পোশাক চুরির দায়ে মৃত্যুদণ্ড!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:২৭, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩ পৌষ ১৪২৮
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

১৭০০ শতকের শুরুতে পোশাক চুরির ঘটনায় ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয়। পোশাকের জন্য খুন করার ঘটনা কম হলেও পোশাককে কেন্দ্র করে ঘটা অপরাধের সংখ্যা কম নয়।

 

পরিধেয় শার্টের মতো নিছক পার্থিব বিষয়কে কেন্দ্র করে কখনও খুন হতে  পারে? কেমন হতো যদি পরিধানের বস্ত্রাদি ভাড়া করে পরা অথবা বন্ধক রাখার চেয়েও দামি হতো? আধুনিক ইংল্যান্ডের শুরুর দিকে পোশাকের কারণে আক্ষরিক অর্থেই মানুষকে বহু মূল্য দিতে হতো। এমনকি পোষাকের জন্যে ক্ষেত্রবিশেষে কাউকে মেরে ফেলার মতো ভয়াবহ অপরাধও সংঘটিত হতো।

১৬৩৬ সালে জোয়ান বার্স নামক এক গৃহপরিচারিকা বিষাক্ত মারকিউরি (পারদ বিশেষ) কিনেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, দুধের পাত্রে পারদ মিশিয়ে তা গৃহকর্ত্রীকে খাওয়ানো। সেই গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর তার দামি জামাগুলো পরার আশা করেন জোয়ান।

সেসময় একটি সাধারণ মানের এক পাউন্ড মূল্যের কোট তৈরী করতে একজন দক্ষ ব্যবসায়ীরও ২০ দিন সময় লাগতো। এমনকি কারো উইল তৈরীর সময় পোশাকের বিষয়টি শুরুতেই বিবেচনা করা হতো; যেহেতু ঘরবাড়ির চাইতেও পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল তুলনামূলক দামী।

বিখ্যাত ইংরেজ নৌ-প্রশাসক স্যামুয়েল পেপিসের মতো সচ্ছল ব্যক্তিরাও নতুন পোশাক না কিনে পুরনো পোশাকই জোড়াতালি দিয়ে পরতেন।

ব্যবহৃত পোশাকের কালোবাজার তখন বেশ জমে উঠে। এসব বাজারে হকাররা নতুন এবং পুরাতন উভয় প্রকারের পোশাকই বিক্রি করতেন। সাধারনত চুরিকৃত মালামাল পুরাতন পোশাকের বাজারে চলে যেতো। ফলে, এধরণের চুরির পোশাক ফিরে পাওয়া খুবই দুরূহ বিষয় ছিল। এমনকি পোশাকের এই বিরাট চাহিদা পূরণের জন্য নিত্য-নতুন অপরাধ সংঘটিত হতে শুরু করে।

তৎকালীন সমাজে স্থানীয় লোকেরা প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় রাতে ঘরে ফিরতেন; চোরেরা যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকতো। অনেকসময় মাতাল ব্যক্তিদের পোশাক কেড়ে নিতো চোরেরা। আবার কখনও দেয়াল ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে পোশাক চুরি করতো তারা। এমনকি কেউ বাড়ির উঠানে লিনেন কাপড়ের তৈরী পোশাক শুকাতে দিলেও সেটি চুরি হয়ে যেত নিমিষেই।

একবার এক বালককে বলা হলো কিছু পোশাক নিয়ে তা একজন ভদ্রলোককে পৌছে দিতে। সে রাস্তায় বের হলে এক নারী গল্পের ছলে বালকের পারিবারিক তথ্য জেনে নেয়। এরপর মহিলা ও তার সহযোগী কৌশলে বালকটিকে মাংস এনে দিতে অনুরোধ করে। বালকটি সরল মনে মহিলার কাছে তার হাতের কাপড়গুলো দিয়ে মাংস আনতে গেলে সেগুলো নিয়ে চম্পট হয় ঐ নারী ও তার সহযোগী।

সেসময় সমাজের কোনো স্তরের মানুষই পোশাক চুরির থেকে রেহাই পেতেন না। এলিজাবেথীয় যুগের অন্যতম তারকা ব্যক্তিত্ব ক্লাউন রিচার্ড টার্ল্টনও একবার এই চুরির কবলে পড়েছিলেন। একরাতে বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডারত অবস্থায় তার বাসার সব পোশাক চুরি হয়ে যায়। এজন্য তাকে মঞ্চেও হাসি-ঠাট্টার শিকার হতে হয়েছে অনেকবার।

তবে, অধিকাংশ নাগরিকেরই নির্দিষ্ট পোশাক থাকায় এসব চুরির ঘটনায় সাক্ষীগণ বেশ দ্রুতই দোষীকে শনাক্ত করতে পারতেন। প্রত্যেকের পোশাক সম্পর্কে কমবেশি সকলেই পরিচিত ছিল। যেমন, একবার এক ব্যক্তি তার লাল কোট এবং ছিদ্রযুক্ত বড় টুপির কারণে চুরির পরে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। এজন্য তখন কেউ নতুন পোশাক পরলেও তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো।

১৭০০ শতকের শুরুতে পোশাক চুরির ঘটনায় ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয়। পোশাকের জন্য খুন করার ঘটনা কম হলেও পোশাককে কেন্দ্র করে ঘটা অপরাধের সংখ্যা কম নয়। পোশাক চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের 'টাইবার্ন' গাছে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান শুরু হয় তখন।

আসামীদেরকে প্রথমে কয়েকদিন কারাগারে রাখা হতো। মৃত্যুদণ্ডের দিন কারাগার থেকে টাইবার্ন গাছ পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়ির পেছনে বেঁধে তাদেরকে জনতার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। হাস্যকর হলেও সত্যি, এই উন্মত্ত জনতার ভীড়েই পকেটমারদের আখড়াও থাকতো।

১৬-১৭'শ শতকের নাগরিকদের সাথে পোশাকের খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ক নিমিষেই বোঝাটা কঠিন। তখন অধিকাংশ নাগরিক একাধিক পোশাক কেনার ক্ষমতা রাখতেন না। তবে, বর্তমান সময়ের মতো তখনও পোশাক সামাজিক মর্যাদার পরিচায়ক ছিলো।

সূত্র: হিস্টোরি টুডে 

Share This Article