দক্ষিণ এশিয়ায় বুলবুলির ২৪ প্রজাতি, বাংলাদেশে ১১টি

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৪, শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
বুলবুলি
বুলবুলি

আকারে ছোট হলেও প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকে অনেকটাই সমৃদ্ধ পাখি বুলবুলি। বিশ্বের বড় একটি অংশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাখিটির নানা প্রজাতি।

জিন বিশ্লেষণভিত্তিক এক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিবর্তনের ক্রমধারায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে এসব প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকা ও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল এলাকায়। শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই বুলবুলি পাখির প্রজাতি রয়েছে ২৪টি।

 

গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে বুলবুলি পাখিকে বড় মাত্রায় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রজাতিগত বৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ হয়েছে পাখিটি। এর মধ্যে আবার পাখিটির উপমহাদেশীয় প্রজাতিগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় বসবাসকারী প্রজাতির সাদৃশ্য অনেক কম। বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রজাতিগুলোর সঙ্গে পাখিটির উপমহাদেশীয় প্রজাতিগুলোর মিল বেশি খুঁজে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশেও প্রচুর বুলবুলি দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন উৎসে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১১ প্রজাতির বুলবুলির দেখা পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাদাবুক বুলবুলি (Alophoixus flaveolus), ছাইরঙা বুলবুলি (Hemixos flavala), কালো বুলবুলি (Hypsipetes leucocephalus), পাহাড়ি বুলবুলি (H. mcclellandii) কালো মাথা বুলবুলি (Pycnonotus articeps) ইত্যাদি।

বুলবুলির বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এ অঞ্চলের বুলবুলির জিনগত বিশ্লেষণ বলছে, পাখিটির উত্পত্তি হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সান্ডাল্যান্ড (সান্ডাইক নামেও পরিচিত; মালয় পেনিনসুলা, বোর্নিও, জাভা ও সুমাত্রা নিয়ে গঠিত জৈবভৌগোলিক এলাকা) অঞ্চলে। কালের বিবর্তনে তা ছড়িয়ে পড়েছে উপমহাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে এখন Pycnonotidae গোত্রের ফলাহারী এ পাখির প্রজাতি রয়েছে ১৫০টিরও বেশি।

সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল লেখক ভারতের হায়দরাবাদের ল্যাবরেটরি অব কনজারভেশন অব এনডেঞ্জারড স্পেসিসের গবেষক আশিষ ঝা বলেন, জিনগত বিশ্লেষণ ও বিশ্বব্যাপী বুলবুলির বিবর্তনের ধারার তথ্য সমন্বয় করে দেখা গিয়েছে, এসব তথ্য পরস্পর সংগতিপূর্ণ। তার মানে এ প্রজাতিগুলো ভিন্ন সময়ে দক্ষিণ এশিয়া থেকে এসেছে।

গবেষণায় মূলত এশীয় অন্যান্য বুলবুলির সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় বুলবুলির তুলনামূলক জিনগত বিশ্লেষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এছাড়া বুলবুলির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বিবর্তনে কালপঞ্জিভিত্তিক একটি মানচিত্রও তৈরি করতে চেয়েছেন গবেষকরা, যাতে দেখানো হবে সময়ের সঙ্গে কীভাবে বুলবুলির পরিবর্তন হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় প্রজাতির বুলবুলির তথ্য খুব একটা সহজলভ্য নয়। তাই গবেষকরা শুরুতে যে তথ্য পেয়েছেন, সেগুলোকেই ভারতীয় ও শ্রীলংকার স্থানীয় প্রজাতিগুলোর জিনগত তথ্যের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ অঞ্চলের স্থানীয় বুলবুলি প্রজাতির উত্পত্তিস্থলের ওপরও বিশেষ লক্ষ রেখেছেন তারা। এসব প্রজাতি মূলত জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় বিবর্তিত হয়েছে।

আশিষ ঝা বলেন, একসময় গোটা উপমহাদেশ ভেজা ও আর্দ্র বনে আচ্ছাদিত ছিল। কিন্তু প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বছর আগে মায়োসিন-পরবর্তী যুগে এ বনের আশপাশের পরিবেশ শুষ্ক হতে শুরু করে। এর প্রতিক্রিয়ায় বনভূমির বুলবুলিগুলো এ অঞ্চলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা বিবর্তিত হতে থাকে আলাদা প্রজাতি হিসেবে।

