এখনো উত্তপ্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আরেক ছাত্রীর অভিযোগ ডিবিতে
বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আক্কাস বলেন, অবন্তিকা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্লাসে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতেন। তিনি বিচারক হতে চেয়েছিলেন। কয়েক দিন পর তার স্নাতকের ফল প্রকাশ হবে। এমন মেধাবী ছাত্রী চলে যাওয়ায় জাতি অনেক কিছু হারিয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে দাবি, এ ঘটনার সঠিক-সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার অকালমৃত্যু এবং ঘটনার সুবিচারের দাবিতে গতকাল শোক র্যালি ও মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগ। এ ছাড়া আইন বিভাগ আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শোকসভার আয়োজন করবে বলে জানিয়েছে।
একই সঙ্গে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় দুই দিন আইন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত শোক র্যালি ও মানববন্ধনে এই ঘোষণা দেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সরকার আলী আক্কাস। এর আগে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শোক র্যালি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘আজকে অবন্তিকা কালকে কে?’, ‘সুইসাইড নয়, টেকনিক্যাল মার্ডার’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান। বিভাগের শিক্ষক মেফতাহুল হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে বক্তব্য দেন। বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, তদন্ত চলাকালে আসামিদের যেন কেউ বের না হয়ে যায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর পরিবার যেন হয়রানি-চাপে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আইন বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা ও শিক্ষক আহমেদ এহসানুল বলেন, আমরা দ্রুত সময়ে প্রতিবেদন (তদন্ত প্রতিবেদন) চাই।সঠিক বিচার চাই।
বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আক্কাস বলেন, অবন্তিকা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ক্লাসে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতেন। তিনি বিচারক হতে চেয়েছিলেন। কয়েক দিন পর তার স্নাতকের ফল প্রকাশ হবে। এমন মেধাবী ছাত্রী চলে যাওয়ায় জাতি অনেক কিছু হারিয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে দাবি, এ ঘটনার সঠিক-সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
অবন্তিকার সহপাঠী সেতু পাল বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি অবন্তিকার এমন হবে। যে সব সময় বলত, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা জড়িত তারা বের হয়ে আসুক। এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন হাতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয় তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা নিপীড়কের গদিতে, আগুন জ্বালো-আগুন জ্বালো; নিপীড়কের কালো হাত, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও; ক্যাম্পাসে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে? নিপীড়কের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না; অবিলম্বে ফাইরুজ হত্যা, বিচার কর, করতে হবে; অবন্তিকা মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, শুধু কিছু আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। আমরা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত চাই। যে মামলাটি হয়েছে, সেখানে যেন প্রশাসন বাদী হিসেবে যুক্ত হয়।
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে আরেক ছাত্রীর অভিযোগ : শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। নিজ বিভাগের এক শিক্ষক ও বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তার। এ অবস্থায় তিনি গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) গিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান। বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ওই শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ২০২১ সালে তার বিভাগের এক শিক্ষক তাকে যৌন হয়রানি করেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করলে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।
রাজি না হওয়ায় তারা তাকে হাত-পা কেটে হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।