চট্টগ্রামে মিতু হত্যার রেজিস্টার গায়েব করা কে এই পুলিশ?

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:২৮, শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ২ পৌষ ১৪২৮

মিতুকে হত্যার পরপরই পুলিশের একজন সদস্য এসে বাবুলের বাসার নিচ থেকে একটি রেজিস্টার নিয়ে যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে- হত্যার পরই কেন সরানো হলো সেই রেজিস্টার। আর সেই পুলিশ সদস্যই বা কে? আর কেনইবা ওই বাসায় দুটি রেজিস্টার রাখার দরকার পড়ল?

২০১৬ সালে চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার তদন্তে একটি তথ্য সামনে এসেছে। চট্টগ্রামে যে বাসায় বাবুল পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন সেই ভবনে তার ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে রেজিস্টার বইয়ে স্বাক্ষর করতে হতো। তবে রেজিস্টার ছিল দুটি। 

মিতুকে হত্যার পরপরই পুলিশের একজন সদস্য এসে বাবুলের বাসার নিচ থেকে একটি রেজিস্টার নিয়ে যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে- হত্যার পরই কেন সরানো হলো সেই রেজিস্টার। আর সেই পুলিশ সদস্যই বা কে? আর কেনইবা ওই বাসায় দুটি রেজিস্টার রাখার দরকার পড়ল?

আদালতের নির্দেশে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই তদন্তের অংশ হিসেবে ৫ বছর পর গত বুধবার আদালতে প্রথমবারের মতো সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন আব্দুর ছাত্তার মোল্লা। তিনি ১৯৮৯ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ন্যাচারাল সিকিউরিটি সার্ভিসে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে ছয়-সাত বছর কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন পর তাকে খুঁজে পেয়েছে পিবিআই। এরপর ১৬৪ ধারায় তিনি জবানবন্দি দেন।

ছাত্তার জানান, মিতুকে হত্যার সময় তিনি চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডের আবাসিক এলাকায় এক নম্বর বাড়ি 'ইক্যুইটি সেন্ট্রিয়ামে' দায়িত্বরত ছিলেন। ওই সময় সেখানে তারেক নামে আরেকজন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে তারেক সৌদি আরবে রয়েছেন। বাবুল আক্তার পরিবারসহ 'ইক্যুইটি সেন্ট্রিয়ামে' থাকতেন। তার বাসায় ফাতেমা নামে ১০-১২ বছরের একজন গৃহকর্মী ছিল। আর সাদ্দাম নামে এক পুলিশ সদস্য বাবুলের ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। কোনো মেহমান এলে ঢোকার অনুমতি নেওয়ার জন্য আগে তার বাসায় ফোন করা হতো। বাবুলের বাসায় আগত লোকদের এন্ট্রি করার জন্য আলাদা একটি রেজিস্টার ছিল। ওই বাসায় আগত লোকদের সেখানে এন্ট্রি করে ঢোকানো হয়। মিতুকে হত্যার পর একজন পুলিশ সদস্য ওই রেজিস্টার নিয়ে চলে যান। তবে তার পোশাকে কোনো নাম লেখা ছিল না।
ছাত্তার আরও বলেন, বাবুল আক্তার বিদেশে থাকাকালে তার বাসায় কম লোকজন আসত। তবে বিদেশে থাকাকালে ৩৬-৩৭ বছরের এক লোক তার বাসায় আসতেন। ওই লোকের নাম মুসা। তিনি মাঝে মাঝে এসে বাজার-সদাই দিতে যেতেন। কখনও মুসা বাজার করে নিয়ে এলে গৃহকর্মীকে ডেকে বা নিরাপত্তারক্ষীরাও দিয়ে আসত। বিভিন্ন সময় বাবুল আক্তারের ভবনের বাইরে মুসার সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেখেছি।

বাবুল আক্তারের বাসার এই নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেই দিনের ঘটনার বিবরণও জবানবন্দিতে দিয়েছেন। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী বাচ্চাকে স্কুল বাসে তুলে দেওয়ার জন্য রওনা দেন। আনুমানিক ১০ মিনিট পর ফ্ল্যাক্সে করে চা আনার জন্য ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তায় যান ছাত্তার। তখন দেখেন ওয়েলফুডের সামনে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু পড়ে আছেন। তখন তার বাসার গৃহকর্মীকে একটা বিছানার চাদর নিয়ে আসার জন্য বলেন। বাবুল আক্তারের ছেলেকে কোলে করে বাসায় নিয়ে যান। ভবনের সবাইকে ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানানো হয়। ভবনের লোকজন ও পুলিশ এলে মিতুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন।
 

জানা গেছে, মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। পাঁচ বছর পর ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার করার পর বাবুলকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। স্ত্রী খুন হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাবুল আক্তার। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের আগে তিনি একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
 

তবে পিবিআই বাবুলের মামলায় যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে, তা আদালত গ্রহণ করেননি। বাবুল আক্তারের মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক সমকালকে বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা অধিকতর তদন্ত শুরু করেছি। একজন আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। বাবুল ও মোশাররফ হোসেন দু'জনের মামলায় এই জবানবন্দি প্রযোজ্য হতে পারে। আদালত হয়তো পড়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। এই মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল মিতুকে।

Share This Article


ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদ রিমান্ড শেষে কারাগারে

রাজধানীতে দলনেতাসহ 'কিশোর গ্যাং'র ৩৭ সদস্য গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের রহস্যজনক মৃত্যু

জবিতে হিযবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণের সময় ঢাবি শিক্ষার্থী আটক

খাগড়াছড়িতে বাইক থামিয়ে আরোহীকে গুলি

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি হতে খরচ ত্রিশ হাজার টাকা

বিপুল দেশীয় অস্ত্রসহ মোহাম্মদপুরের ৩৯ কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেপ্তার

ফেসবুকে নারী সেজে প্রতারণার অভিযোগে যুবক আটক

‘দুবাইয়ের পণ্য’ তৈরি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে, বিক্রি সারাদেশে

অপহরণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হলেও গ্রেফতারে পিছপা হয়নি প্রশাসন

চায়ের দোকানে ২ ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা