রিকশা
জনপ্রিয়তার উৎস ও আবিষ্কারের গল্প

রিকশা আবিস্কার হয়েছে জাপানে, পেটেন্ট পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, নানাভাবে সংস্কার হয়েছে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে রিকশার দেশ হয়েছে বাংলাদেশ, রিকশার শহর হয়েছে ঢাকা। শুধু তাই নয়, গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ২০১৪ সালের ২২শে নভেম্বর ঢাকাকে রিকশার নগরী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জের এক পাট কোম্পানি রেলি ব্রাদার্সের এক কেরানী যদু গোপাল দত্ত কলকাতা থেকে একটি রিকশা নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই রিকশার শুরু। এর আগে পূর্ববঙ্গে কেউ রিকশা দেখেননি।
এরপর তার দেখাদেখি অনেকেই রিকশা আনতে শুরু করেন। এরপর ঢাকা পৌরসভা ১৯৪১ সালে রিকশার লাইসেন্স দিতে শুরু করে। পৌরসভার রেকর্ড মতে ১৯৪৪ সালেও ঢাকায় রিকশার সংখ্যা হয় ৩৭টি।
ঢাকার প্রথম রিকশাটি ছিলো প্যাডেলে। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথমদিকে কয়েকটি হাতে টানা রিকশাও ঢাকায় আনা হয়েছিলো। কিন্তু মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় ঢাকার পৌরসভা সেটি নিষিদ্ধ করে। কারণ গরু বা ঘোড়ার গাড়ির পশু যেভাবে গাড়ি টেনে নিয়ে যায়, মানুষকেও সেভাবে রিকশাটি টানতে হতো।
মানব-চালিত মানববাহী এই বাহনটি বাংলাদেশের বাইরে আর কোন দেশেই এতো পরিমাণে নেই। বর্তমানে শুধু ঢাকা শহরেই রিকশা আছে ১৫ লাখ। আর সারাদেশে কত আছে তার কোন হিসেব নেই। ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষ এখনও নিয়মিত চলাচলের ক্ষেত্রে রিকশার ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৫০ সালের আগেই বেশিরভাগ দেশ থেকে রিকশা উঠে গেলেও বাংলাদেশে কেন এখনও রিকশা রয়ে গেছে?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে রিকশা রয়ে যাওয়ার মূল কারণটিই অর্থনৈতিক। এ দেশে প্রতিবছর নদীর গর্ভে বিলিন হয় লাখো মানুষের পরিবার। এছাড়াও নানান কারণে বেকার হয়ে যাওয়া মানুষ প্রাথমিক আয়ের জন্য বেছে নেয় রিকশা।
রিকশার লাইসেন্স লাগলেও রিকশা চালাতে কোনও লাইসেন্স লাগে না। যে কেউ ইচ্ছে করলেই একটা রিকশা নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে ধনী গরিব সবাই রিকশায় চড়েন। কাছাকাছি কোথাও যেতে রিকশার জুড়ি নেই। আর অন্যান্য যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় রিকশাতেই ভরসা করেন সাধারণ মানুষ। তাই বিভিন্ন দেশে রিকশা কমলেও বাংলাদেশে এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এই বাহনটি।