প্রথম স্থান নিতে চায় বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চট্টগ্রাম

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:৪৯, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

র্জ্য পোড়ানো তাপে বাষ্পীভূত করা হবে পানি। সেই পানি দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ। এই স্বপ্ন নিয়ে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

বর্জ্য পোড়ানো তাপে বাষ্পীভূত করা হবে পানি। সেই পানি দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ। এই স্বপ্ন নিয়ে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। পরিবেশবান্ধব নগর গড়তে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এবং বিদ্যুতের জোগান বাড়াতে বিদেশি দুটি সংস্থার সঙ্গে সম্প্রতি চসিক আবারও বৈঠক করেছে।
 

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুটি ইউনিট করতে চসিক থেকে দুই ধাপে ২৬ একর জমি চেয়েছে সংশ্নিষ্ট চীনা প্রতিষ্ঠান। আর সৌদি-জার্মান অর্থায়নে পরিচালিত আরেকটি প্রতিষ্ঠান চাইছে ৪০ একর জায়গা। বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া একই ছাতার নিচে এনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। এ দুটি সংস্থাকেই সমীক্ষা করে প্রকল্প দিতে বলেছে চসিক। তাদের প্রত্যাশা, দীর্ঘদিন স্থবিরতার মধ্যে থাকলেও বর্জ্য থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি আগামী বছরই দেখবে আলোর মুখ। এদিকে, চসিককে পেছনে ফেলে গত ১ নভেম্বর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্পে স্বাক্ষর করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন আমিন বাজার এলাকায় চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি) ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। কার্যক্রম শুরুর ১৮ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে তারা। ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য লাগবে। বর্জ্য থেকে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৮ দশমিক ২৯৫ টাকা। অবশ্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আরও কম হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম পরিদর্শন করে গেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, 'বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত হবে। শুধু ডিএনসিসি নয়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় ও জেলা শহর এমনকি পৌরসভাগুলোতেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।'

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'আগামী বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে। যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন, তারা নিজ ঝুঁকিতে প্লান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় জমি ও নিয়মিত বর্জ্য সরবরাহ করবে। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ বিভাগ।'
জমি সংকটে পিছিয়েছে উদ্যোগ :পিডিবির সঙ্গে চসিকের তিন বছর আগে করা চুক্তির শর্তে ছিল, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তৃতীয় পক্ষ বাছাই করবে পিডিবি। এরপর তাদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের পূর্ত কাজ শুরু হবে। বিল্ড,

ওন অ্যান্ড অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। এ কেন্দ্র গড়ে তুলতে দৈনিক আড়াই হাজার টন বর্জ্য বিনামূল্যে সরবরাহ করার কথা চসিকের। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনামূল্যে ২৫ একর জমিও দেওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত জমি নেই চসিকের কাছে। আনন্দবাজার এলাকায় জমি আছে মাত্র ১০ একর। অনেক চিঠি দেওয়া-নেওয়ার পরও তাই আর আলোর মুখ দেখেনি সেই সমঝোতা স্মারক।

ফের আশার আলো :প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন করে আগ্রহী হয়ে ওঠা বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে দ্রুত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন এবং প্রকল্প প্রস্তাব চেয়েছে চসিক। আগ্রহী একটি প্রতিষ্ঠান চায়নিজ ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দল গত ২০ নভেম্বর সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকও করেছে।

এ প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'নগরীকে পরিবেশবান্ধব করতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনতে হবে। ডাম্পিং স্টেশনে স্তূপীকৃত বর্জ্য শোধন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে নগরী পরিবেশবান্ধব হবে। এ জন্য আগ্রহী বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে জমি দেওয়া হবে। সরকার থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুমোদন নেবে তারা। যাবতীয় ব্যয়ও নির্বাহ করতে হবে তাদের। এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বিদেশি দুটি সংস্থা।'
 

তৎপর আগ্রহী চায়না প্রতিষ্ঠান :চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়ে আসছে চায়না প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চায়না পাওয়ার কোম্পানির দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। তাদের নেতা হ্যানকুন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে চসিক থেকে ১০ একর জায়গা ও প্রতিদিন দেড় হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ চেয়েছেন। এই বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রকল্পের জন্য কোম্পানিটি ১৮০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের নেতা।
 

এবার আবার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন চায়নিজ ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিও ঝাং। এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের ঢাকাসহ আরও ৩৪টি দেশে বাস্তবায়ন করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চট্টগ্রামে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখান তারা। নগরীতে তারা দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করতে চান। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য দৈনিক এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টন করে বর্জ্য চায় ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি কেন্দ্রের জন্য ১৩ একর করে মোট ২৬ একর জমি চেয়েছেন তারা চসিকের কাছে।
 

অন্যদিকে, সৌদি-জার্মান টেকনোলজি লিমিটেড নামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি জমি চেয়েছে ৪০ একর। তারা বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া সমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে চায়। এ প্রতিষ্ঠানটির সমীক্ষা কার্যক্রম এখন শেষের পথে। শিগগিরই তারা এটি চসিকে জমা দেবে বলে জানান মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরীর সব বর্জ্য এখন হালিশহরের আনন্দবাজার এবং বায়েজিদের আরেফিন নগরে খোলা স্থানে ফেলা হয়। আনন্দবাজারে ১৫ এবং আরেফিন নগরে ১৯ একর জমি আছে চসিকের। প্রয়োজনে আরও জমির ব্যবস্থা করা হবে। এবার আর পিছু না হটে যে কোনো মূল্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।'

Share This Article

শনিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

নিজের প্রচারের স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার ব্যক্তিত্ব বিলিয়ে দেওয়া: অপু

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ নথি সই, চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ঢাকার প্রত্যাখ্যান

চলতি বছরই থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রধানমন্ত্রীর

দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, বিএনপি দেখে না: কাদের

মার্কিন চাপ নয়, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হলেই জিম্মি মুক্তি দেবে হামাস