সেই শিক্ষকের জবানবন্দি

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫৪, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তখন ক্লাসশেষে তাদের সাধ্যমত আপ্যায়ন করি। তখন তারা জিডি তুলার বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে বিষয়টা আমার হাতে নেই। আমাদের কাজ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করা এবং আমরা তাই করি। জিডির বিষয়ে প্রক্টর মহোদয় এবং অভিযোগকারীদের সাথে আলাপ করে নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দেই।

গত ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। মৃত্যুর আগে এই শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তার আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন। এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে পরদিন ১৬ মার্চ রাতে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে, অবন্তিকা আত্মহত্যার ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন দিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেন অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম। নিচে তার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো :

প্রথমত আমি একজন মানুষ, দ্বিতীয়ত আমি একজন শিক্ষক, তৃতীয়ত আমি দু’জন কন্যাসন্তানের বাবা। আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং প্রকৃত ঘটনা জানুন। দয়া করে আমার জীবনটাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে আমার সন্তানদের এতিম করবেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার অকাল মৃত্যুর জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি ও তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমাদের ছাত্রী অবন্তিকা এবং তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে প্রকৃত ঘটনা নিচে তুলে ধরলাম-
ঘটনা প্রায় দেড় বছর আগের। অবন্তিকার ব্যাচমেটরা কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে সেখানে অবন্তিকাও উপস্থিত ছিল। জিডিতে উল্লেখ করা হয় যে, কেউ একজন ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে তাদেরকে হয়রানি করে। পুলিশ তখন উচ্চতর তদন্তের আশ্বাস দিয়ে বলে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আইডিটা কে চালায় সেটা বের করে দেব। এই কথা শুনে অবন্তিকা থানা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে আসার পথেই তার বন্ধুদের কাছে স্বীকার করে যে, আইডিগুলো (ফেইক একাউন্টসগুলো) সে নিজেই চালায়। তখন তার বন্ধুরা তাকেসহ প্রক্টর অফিসে নিয়ে এসে অবন্তিকার বিরুদ্ধে গত ০৮.০৮.২০২২ তারিখে একটা লিখিত অভিযোগ দেয়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল আমাকে এবং সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহাকে (গণিত বিভাগ) গত ১১.০৮.২০২২ তারিখে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে গত ১৬.০৮.২০২২ তারিখে প্রক্টর মহোদয়ের উপস্থিতিতে আমি এবং সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহা- অবন্তিকা এবং তার অভিভাবকদের প্রক্টর অফিসে আসার জন্য আহ্বান করি। পরে অবন্তিকার মা মিটিংয়ে আসে- তখন অবন্তিকার ক্লাসমেইটসসহ (অভিযোগকারীরা) সবাই উপস্থিত ছিল। তখন অবন্তিকার মা ঘটনার সত্যতা শুনে বলেন যে, আমার মেয়ে যা করেছে ভুল করেছে, ঘটনার জন্য অভিযোগকারী সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে অবন্তিকা আর এই ধরনের কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, যদি করে তার দ্বায় আমরা নিবো। এবারের মত বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানান এবং বলেন, আমার মেয়ে ভালো শিক্ষার্থী কিন্তু সে কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ওষুধ খাচ্ছে।

তখন তার ব্যাচমেইটরা বিষয়টা মানবিক এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। এভাবে বিষয়টা প্রাথমিকভাবে মিমাংসা করা হয়। এরপর অবন্তিকার পরে তার মা-ও জিডিটা তুলে নেওয়ার জন্য অভিযোগকারীদের বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিযোগকারীরা জিডি তুলে নিতে অসম্মতি জানায়, কারণ তাদের ধারণা অবন্তিকা ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ আবারো করতে পারে।

তখন আর জিডিটা সাথে সাথেই তোলা সম্ভব হয়নি। অভিযোগকারীরা বলেন, আমরা তাকে আগামী ৩ মাস পর্যবেক্ষণ করবো এবং যদি অবন্তিকা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তাহলে আমরা ৩ মাস পরে জিডিটা তুলে নেব। ঝামেলা এখানেই প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়। এর কিছুদিন পরে অবন্তিকা ও তার মা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং আমাকে প্রক্টর অফিসে না পেয়ে আমার বিভাগে আসেন- তারা যেহেতু আমার এলাকার- তাই আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ আপ্যায়ণ করি। ওইদিন অবন্তিকার মা আমাকে জানান- অবন্তিকার হলের বন্ধুরা ওর সাথে ভালো ব্যবহার করছে না এতে অবন্তিকা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে।

