ঢাবি ক্যাম্পাস ফুড: যে খেলো সে পস্তাল, যে না খেলো সেও পস্তাল!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:১৯, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৩ পৌষ ১৪২৮
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

১০ টাকায় এতকিছু 'পৃথিবীর ইতিহাসে' কোথাও পাওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সেখানে নিশ্চিতভাবেই পাওয়া যায়। শুধু তাই তো না! মাত্র এই ১০ টাকার প্যাকেজের বাইরেও আছে অনেক কিছু, তা নিয়েও কোনো বিতর্ক নেই।

 

প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী যেখানে নিয়মিত অবস্থান করে, সেখানে প্রয়োজনের তাগিদেই বেড়ে উঠেছে অনেক ক্যান্টিন, রেস্তোরাঁ ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। ছয়শ একরের এই ক্যাম্পাসে খাবারের দোকানগুলোর বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। কদবেলের ভর্তা থেকে শুরু করে ফাস্টফুড- একটু ঘোরাঘুরি করলে প্রায় সবই পাবেন এখানে।

তবে এসব খাবারের পুষ্টিমান তো বটেই, কতোটুকু স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তুলতেই পারেন। নিয়মিত এসব খাবার খেলে কেউ কেউ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হলেও হতে পারেন। তারপরও ভোজনরসিক মনকে চোখ ঠাওরে লাভ নেই। স্ট্রিট ফুডে এই ঝুঁকি থাকবেই। তাই মুখরোচক খাবারের স্বাদ চেখে দেখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা কষ্টসাধ্য। এবং এটি যার যার নিজেরও সিদ্ধান্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এই খাবার প্রতিদিনের অনুষঙ্গ, কাজেই একে এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। তারচেয়ে চেখে দেখাটাই অনেক বেশি আনন্দের। রসনা পরিতৃপ্ত হবেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে পা রাখতেই দেখবেন একগাদা ভ্রাম্যমাণ দোকান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পানিপুরি, ভেলপুরি, কাবাব-পরোটা, মোমো, ভাজাপোড়া থেকে শুরু করে শীতের পিঠা- সব পাবেন এই টিএসসি চত্বরেই।

টিএসসির সীমানা প্রাচীর ঘিরে আছে বেশ কিছু চায়ের দোকান। এখানে বসে দুধ চা, মাল্টা চা কিংবা হালের অপরাজিতা চা হাতে আড্ডায় বসে যেতে পারেন। চাইলে দোকানি মামার কাছে আবদার করতে পারেন কফি চা, মাল্টোভা চা, পনির চা, বাদামের চা বা মরিচ চায়েরও। সব রকম চা-ই পাবেন। এসব চায়ের দাম ছয় টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।


টিএসসি থেকে লাইব্রেরির দিকে এগোনোর পথে প্রথমেই পড়বে মিলন চত্বর। এ চত্বরের দোকানগুলোয় আলু, চিকেন চপ, টোস্টের মতো খাবার ছাড়াও বিকালে পাবেন হালিম। এক বাটি হালিমের দাম ৪০ টাকা, অনেকে বলে থাকেন নামীদামী দোকানের হালিমের থেকে এই হালিমের স্বাদ নাকি একেবারেই ভিন্ন।

লাইব্রেরির দিকে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে মণ্ডা-মিঠাই, সন্দেশের ছোট পসরা। হরেক রকমের মিষ্টির এই সম্মেলনে পেতে পারেন শনপাপড়ির মতো দুষ্কর মিষ্টান্নও।

এরপর সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দিকে এগোলে আছে ক্যাফে হাট। আপনার ফাস্টফুডের চাহিদা মেটাবে এই উন্মুক্ত রেস্টুরেন্ট।

এর একটু পাশেই কলাভবন ক্যাফেটেরিয়া- যা ডাকসু ক্যাফে নামেই বেশি পরিচিত। এখানে নাস্তার আইটেমের মধ্যে আছে সিঙ্গারা, প্যাটিস, চায়ের সেই দশ টাকার প্যাকেজ।

ডাকসু-কলাভবনের সামনের পুরো পথ ধরেই বসে কিছু ভর্তার ভ্যান। শীতের মৌসুমে এখানে পাবেন এক ধরনের স্পেশাল কদবেল ভর্তা। এছাড়া এখানে সারাবছরই পাওয়া যায় পেয়ারা, আমড়া, জলপাই, কাঁচাকলাসহ বিভিন্ন ফলের মিশ্রণে এক ধরনের ভর্তা।

কলাভবনের মূল ফটক পেরিয়ে ক্যাম্পাস শ্যাডোতে পাওয়া যায় বিখ্যাত লুচি-ডাল। বিকাল চারটার পর থেকে শুরু হয় এ নাস্তার পর্ব। কার্জন হলের সামনেও বসে মন্ডা-মিঠাই-আচারের পসরা। আছে কাবাবের কার্টও।

এছাড়া, পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই পাওয়া যাবে পানিপুরি, ভেলপুরি। সাধারণ পানিপুরি-ভেলপুরির মতো স্বাদ হলেও, অনেকে শুধু এই খাবারের স্বাদ নিতেই ছুটে আসেন ক্যাম্পাস এলাকায়।

টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনেও আছে কিছু ভাজাপোড়ার দোকান। চারুকলার সামনের গেটে বিকেল থেকে চিকেন ফ্রাই ভাজার পর্ব শুরু হয়, বেসনের আবরণের ভেতরে ছোট্ট এক টুকরো মুরগি দেখে আপনার ভ্রূঁ কুঁচকে উঠলেও মনে রাখবেন বাজারে ব্রয়লারের মুরগীর দাম কিন্তু  ১৮০ টাকা কেজি। তাই হয়তো ১০ টাকায় মুরগীর স্বাদ পেতে এখানে ভিড় লেগেই থাকে ।

কথায় আছে 'দিল্লির লাড্ডু যে খেলো সে পস্তাল, যে না খেলো সেও পস্তাল'। ঢাবি এলাকার স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও এ কথাটি ভালোভাবেই খাটে। যেকোনো স্ট্রিট ফুডের মতো এখানকার স্ট্রিট ফুড খেলেও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে এক জায়গায় খাবারের এমন বৈচিত্র্যে হয়তো ঢাকার আর কোথাও পাবেন না। চলতে-ফিরতে সামনে পড়ে যাওয়া এসব খাবারের লোভ সামলানোটাও কঠিন।

ঢাবি এলাকার স্ট্রিট ফুড একটু দেখেশুনে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভাপা পিঠা বা চিতই পিঠা আপনারা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এগুলোতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। আর ভাজাপোড়া খাওয়ার আগে দেখে নিবেন কেমন তেলে ভাজা হচ্ছে। যদি পুরনো তেল হয়ে থাকে, তাহলে সে খাবার ক্ষতিকর।" 
 

টিবিএস বাংলা

বিষয়ঃ খাদ্য

Share This Article