ঈমানের স্বরূপ কী?

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:১৯, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
ঈমান
ঈমান

ইসলামি ডেস্ক:
ঈমান অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসকেই ঈমান বলে। প্রকৃত অর্থে মহান আল্লাহতায়ালা, নবি-রাসূল, ফেরেশতা, আখেরাত, তাকদির ইত্যাদি মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং মেনে চলাই ঈমান।

ঈমান অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসকেই ঈমান বলে। প্রকৃত অর্থে মহান আল্লাহতায়ালা, নবি-রাসূল, ফেরেশতা, আখেরাত, তাকদির ইত্যাদি মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং মেনে চলাই ঈমান।

কোনো ব্যক্তি যদি আন্তরিকভাবে এসব বিষয়কে বিশ্বাস করে তিনিই হলেন মুমিন। ঈমানের তিনটি দিক রয়েছে। যথা : ১. অন্তরে বিশ্বাস করা ২. মুখে স্বীকার করা এবং ৩. তদানুসারে আমল করা।

প্রকৃত ঈমান হলো আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদানুযায়ী আমলের সমষ্টি। প্রকৃত মুমিন থেকে এ তিনটি বিষয় থাকা জরুরি। কেউ যদি অন্তরে বিশ্বাস করে কিন্তু মুখে স্বীকার না করে। বিপরীতে আবার মুখে স্বীকার করলেও অন্তরে বিশ্বাস করে না, এমন মনোভাব থাকলে কোনো ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারে না। ঈমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বিষয় সাতটি। মুমিন হওয়ার জন্য সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস

ঈমানের প্রথম ও সর্ববিধান বিষয় হলো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। মহান আল্লাহতায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তার কোনো শরিক নেই। তিনি কাউকে জন্ম দেননি তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি।

তিনি আমাদের রব, মালিক, রক্ষাকর্তা, পালনকর্তা, সৃষ্টিকারী, সাহায্যকারী, জন্ম-মৃত্যুর মালিক। আল্লাহতায়ালা অনন্ত অসীম। তিনি তার বান্দার মাঝে সব সময় আছেন এবং থাকবেন। তিনি পবিত্র, ক্ষমাশীল, সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান, সর্ব স্রষ্টা ও সর্বশক্তিমান।

ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস

ফেরেশতারা নুরের তৈরি। মহান আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারা সর্বদা মহান আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ পাঠ করে। ফেরেশতা অদৃশ্য, তবে মহান আল্লাহর আদেশে তারা নানা আকৃতি ধারণ করতে পারে।

ফেরেশতাদের সংখ্যা অগণিত, এর প্রকৃত সংখ্যা কেবল একমাত্র আল্লাহতায়ালাই জানেন। ফেরেশতাদের মধ্যে চারজন প্রসিদ্ধ। তারা হলেন হজরত জিবরাইল (আ.), হজরত মিকাইল (আ.), হজরত আজরাইল (আ.) এবং হজরত ইসরাফিল (আ.)।

আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস

মানবজাতির কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবি-রাসূল দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন এবং তাদের কাছে কিতাব নাজিল করেছেন। এসব কিতাবে আল্লাহতায়ালার স্বীয় পরিচয় ও ক্ষমতার বর্ণনা প্রদান করেছেন। আসমানি কিতাব সর্বমোট একশ চারখানা।

তন্মধ্যে একশখানা ছোট আর বাকি চারখানা বড়। বড় চারখানা কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কুরআন। তন্মধ্যে আল কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এটি শেষ জামানার নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয়েছে।

নবি রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস

মানবজাতিকে অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে পদার্পণের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবি-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করতেন। তারা সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়সহ মানবজাতি কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করবে তা শিক্ষা দিতেন। তারা ছিলেন নিষ্পাপ। সর্বপ্রথম নবি হজরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ নবি ও রাসূল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)।

আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস

আখেরাত অর্থ পরকাল। দুনিয়ার জীবনের পর আরও একটি জীবন রয়েছে যে জীবন স্থায়ী ও অনন্তকাল। এটিই হলো পরকাল যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। আখেরাত হলো বান্দার কর্মফল ভোগের স্থান। মানুষ দুনিয়ায় যেমন কাজ করবে আখেরাতে তেমন ফল ভোগ করবে। অর্থাৎ ভালো কাজ করলে পুরস্কার স্বরূপ পাবে জান্নাত আর খারাপ কাজ করলে শাস্তি ভোগ করবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তকদিরের প্রতি বিশ্বাস

তাকদির অর্থ ভাগ্য। বান্দার তকদির আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। বান্দার ভালো মন্দ যা কিছু হোক তা সবই আল্লাহর হুকুমে হবে। দুনিয়ায় ভালো কিছু পাওয়া গেলে আত্মহারা হয়ে যাওয়া যাবে না আবার কোনো বিপদ আপদে পড়লে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং এটি আল্লাহর দান। তাই এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। সুতরাং আমাদের আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। ভালো-খারাপ অবস্থায় সবর বা ধৈর্য রাখতে হবে। তকদিরে বিশ্বাস করতে হবে এবং নেক কাজ করতে হবে।

মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস

মৃত্যুর পর আমাদের আবার জীবিত করা হবে। প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় যত মানুষ আসবে আল্লাহপাক সবাইকে জীবিত করবেন। এটিই হলো পুনরুত্থান। সবাই হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে এবং স্বয়ং আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের কাছে নিজ নিজ আমলের হিসাব চাইবেন।

সেদিন আল্লাহতায়ালা হবেন বিচারক, আমাদের সেদিন জবাবদিহি করতে হবে। অতঃপর ভালো কাজের জন্য পুরস্কার আর খারাপের জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। উল্লিখিত ঈমানের সাতটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক।

Share This Article