 

তখন আমি তাদেরকে প্রক্টর অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরামর্শ দেই। তখন অবন্তিকার মা বলেন যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আর এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছি না- আমি আমার মেয়েকে হলে রাখবো না, এতে করে তার পড়াশুনা খারাপ হয়ে যাবে এবং সে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়বে। তখন আমি তাকে বলি, আপনি অভিভাবক যা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। যেকোনো প্রয়োজনে আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অভিযোগ নিস্পত্তির ৩ মাসেরও কিছুদিন পরে অবন্তিকা এবং তার বাবা-মা প্রক্টর অফিসে জিডি তোলার জন্য আসেন কিন্তু তার ব্যাচমেইটরা জিডি তুলতে অসম্মতি জানায়। তখন অবন্তিকার মা-বাবা এবং অবন্তিকা আবার আমাকে ফোন করে আমার বিভাগে দেখা করতে আসেন।

 

তখন ক্লাসশেষে তাদের সাধ্যমত আপ্যায়ন করি। তখন তারা জিডি তুলার বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে বিষয়টা আমার হাতে নেই। আমাদের কাজ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করা এবং আমরা তাই করি। জিডির বিষয়ে প্রক্টর মহোদয় এবং অভিযোগকারীদের সাথে আলাপ করে নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দেই। তৎক্ষনাৎ অবন্তিকার মা কিছুটা হতাশার ভাষায় বলেন, আমি দু’জন (অবন্তিকা এবং ওর বাবা)  ডিপ্রেশনের রোগীকে নিয়ে এত বছর সংসার করে আসছি। আমি নিজেও অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার মেয়েটা মারাত্মক ডিপ্রেশনে পড়ে গেছে। এরপরে অবন্তিকা ও তার পরিবারের কারো সাথে এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

মৃত্যুর পূর্বে ফেসবুকে দেওয়া অবন্তিকার স্ট্যাটাস নিয়ে বলতে চাই...
১/ প্রথমত আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, আম্মানকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ ঘটনা নিস্পত্তি হয় ১৬.০৮.২০২২ সালে। এরপর এই বিষয় নিয়ে আর কারো সাথে কোন আলোচনা হয়নি কখনো।

২/ প্রক্টর অফিসে অবন্তিকা এবং তার মাকে একবারই ডাকা হয়েছিল। সেই সময় প্রক্টর মোস্তফা কামাল, সহকারী প্রক্টর গৌতম সাহা এবং অভিযোগকারী তার বন্ধুরা উপস্তিত ছিলেন। একাধিকবার ডেকে হেনস্তা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কারণ বিষয়টি ওইদিনই মিমাংসা হয়ে গিয়েছিল।

৩/ সুইসাইড নোটে প্রক্টর অফিসে আম্মানের বিরুদ্ধে আনিত যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতির অভিযোগের বিচার না পাওয়ার বিষয়টি তৎকালীণ প্রক্টর মোস্তফা কামাল ভালো বলতে পারবেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই।

৪/ সুইসাইড নোটে আনিত অভিযোগ অবন্তিকাকে বহিষ্কার করার বিষয়ে পরবর্তীতে আমি কখনো কিছুই বলিনি। কারণ বিষয়টি মিমাংসা হওয়ার পরে অবন্তিকার সাথে বিগত দেড় বছরে একবারের জন্যেও অবন্তিকা বা তার পরিবারের সাথে আমার কোনো কথা বা যোগাযোগ হয়নি।

কিছুকথা...
১/ একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা এবং তাদের জন্য কাজ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। দীর্ঘ ১১ বছরের শিক্ষকতার জীবনে আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবো।
২/ শুধুমাত্র স্ট্যাটাসের উপর ভিক্তি করে কাউকে ভুল না ভাবার অনুরোধ রইল।
৩/ এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি সবিনয়ে প্রস্তুত। 
৫/ সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্য করার অনুরোধ রইল।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল একই পরিবারের ৩ জনের

বনানীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন

আবারও কমল সোনার দাম

৯ মে থেকে হজের প্রথম ফ্লাইট শুরু: ধর্মমন্ত্রী

তীব্র গরম থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে ইচ্ছেকৃত ভুল নাকি অপরিপক্কতা?

রোববার থেকে খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্ধ থাকবে প্রাক-প্রাথমিক

তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ নথি সই, চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান

চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর

দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, বিএনপি দেখে না: কাদের