যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সাফল্য

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:১০, রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৪.২ বিলিয়ন পাউন্ড সহযোগিতা করছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। দেশটিতে চতুর্থ বৃহৎ শিল্প হিসেবে রূপ পেয়েছে বাংলাদেশিদের ‘কারি’ ব্যবসা। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার রেস্টুরেন্টে ৭৫ হাজার কর্মী কাজ করছেন, যার প্রায় ৯৫ ভাগই বাংলাদেশি। তবে স্টাফ সংকটসহ নানা কারণে প্রায় ৩ হাজার রেস্টুরেন্ট এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে। করোনাকালেও নানামুখী সমস্যায় ছিলেন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। এখনো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। গত বছরের প্রথম দিকে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের গাফতের কিপাক্স তান্দুরি বন্ধ করে দেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ জাকারিয়া।

টানা দুই বছর চালানোর পর স্টাফ সংকটের কারণেই তিনি লাভজনক থাকা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হন। ওই এলাকায় আরও কয়েকজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীও একই উদ্যোগ নেন। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ জাকারিয়া দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার একটি লাভজনক ব্যবসা ছিল রেস্টুরেন্ট। কিন্তু স্টাফ না থাকায় আমি ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’ যুক্তরাজ্যের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে রেস্টুরেন্টগুলোতে শেফ ও স্টাফ সংকট চরমে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে বর্তমানে আরও অন্তত ২৫-৩০ হাজার কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু নানা জটিলতায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনা যাচ্ছে না।

যুক্তরাজ্যে এ মুহূর্তে ক্যাটারিং ও হসপিটালিটি বিষয়ে বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তির অভাব আছে। এ কারণে অনেক রেস্টুরেন্ট মালিক ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চিন্তাভাবনা করছেন। যার সুযোগ নিচ্ছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। তারা দেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করছে। এদিকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসরত বাংলাদেশিদের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কেউই রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন না। তারা লেখাপড়া শেষ করে অন্যান্য পেশায় যোগ দিচ্ছেন। এটা অবশ্য ভালো দিক। এ ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসায় এসে কেউই স্থায়ীভাবে রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন না। দীর্ঘ সময় তারা রেন্টুরেন্টে কাজ করতে চান না। বাংলাদেশ থেকে রেস্টুরেন্টে কাজ করার জন্য জনবল নিয়োগে ওয়ার্ক পারমিটও পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ক্যাটারাস অ্যাসোসিয়েশন-ইউকের সিনিয়র সহসভাপতি অলি খান (এমবিই) বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ১২ হাজার রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে আছে। তবে দিন যতই যাচ্ছে, শেফ ও স্টাফ সংকট বাড়ছে। নানা জটিলতায় নতুন করে স্টাফ নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই স্টাফ সংকটের কারণে করোনাকালে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। এই সংকট কাটাতে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারকে যৌথভাবে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ ব্রিটিশ ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে রেস্টুরেন্ট খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।’ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলা খাবারের পাশাপাশি থাই, চায়নিজ, ইন্ডিয়ান, ইতালীয়সহ বিভিন্ন দেশের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ এখন বাংলা খাবারে ঝুঁকছেন। ইংলিশ ইউরোপীয়দের অনেক আগে থেকেই পছন্দের খাবার তালিকায় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। তারা সপরিবারে এসে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে খাবার খাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ থেকে আগত হাফিজুল ইসলাম নামে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, রেস্টুরেন্টে বিকাল ৪টা থেকে টানা রাত ১১টা পর্যন্ত সময় দিতে হয়। এর বাইরেও প্রস্তুতি নিতে এবং যাতায়াতে আরও দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়।

একজন শিক্ষার্থী এত দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে তার পড়াশোনার ক্ষতি হয়। অন্য কোনো কাজও করতে পারেন না। তাই অনেক শিক্ষার্থী এখন নিজের সময় সুযোগে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন। আবার কেউ খন্ডকালীন অন্য পেশায়ও কাজ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেস্টুরেন্ট ব্যবসার স্টাফ সংকট কাটাতে যুক্তরাজ্য সরকারের মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের (ম্যাক) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হসপিটালিটি ও ক্যাটারিং সার্ভিস বিভাগের সঙ্গেও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা ভকেশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করলে অনেক দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচ তারকা, চার তারকা বা তিন তারকা হোটেলগুলোতেও যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাতে অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুযোগ পাবে।

জানা যায়, কর্র্মী নিয়োগে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকার বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। কোনো স্টাফকে ন্যূনতম ৩০ হাজার পাউন্ড বার্ষিক বেতন দিতে হবে। কর্মীর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে ইংরেজি জানতে হবে। কর্মী নিয়োগে অন্তত ৩ বছরের চুক্তি করতে হবে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে একজন অদক্ষ স্টাফকে এসব শর্ত মেনে আনলে তাতে ব্যবসা পোষানো যায় না। তাই ব্রিটিশ সরকার যদি একটু শর্ত শিথিল করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আরও কিছু কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। নইলে দিন দিন আরও হুমকিতে পড়বে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এতে ব্রিটিশ সরকারেরও রাজস্ব কমবে।

গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল-ইউকের চিফ চ্যারিটি কো-অর্ডিনেটর এম মোনসব আলী (জেপি) বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্রিটেন প্রবাসীদের বড় অবদান আছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ব্রিটেন প্রবাসীরা বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম ফ্লাইট চালু হয় লন্ডন থেকে। তাই বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বর্তমানে রেস্টুরেন্টগুলোতে যে স্টাফ সংকট আছে তাতে বাংলাদেশ সরকারও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু রেস্টুরেন্টেই নয়, সব সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। তা আমাদের সরকার খুঁজে বের করে সেই সব সেক্টরে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারে।’

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বেঙ্গল ভার্সারির স্বত্বাধিকারী মল্লিক দবির মিয়া বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বাংলাদেশ এখন নেতৃত্বের আসনে। স্টাফ সংকটে এটা এখন ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য জুড়েই এখন রেস্টুরেন্টগুলোতে দক্ষ ওয়েটার ও শেফ সংকট বিরাজ করছে। স্টাফ সংকটে পূর্ব লন্ডনসহ কয়েকটি শহরে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রিটিশ সরকার কিছু শর্ত শিথিল করে ওয়ার্ক পারমিট দিলেই বাংলাদেশ থেকে লোকবল নিয়োগ করা যেতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও কাজ করতে হবে।’

Share This Article


মালয়েশিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ৩ বাংলাদেশি নিহত

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি দম্পতিকে গুলি করে হত্যা

মালয়েশিয়ায় কাজ না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

টরন্টোয় শিশুদের রং তুলিতে বাংলাদেশ

স্পেনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

২০২৩ সালে গ্রিসে বৈধতা পেয়েছে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশি

সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার বিতর্কিত ব্লগার ইলিয়াস হোসেন

হুন্ডির প্রভাব : অধিক জনশক্তি রপ্তানি করেও বাড়ছে না রেমিট্যান্স!

অস্থায়ীভাবে সরানো হচ্ছে মিয়ানমারের সিত্তেতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট

নিউইয়র্কের সড়কে বাংলাদেশি দম্পতি নিহত, লাইফ সাপোর্টে ৮ বছরের মেয়ে

ইতালিতে স্ট্রোক করে বাংলাদেশির মৃত্যু