মলিকিউলার ডেটিংয়ের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন বুলবুলি হলো ডোরাকাটা বুলবুলি (Pycnonotus striatus) ও হিমালয়ের পাহাড়ি বুলবুলি (Ixos mcclellandii)। হলদে গলার বুলবুলি (P. xantholaemus) ও ভারত উপদ্বীপের সাদাভ্রু বুলবুলি (P. luteolus) প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৫৩ লাখ ৩০ হাজার বছর আগে মায়োসিন যুগের শেষের দিকে বিবর্তিত হয়েছিল। ভারতের ওয়েস্টার্ন ঘাটের স্থানীয় বুলবুলিগুলো তাদের সমকালীন প্রজাতি থেকে আলাদা হয়েছে প্লাইওসিন যুগে (৫৩ লাখ ৩৩ হাজার থেকে ২৫ লাখ ৮০ হাজার বছর আগে)।


এ উপদ্বীপ অঞ্চলে সবচেয়ে পুরনো প্রজাতির বুলবুলি হলো ভারতের দাক্ষিণাত্যের হলদে গলার বুলবুলি ও শ্রীলংকার হলুদ কানের বুলবুলি (P. penicillatus)। কিন্তু এ দুই প্রজাতি আবার সমকালীন প্রজাতি টাক্সার সঙ্গে ততটা সম্পর্কিত নয়।

এসব বুলবুলির সঙ্গে আফ্রিকারও সম্পর্ক রয়েছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার বুলবুলি পাইনোকোটাস গণের অন্তর্ভুক্ত, যারা পাইলোসিন যুগে আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে তারা আরব উপদ্বীপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ২৫ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১২ হাজার বছর আগে প্লাইসটোসিন যুগের শুরুর দিকে হাইপসিপেটস গণের পাখি চলে যায় মাদাগাস্কার ও ম্যাসকারেন দ্বীপে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় হাইপসিপেটস গণের দুটি প্রজাতির দেখা মেলে। এর মধ্যে একটি হলো হিমালয়ের কালো বুলবুলি (Hypsipetes leucocephalus) এবং অন্যটি ওয়েস্টার্ন ঘাট ও শ্রীলংকায় পাওয়া চারকোনা লেজওয়ালা বুলবুলি (H. ganeesa)।

ঝা বলেন, অনেকেই মনে করেন হিমালয়ের কালো বুলবুলি ওয়েস্টার্ন ঘাট ও শ্রীলংকার চারকোনা লেজের বুলবুলির সিস্টার স্পেসিস। কিন্তু মূলত এ প্রজাতি ফিলিপাইন বুলবুলির (H. philippinus) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যেখানে চারকোনা লেজের বুলবুলি মাদাগাস্কারের বুলবুলির সঙ্গে অনেক বেশি সম্পর্কযুক্ত।


এ গবেষণার সহলেখক ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর গবেষক সম্পাথ সেনেভিরাতনে বলেন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্য বোঝার জন্য বুলবুলি পরিবার একটি ভালো মডেল হিসেবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সময়ে জলবায়ু ও ভৌগোলিক পরিবর্তন একটি প্রাণীর প্রজাতির ওপর কেমন প্রভাব রাখে তা বুঝতেও সাহায্য করে এ পরিবার।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শ্রীলংকার কথা। সেখানে কেন্দ্রীয় উচ্চভূমিতে বাড়ির বাগান বা শহুরে এলাকায় হলুদ কানের বুলবুলি সবচেয়ে বেশি নজরে পড়ে। কিন্তু ১২০০ মিটারেরও কম উচ্চতায় গেলে সেটা পুরো অদৃশ্য হয়ে যায়। একইভাবে চারকোনা লেজের বুলবুলি বেশি দেখা যায় বৃষ্টিপ্রবণ বনভূমিতে। কখনো কখনো বাড়ির বাগানেও এর দেখা মেলে। কিন্তু বৃষ্টিপ্রবণ বনভূমি ছাড়া অন্য এলাকায় এদের বলতে গেলে দেখাই যায় না। বিপরীতে শ্রীলংকায় সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে লাল ছটাওয়ালা বুলবুলি (P. cafer)। এরা মূলত কোনো ভবনের ব্যালকনিতে বাসা বাঁধে ও শহুরে পরিবেশে বাস করতে পছন্দ করে।

সেনেভিরাতনে বলেন, ঐতিহাসিক জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনে একটি প্রাণীর দল কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা গবেষণা করার বিষয়টা খুবই আকর্ষণীয়। এতে আমরা বুঝতে পারি, যদি একই ধরনের পরিবর্তন হতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে।

Share This Article


বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে’

ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার নতুন পরিচালক কমান্ডার আরাফাত

প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন

কাতারের কাছে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চায় বাংলাদেশ

নারীদের গৃহস্থালি কাজের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ

চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট ৫ জুন

প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী

পুলিশ শুধু আইনশৃঙ্খলায় নয়, মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে