মনে রাখেনি কেউ নন্দিত নির্মাতা তারেক মাসুদকে!
![মনে রাখেনি কেউ নন্দিত নির্মাতা তারেক মাসুদকে! নন্দিত নির্মাতা তারেক মাসুদে](/Uploads/Images/News/2021/12/Image-557-20211206060359.jpeg)
নন্দিত নির্মাতা তারেক মাসুদের ৬৫তম জন্মদিনে নেই কোন আয়োজন।
আজ (৬ ডিসেম্বর) নন্দিত নির্মাতা তারেক মাসুদের ৬৫তম জন্মদিন । ১৯৫৬ সালের এই দিনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই নির্মাতা।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রের এই পথিকৃৎ।
তারেক মাসুদকে নিয়ে এবার কোন আয়োজন থাকছে না বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুতে তারেক মাসুদের জন্মদিন আয়োজন বাতিল করা হয়েছিল।
জন্মদিন নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি, মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন নিয়মিত আয়োজন করে। তাদেরও এবার কোনও কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়নি।
তারেক মাসুদ প্রখ্যাত বাংলাদেশি শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের ওপর নির্মাণ করেন ‘আদম সুরত’ নামের প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ কাজটি করতে লেগেছিল সাত বছর। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলকে নিয়ে ‘মুক্তির গান’। ১৯৭১ সালে মার্কিন নির্মাতা লেয়ার লেভিনের ক্যামেরাবন্দি ফুটেজের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংরক্ষণাগার থেকে নেওয়া ফুটেজ জুড়ে দিয়ে এই ছবিটি নির্মাণ করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটির জন্য তিনি ১৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। ছবিটি তার শৈশবে মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত। এটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। এটি কান সিনেমা উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং ‘একটি দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের হৃদয়স্পর্শী ও স্বচ্ছ উপস্থাপনা’র জন্য তারেক মাসুদ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট লাভ করেন। এই ছবির জন্য তিনি ২৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও লাভ করেন। এছাড়া মারাকেচ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ক্যাথরিন মাসুদের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করেন ও গোল্ডেন স্টারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং কেরালা চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন ক্রো ফিজেন্ট পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ছবিটি বাংলাদেশ থেকে অস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র শাখায় নিবেদন করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র (প্রথমটি ‘জাগো হুয়া সাভেরা’) এবং প্রথম বাংলাদেশি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র ছিল ‘মাটির ময়না’।
তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) দুটি প্রজন্মকে তুলে ধরেছে সেলুলয়েডে, যারা বাংলাদেশ থেকে লন্ডন চলে যায় এবং পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসে। ২০১০ সালে তিনি দেশে ছড়িয়ে পড়া জঙ্গিবাদ ও এর প্রভাব নিয়ে নির্মাণ করেন ‘রানওয়ে’। এতে দেখানো হয় এক যুবককে ইসলামী শিক্ষার আড়ালে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার গল্প। ছবিটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। তারেক মাসুদের শেষ অসম্পূর্ণ কাজ ‘কাগজের ফুল’। ছবিটি ভারত বিভাগের গল্প নিয়ে। এটি ‘মাটির ময়না’র পূর্ববর্তী পর্ব হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তারেক মাসুদ। যদিও তার আগেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটেছে তার অকাল প্রস্থান।
বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তারেক মাসুদ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকী ও পত্রিকায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখিও করতেন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীর। তারেক ও মিশুককে বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। তাতে তারেক-মিশুকসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন। তারেকের মৃত্যুর পর তার বাকি কাজটুকু এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ।