বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কি সন্তোষজনক

২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে মাইলফলক স্পর্শ করেছিল।তখন প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করতে হতো। সে হিসেবে তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু এ বছর প্রতিমাসে আমদানীতে ব্যয় হচ্ছে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগেরবারের তুলনায় দ্বিগুণ।
মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে দাম বেড়েছে তেল, খাদ্যপণ্য ও ডলারের। ফলে বেড়েছে জাহাজের ভাড়া ও আমদানি ব্যয়ও।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৬০ ডলার। এ বছর সেই তেলের দাম ১১০ ডলারের বেশি। ফলে বিদেশ থেকে আনা প্রতিটা পণ্যেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে মোট আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
এ বছর তেল আমদানিতে ৮২ শতাংশ, যন্ত্রপাতি ৫০ শতাংশ, শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে ৪৯ শতাংশ ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ফলে এগুলো আমদানিতে কয়েক গুন টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
কিন্তু যে হারে আমদানি বেড়েছে, রফতানি ও রেমিটেন্স সে হারে বাড়েনি। ফলে এর চাপ গিয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।
গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই তিন মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য প্রতিমাসে আমদানি হচ্ছে দেশে। অথচ গত বছরও এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল।
তাই যেই রিজার্ভ এক সময় বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট ছিল সেটি এখন আর যথেষ্ট নয়। আগে যেই রিজার্ভ দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত এখন সেই রিজার্ভ দিয়েই মাত্র ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাচ্ছে।
গত তিন মাসে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ব্যয় মেটানোর পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ১২ মে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ না থামা পযন্ত আমদানি ব্যয় কমার সম্ভাবনা নেই। তাই এখন থেকেই রিজার্ভ ব্যবহারে কৃপণ হতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে ইতোমধ্যে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের সকল প্রকল্পের তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিলাসী পণ্যসহ এই মুহূর্তেই প্রয়োজন নেই এমন সব আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।