রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ২৭ দফা, হিতে বিপরীতের আশঙ্কা !
‘হিতে বিপরীত’ বলে বাংলায় একটি প্রবাদ চালু আছে। এর মর্মার্থ হলো- ভালো কিছু করতে গিয়ে উল্টো ফল পাওয়া। গত শতাব্দীর শেষে তেমনই ঘটেছিল তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে। দেশটির তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে স্বচ্ছতা ও পুনর্গঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। তবে বাস্তবিক অর্থে এর ফল হিতে বিপরীত হয়েছিলো। জনসম্পৃক্ততা না থাকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছিলো।সংগঠন হিসেবে বিএনপির ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গর্বাচেভ ভেবেছিলেন, 'পেরেস্ত্রৈকা' বা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত প্রজাতন্ত্রগুলো রাষ্ট্রীয় স্বার্থে অধিকতর একাত্ম হবে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি আরও সংহত হবে। কিন্তু ফল হয়েছিলে উল্টো। এর ফলে ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত রাষ্ট্র কাঠোমো ভেঙে যায় এবং সেদিনই প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মিখাইল গর্বাচেভ।
সংস্কার যদি প্রাসঙ্গিক না হয় অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গ্রহণ না করে তাহলে সে সংস্কার চেষ্টা বিফল হতে বাধ্য। তেমনই একটি সংস্কারের প্রস্তাব হচ্ছে বিএনপির ২৭ দফা, যাকে ‘রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচি’ বলে অভিহিত করেছেন দলটির নেতারা।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি ছিলো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচি। আগে বিএনপি নেতারা ক্ষমতায় গিয়ে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা বলতেন। এখন তা থেকে বেরিয়ে বলছেন ২৭ দফার কথা। অথচ চরম বিরুদ্ধবাদীরাও এ কথা স্বীকার করবেন যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি একটি জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের আধুনিক দিকনির্দেশনা। তাহলে কেন বিএনপি নীতিনির্ধারকদের কাছে নতুন করে কথিত রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি ঘোষণা জরুরি মনে হলো? অনেকেই মনে করেন, বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও কর্মসূচি থেকে সরিয়ে নেওয়ার যে গোপন তৎপরতা দলটির ভিতরে চলছে, তারই বহিঃপ্রকাশ এ ২৭ দফা কর্মসূচি। বিএনপি এতদিন বলত, ‘শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি’। এখন তারা ২৭ দফা কর্মসূচিকে কার বলে প্রচার করবেন? এর মাধ্যমে কি কাউকে জিয়ার সমক্ষ হিসেবে জনসমক্ষে আনার চেষ্টা চলছে? অনেকেরই সন্দেহ ২৭ দফা শেষ পর্যন্ত বিএনপির গলার কাঁটা হয় কি না!
বিশ্লেষকরা বলছেন, গর্বাচেভের একক নীতি যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ২৭ দফাও বিএনপির জন্য তেমন সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। কারণ জিয়াকে আড়াল করার এ সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা দলটির সচেতন নেতা-কর্মীরা কখনো গ্রহণ করবে বলে মনে হয় না।