, আমাদের নফসের প্রতি, আপনি যদি ক্ষমা ও দয়া না করেন, আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা আরাফ, আয়াত: ২৩) অন্য হাদিসে এসেছে- ‘সকল আদম সন্তান পাপী, আর পাপীদের মধ্যে উত্তম হলো তাওবাকারীরা।’ (মুসলিম ও তিরমিযি)

তাওবা কবুল হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথম শর্ত, বান্দাকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, বান্দাকে কৃত গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হতে হবে। তৃতীয় শর্ত, আবারও গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। চতুর্থ শর্ত, অপরাধ যদি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে আগে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যেমন- কেউ যদি অন্যায়ভাবে কারও ধন-মাল বা বিষয়-সম্পত্তি জোরজবরদস্তি দখল করে নেয়, তবে তা ফেরত দিতে হবে। কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিলে অপরাধীকে নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করতে হবে, নতুবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। এমনকি কারও অনুপস্থিতিতে গিবত করলে সে ব্যাপারেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তাওবা কবুল করবেন না।

সিয়াম সাধনায় নিমগ্ন মুমিন মুত্তাকিদের উচিত রমজানে তাওবা ও ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কৃত অপরাধের জন্য নিজের মধ্যে অনুশোচনাবোধ সৃষ্টি করে আল্লাহতায়ালার কাছে বিগত দিনের গুনাহখাতা থেকে কায়মনে ক্ষমা চাওয়া। তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। তাওবা করার পর শয়তানের বা নফসের প্ররোচনায় তাওবা ভঙ্গ হয়ে গেলে করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে বার বার তাওবা করা যায়। তাওবা ভঙ্গ হয়ে গেলে মানুষ সাধারণত আবার তাওবা করতে লজ্জাবোধ করে বা অনেকে তাওবা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

উলামায়ে কেরাম বলেন, এটাও নফস ও শয়তানের ধোঁকা। রহমতের সাগর অসীম দয়ালু দাতা আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রতীক্ষায় থাকেন। তিনি তো একমাত্র ক্ষমাশীল। আল্লাহতায়ালা মোবারক এ মাসে আমাদের একনিষ্ঠ তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, আলমনগর, সাভার, ঢাকা।

Share This Article