সভরিন বন্ড নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাংলাদেশ !
![সভরিন বন্ড নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বাংলাদেশ !](/Uploads/Images/News/2022/4/Image-10135-20220426102515.jpeg)
সভরিন বন্ড ঋণের প্রলোভনে পা বাড়িয়ে বিপর্যয় ঘটেছে আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশের। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে এই বিপর্যয় এড়িয়েছে বাংলাদেশ।
বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণকে বলা হয় সভরিন বন্ড। আমদানি নির্ভর দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হলে সভরিন বন্ড ইস্যু করা হয়। আবার বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের মূলধন সংগ্রহের জন্যও এ ধরনের বন্ড ইস্যু করা হয়।
এক দশক আগে বাংলাদেশে ‘সভরিন বন্ড’ ছাড়া নিয়ে ব্যপক আলোচনা শুরু হয়। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ‘সভরিন বন্ড’ ছাড়া নিয়ে কথা ওঠে। তবে সে সময় সভরিন বন্ড ইস্যু না করার রক্ষণশীল পথে হেঁটেছিল বাংলাদেশ।
স্ট্যান্ডার্ন্ড চার্টার্ড ব্যাংক, যুক্তরাজ্যভিত্তিক লয়েডস ব্যাংক, মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস ও জেপি মরগানসহ বেশ কয়েকটি সংস্থাও দীর্ঘদিন ধরেই সভরিন বন্ড ছাড়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছিল। তারা বন্ড ইস্যু করার অনুরোধ জানিয়েছিল সরকারকে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় ধরনের কোনো প্রকল্পের জন্য অর্থের প্রয়োজন নেই। এ বন্ড ইস্যু করার সময় এখনো আসেনি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আলোচনা করা হবে।
দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সভরিন বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ঋণ নেয়া হলে এখন তা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠত। দেশের অর্থনীতি এমনিতেই আমদানিনির্ভর। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও শিল্প কাঁচামালের দাম এখন বাড়তির দিকে। এ ধরনের পরিস্থিতি রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। তার ওপর সভরিন বন্ডের দায় থাকলে এর চাপ বাংলাদেশের জন্য আরো অনেক ভারী হয়ে উঠতো।
কিন্তু বাংলাদেশ বন্ড ইস্যু না করে যে সঠিক কাজটিই করেছিলো, তার প্রমাণ পাওয়া যায়, শ্রীলঙ্কা, গ্রীস ও ইন্দোনেশিয়ার দিকে তাকালে।
এক দশক আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে সভরিন বন্ড ছেড়ে বিপুল সাড়া পেয়েছিল শ্রীলংকা। ২০০৭ সালে ৫০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড ছেড়ে দেড়শ কোটি ডলারের বেশি ক্রেতা পেয়েছিল দেশটি। এরপর থেকে সভরিন বন্ডের ওপর নির্ভর করেই বিকশিত হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি।
কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ আয় এ বন্ডের ঋণ বা ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। ঋণ শোধ করতে না পেরে বাজারে নতুন বন্ড ছেড়েছে শ্রীলংকা। এভাবেই এক দশক ধরে নতুন বন্ড ছেড়ে পুরনো বন্ডের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে দেশটিকে। শেষ পর্যন্ত সভরিন বন্ডের ফাঁদই শ্রীলংকাকে টেনে নিয়েছে দেউলিয়াত্বের দিকে।
সভরিন বন্ডের ফাঁদে পড়ার আরেকটি বড় নজির হলো গ্রিস। ২০০৮-পরবর্তী সময়ে দেশটিতে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হয়েছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। শুধু শ্রীলংকা বা গ্রিস নয়, সভরিন বন্ড ঋণের প্রলোভনে পা বাড়িয়ে বিপর্যয় ঘটেছে আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশের। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে এই বিপর্যয় এড়িয়েছে বাংলাদেশ।