যে প্রযুক্তির কল্যানে চিকিৎসা ও কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে বাংলাদেশ

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৪২, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

ব্যাটারি ছাড়া চালানো যাবে পরবর্তী প্রজন্মের এমন ‘ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)’ ডিভাইস তৈরিতে কাজ করার জন্য এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে বাসিমা ইসলাম।

ব্যাটারি ছাড়া চালানো যাবে পরবর্তী প্রজন্মের এমন ‘ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)’ ডিভাইস তৈরিতে কাজ করার জন্য এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে বাসিমা ইসলাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তিনি। ফোর্বসের ‘৩০ আন্ডার ৩০’ অর্থাৎ তিরিশ বছরের কম বয়সী ৩০ জনের মধ্যে সায়েন্স ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছেন ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো বাসিমা।

গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাসিমা বলেছেন, তার উদ্ভাবিত ডিভাইসটি বিশ্বব্যাপী ইলেক্ট্রনিক্স জগতে পরিবর্তন আনবে। যা ব্যবহার করে বাংলাদেশের চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। বাসিমার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন আইওটি ডিভাইস তৈরি।

যেগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করবে। তার মতে, বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত স্মার্ট ডিভাইসগুলো চালানোর জন্য ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। ব্যাটারি তৈরি এবং রিসাইক্লিং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ব্যাটারির বিকল্প হিসেবে সোলার এনার্জিসহ সাসটেইনেবল এনার্জি ব্যবহার করছেন তিনি। তার উদ্ভাবনের অন্যতম উদ্দেশ্য ব্যাটারিলেস সিস্টেম চালু করা। পৃথিবীতে দৈনিক প্রায় ৮৭ লাখ ডিভাইসে ব্যাটারি পরিবর্তন হয়। এই বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি তৈরি ও রিসাইক্লিংয়ে খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশে এর প্রভাব পড়ছে। যার সমাধান হতে পারে আইওটি। বাংলাদেশ এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগাতে পারে জানতে চাইলে বাসিমা বলেন, স্মার্ট ওয়াচের বিকল্প হিসেবে আইওটি ডিভাইস মানুষের হার্টের গতিবিধি পরিমাপ করতে পারে। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আগে তা রোগীকে সংকেত দিতে পারে। বয়স্ক যারা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করেন তাদের জন্য ব্যাটারি রিচার্জ করা ঝামেলার। ব্যাটারিলেস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় সেগুলো ব্যয়বহুল।

আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালন ব্যয় কমানো সম্ভব। ফোর্বস ম্যাগাজিনে নিজের সাফল্যের খবর প্রচার হওয়াকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বাসিমা বলেন, তিনি এ খবরে বাকরুদ্ধ। এর পেছনে নিজের পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে বলে জানান তিনি। এ জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাসিমা। মুন্সীগঞ্জের মেয়ে বাসিমার বেড়ে ওঠা ঢাকাতে। ২০১০ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। বাসিমার তৎকালীন থিসিস অ্যাডভাইসার ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. রিফাত শাহরিয়ার বলেন, বাসিমা তার কাজের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। যে কোনো কঠিন সমস্যা সমাধানে সে ছিল গভীর মনোযোগী। তার কৃতিত্বে বুয়েট পরিবার গর্বিত।

এ বছরই ‘৩০ আন্ডার ৩০’ প্রকাশের এক দশক উদ্‌যাপন করছে ফোর্বস। গত ১০ বছরে ফোর্বসের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ৬০০ জন উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও বিনোদনদাতা। ফোর্বস বলছে, বাজি ধরে বলা যায় এই ছয়শ’ জন যে পৃথিবীর কল্পনা করছেন আজ থেকে ১০ বছর পর আমরা তেমন পৃথিবীতে বাস করবো।

ফোর্বস ম্যাগাজিন লিখেছে, বাসিমা ইসলাম এমন ডিভাইসের উন্নয়নে কাজ করছেন, যা সৌরশক্তি এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে চার্জ হবে। এ ছাড়া তার এসব ডিভাইস হবে শব্দভেদী। এসব ডিভাইস পথচারীদের নিরাপত্তা দিতে সহায়তা করবে। শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে যানবাহন থেকে পথচারীদের নিরাপদ রাখবে। এমন সব অদ্ভুত আবিষ্কার ও উদ্ভাবনী কাজের জন্য ফোর্বস ম্যাগাজিন বাসিমাকে বেছে নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাসিমা ইসলাম বর্তমানে ওরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (ডব্লিউপিআই) সহকারী একজন প্রফেসর (ইনকামিং) হওয়ার পথে। তিনি ডব্লিউপিআই ওয়েবসাইটকে বলেছেন, আমার ইন্টারডিসিপ্লিনারি গবেষণার বিষয়বস্তু বহুমুখী। এর মধ্যে আছে মেশিন লার্নিং, মোবাইল কম্পিউটিং, এম্বেডেড সিস্টেমস এবং ইউনিকুইটাস কম্পিউটিং।

আইওটি ডিভাইসগুলো প্রচলিত ডিভাইসের চেয়ে কিছুটা আলাদা। এগুলো ওয়্যারলেস সিগন্যাল ও সংযোগের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। ওরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে বাসিমা বলেন, ‘আমার ইন্টারডিসিপ্লিনারি গবেষণার বিষয়বস্তু বহুমুখী। এটি একাধারে মেশিন লার্নিং, মোবাইল কম্পিউটিং, এম্বেডেড সিস্টেমস, ইউবিকুইটাস কম্পিউটিংকে সংযুক্ত করেছে।’ বাসিমা ইসলাম ২০২১ সালে চ্যাপেল হিলে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অর্জন করেছেন পিএইচডি। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে প্রফেসর রোমিত রায় চৌধুরী এবং প্রফেসর ন্যান্সি ম্যাকইলাইনের অধীনে ভিজিটিং পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।

Share This Article