আইনস্টাইনের ‘থিওরি অভ হ্যাপিনেস’, সুখের রহস্য উন্মোচন করেছেন মাত্র ১৭ শব্দে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:০০, বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
আইনস্টাইন
আইনস্টাইন

২০১৭ সালে এক নিলামে আইনস্টাইনের 'থিওরি অভ হ্যাপিনেস' লেখা ওই চিরকুট বিক্রি হয় সাড়ে পনেরো লাখ ডলারে।

আলবার্ট আইনস্টাইন সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্বের জন্য। তবে তিনি কিন্তু স্রেফ সময় আর স্থান নিয়ে গবেষণাতেই মগ্ন থাকেননি। তার আগ্রহ ছিল মানবমনের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়েও।

 

নিয়মিতই সুখ নিয়ে কথা বলতেন আইনস্টাইন। ১৯৩১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মানুষ কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি চায়। তার জবাব ছিল, 'সুখ'।

প্রকৃত সুখী জীবন কীসে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্যগ্র ছিলেন এই মহান বিজ্ঞানী। সেই অনাদিকাল থেকে প্রতিধ্বনিত হওয়া এই প্রশ্নের উত্তর কি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন?

হ্যাঁ, পেয়েছিলেন। এবং সেই উত্তর তিনি লিখেও রেখেছিলেন, মাত্র ১৭টি শব্দে।

সাড়ে পনেরো লাখ ডলার মূল্যের ১৭ শব্দ

১৯২২ সালে আইনস্টাইন জাপানে যান। উদ্দেশ্য, বেশ কয়েক জায়গায় বক্তৃতা দেওয়া। তার এক বছর আগেই জিতেছেন নোবেল পুরস্কার। জাপানে গিয়েও আইনস্টাইনের সুখ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব অন্বেষণ বন্ধ হয়নি।

জাপানে থাকাকালে একদিন হোটেলের বেলবয়কে টিপস না দিয়ে নিজের স্বাক্ষর সংবলিত দুটো চিরকুট দিলেন আইনস্টাইন।

একটি চিরকুটে জার্মান ভাষায় লেখা: 'প্রচণ্ড অস্থির চিত্ত নিয়ে সাফল্যের পেছনে ছুটে চলার চেয়ে শান্ত ও বাহুল্যবর্জিত একটা জীবনই অনেক বেশি সুখের।'

এই একটা চিরকুটের দামই যে মিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে উঠবে, তা কি খোদ আইনস্টাইনও কল্পনা করে উঠতে পেরেছিলেন? কালের পরিক্রমায় সেই চিরকুটটি রয়ে গেছে ওই বেলবয়ের বংশধরদের কাছে। ২০১৭ সালে এক নিলামে ওই চিরকুটটি বিক্রি হয় সাড়ে পনেরো লাখ ডলারে।

সুখের ব্যাপারে আইনস্টাইন কি ঠিক বলেছিলেন?

গত শতাব্দীর সেরা মস্তিষ্কটি আরও অনেক মনোবিজ্ঞানীর আগেই সুখের ব্যাপারে বেশ কিছু জিনিস বুঝে ফেলেছিল। সুখ-সংক্রান্ত যে জিনিসটি আইনস্টাইন সবার আগে ধরতে পেরেছিলেন, তা হলো সুখের নিজস্ব কোনো সংজ্ঞা নেই। কখনও কখনও লোকে সাময়িক আনন্দ বলতে চকলেট খাওয়া কিংবা পোষা পশুপাখিকে আদর করাকে বোঝায়। অন্য সময় সুখ বলতে লোকে বোঝে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অর্জনের মাধ্যমে পাওয়া তৃপ্তি বা সন্তুষ্টিকে অথবা নিজের মূল্যবোধ নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারাটাকে।

এই দুই ধরনের সুখ প্রায়ই সাংঘর্ষিক। বড় স্বপ্নের পেছনে ছোটা এবং নৈতিক সংকট নিয়ে টানাপড়েনে ভোগাটা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আবার সুন্দর জিনিস কিনতে বা পোষা পশুপাখিকে আদর করতে ভালো লাগলেও, সেই ভালোলাগা স্বল্পস্থায়ী। ওই স্বল্প সময়ের ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে সারা জীবন কাটানো যায় না।

এছাড়াও মানসিক অবস্থাও সুখের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাজেই বলা যায় যে, সুখের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। আর কোন ধরনের সুখের পেছনে ছুটব, তা আমাদেরকেই বেছে নিতে হবে। আইনস্টাইন এই বিষয়টি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণেই তিনি চিরকুটে দুটো সম্ভাব্য পথের কথা বলেছিলেন—সন্তুষ্টি বা শান্ত অথবা সাফল্য।

আইনস্টাইন ও সুখবাদ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইনস্টাইন কি ঠিক পরামর্শ দিয়েছিলেন? সেটা সম্ভবত খানিকটা একজন ব্যক্তির স্বভাবের ওপর নির্ভর করে। ইলন মাস্কের মতো মানুষ শান্ত, নিস্তরঙ্গ জীবনে সুখ খুঁজে পাবে, এমনটা কিন্তু কেউ কল্পনাও করতে পারে না।

তবে আইনস্টাইনের সুখের এই দাওয়াইকে সুখবাদের আধুনিক ধারণা মোটাদাগে সমর্থন করে। মনোবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক টি. ম্যাকআন্দ্রে বলেছেন, সুখী হব, এই আশায় আমরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, লক্ষ্য অর্জনের পর কদিন সুখে কাটালেও আমরা ফের সেই আগের অবস্থানেই ফিরে যাই। আবারও সুখলাভের আশায় নতুন লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে শুরু করি।

আইনস্টাইনও এই ব্যাপারটা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তিনি 'সাফল্যের পেছনে ছোটা'কে 'প্রতিনিয়ত অস্থিরতা'র সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন।

সুখী হতে হলে

সুখ জিনিসটা অনেকটাই ভারসাম্যের খেলা। সুখলাভের জন্য মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম শেষতক আমাদের নিঃসঙ্গ করে ফেলে। তাছাড়া সুখ নির্ভর করে জীবনের উন্নতিকে আমরা কোন দৃষ্টিতে দেখছি, তার ওপর।

তবে আইনস্টাইনের 'সুখের তত্ত্ব'টা মনে রাখলে আমরা সবাই-ই এ থেকে উপকার পেতে পারি। সুখের ধারণাটা অত সরল নয়। আমাদের একেকজনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেক রকম। তবে সংজ্ঞা যেমনই হোক, সুখের পেছনে মাত্রাতিরিক্ত ছোটাছুটি না করাটাই উত্তম। এই ব্যাপারটা সেই ১৯২২ সালেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। এখন উপলব্ধি করার পালা আমাদের।

Share This Article