পশ্চিমা দেশে বাক-স্বাধীনতা বন্ধ হয় যেভাবে

পশ্চিমা বিশ্বে এক ভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়, ভিন্নমত দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। এগুলো করা হয় বয়কটের মাধ্যমে। বয়কটের সেই পশ্চিমা নীতির নামই 'ক্যানসেল কালচার'।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের চিন্তাভাবনাই আলাদা, এটা সমস্যা নয়, তবে সমস্যা হলো অন্যের মতামতকে দমিয়ে রেখে নিজের মতামতকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া।
এশিয়ার বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বাক স্বাধীনতায় এমন হস্তক্ষেপ সবসময়ই ঘটে এবং ভয়ঙ্কর রুপ থারণ করে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এক ভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়, ভিন্নমত দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। এগুলো করা হয় বয়কটের মাধ্যমে। বয়কটের সেই পশ্চিমা নীতির নামই 'ক্যানসেল কালচার'।
একসময় বাংলাদেশের গ্রাম্য সমাজে একঘরে করে দেয়ার রেওয়াজ ছিলো। তবে সেটি করা হতো শালিস-বিচারের মাধ্যমে। কিন্তু ইউরোপে এসবের বালাই নেই। কোন ব্যক্তির মতবাদ, লেখনী বা চিন্তাধারা কোন নির্দিষ্ট ধর্ম, জাত, গোষ্ঠি বা বিশেষ আদর্শের লোকদের পছন্দ না হলেই তারা তার ওপর 'ক্যানসেল' আরোপ করে। আর ক্যানসেলের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত সবকিছু খুইয়েছেন অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি। তাই ক্যানসেল কালচার থাকা উচিৎ কি উচিৎ না তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশাল বিতর্ক।
সাধারণত একজন সুপরিচিত ব্যক্তিকে ক্যানসেল করা মানে সেই ব্যক্তির ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা। সেটা হতে পারে একজন অভিনেতার চলচ্চিত্র না দেখা অথবা একজন লেখকের বই আর না পড়া বা প্রচার না করা। এই কালচার অনেক মানুষের ক্যারিয়ার প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে। ক্যানসেল কালচারের চর্চা এখন মূলধারার গণমাধ্যম ছাড়িয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিখ্যাত হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে. কে. রোলিং পশ্চিমা ক্যানসেল কালচারের শিকার হয়েছিলেন। তিনি ট্রান্সজেন্ডারদের একটি আন্দোলনের সমালোচনা করায়, তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে বয়কট করা হয়, এবং তার কাজের প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শুধু এমনটাই নয়, পশ্চিমা বিশ্বে ফিলিস্তিনের পক্ষে কেউ কোন কথা বললেও তাকে ক্যানসেলের মুখে পড়তে হয়। ফিলিস্তিনপন্থীদের 'অ্যান্টি-সেমিটিক' আখ্যা দিয়ে বিভিন্নভাবে বয়কট করা হয়। যে কারণে পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচার-নিপীড়নের খবর প্রকাশিত হয় না বললেই চলে।
বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা জনি ডেপের উপর তার স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনি ডেপকে বয়কটের ডাক আসে। বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন তাকে ক্যানসেলের আহ্বান জানায়। ফলে তাকে অনেকগুলো চলচ্চিত্রের কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ তখনও আদালতে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। তিনি অপরাধী কিনা সেটা জানার আগেই শাস্তির ব্যবস্থা হয়ে যায় এই 'ক্যানসেল' কালচারের জোরে।
তবে এই ক্যানসেল কালচার নিয়ে মার্কিন জনগণ দ্বিধাবিভক্ত। অনেকেই একে জবাবদিহিতার অংশ বলে মনে করেন, আবার অনেকে একে অন্যায় শাস্তি ও নিষেধাজ্ঞা বলে বিবেচনা করেন।
সম্প্রতি ক্যানসেল কালচারের এমন বেপরোয়া ভাব ঠেকাতে এর বিরোধীতায় নেমেছেন নম চমস্কি, জে. কে. রোলিং সহ প্রায় দেড় শতাধিক লেখক। এলন মাস্ক এক টুইট বার্তায় বলেন, 'cancel cancel Culture' অর্থাৎ ক্যানসেল কালচারকেই ক্যানসেল করে দিন।
তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ কাউকে বয়কট করলে সেটা আইনে ঠেকানোর উপায় নেই। তাই এটিকে সামাজিকভাবেই সমাধান করতে হবে।