পৃথিবীতে এই বস্তু এলো কোথা থেকে

হীরার খনিতে নতুন পদার্থ!

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৫৯, রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
হীরার মতোই চকচকে
হীরার মতোই চকচকে

হীরার (Diamond) খনিতে তো হীরাই থাকবে, আর সেটা তো সবারই জানা। কিন্তু হীরে পেতে গিয়ে খননকাজে এ কী উঠে এলো খনি থেকে! যা দেখে বিজ্ঞানীরাই চমকে উঠলেন। তাদের ভাষ্য; এই বস্তু তো পৃথিবীতে পাওয়ার কথাই নয়। তাহলে এলো কোথা থেকে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর তারা জানতে পেরেছেন, বস্তুটি আসলে ক্যালসিয়াম সিলিকেট- পারভস্কাইট (CaSiO3-perovskite)। অত্যধিক চাপে কেলাসিত হয়ে এই পদার্থ তৈরি হয় সাধারণভাবে। আর সেখানেই খটকা। পৃথিবীতে এত চাপের উৎস কী? আফ্রিকার বৎসওয়ানার খনি থেকে উদ্ধার হওয়া আটকোণা পদার্থটি দেখে তারই উত্তর খুঁজতে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।

ভূ-অভ্যন্তরে প্রবল পরিমাণ চাপ, তাপমাত্রা। সাধারণত আগ্নেয়গিরির গর্ভ এতটা চাপ-তাপের উৎসস্থল। সেখানে ক্যালসিয়াম, সিলিকন কেলাসিত হয়ে এ ধরনের পদার্থের জন্ম দিতে পারে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ক্যালসিয়াম সিলিকেট যে রাসায়নিক গঠনযুক্ত (Chemical composition) বস্তু খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তা অতি বিরল।

হীরার মতোই চকচকে নতুন রত্নের নাম তারা দিয়েছেন- ডাভেমাওইট (Davemaoite)। বিখ্যাত ভূপদার্থ বিজ্ঞানী হো-কাংয়ের (ডাভে) নামানুসারে এই নামকরণ। এই বস্তুটি ভূপৃষ্ঠ কিংবা সাধারণ খনির গভীরতায় পাওয়া যাবে না, এমনই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এবার হীরার খনি থেকে ডাভেমাওইট প্রাপ্তি সেসব পূর্বাভাস মিথ্যে করে দিল।

আমেরিকার নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকরা এ নিয়ে গবেষণা কাজে নেমেছেন। ডাভেমাওইটের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এটি আসলে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের (Uranium) একটি আইসোটোপ। এর মধ্যে থোরিয়াম, পটাসিয়ামের ধর্মও বিদ্যমান।

বলা হচ্ছে, এই ডাভেমাওইট আসলে এমন তিনটি পদার্থের সংমিশ্রণ, যা ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী মৌলের জন্ম দেয়। বৎসওয়ানার ওরাপা খনি থেকে উদ্ধার হয়েছে আটকোণা বড়সড় একটি হীরকখণ্ড।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির খনি বিজ্ঞানী জর্জ রসম্যান নিজে আলাদা করে ডাভেমাওইটের অংশবিশেষ নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেন।

ইন্টারন্যাশনাল মাইনরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কমিশন অফ নিউ মিনারেলস, নমেনক্লেচার অর্থাৎ রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে, শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী নতুন মৌলের নামকরণ করার দায়িত্ব যে সংস্থার ওপর, তারা আপাতত এই বিরল হীরকখণ্ডটিকে ‘রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট’ বা পৃথিবীর বিরল উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এত পরিমাণ চাপ ও তাপমাত্রায় এই মৌলটি নিজের গঠন ধরে রাখতে নাও পারে। অর্থাৎ এর মৌলিক গঠন ভেঙেচুরে যেতে পারে। এখন যা হীরকখণ্ডের আকারে দেখা যাচ্ছে, সেটা পরবর্তীতে ভেঙে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।

Share This Article