উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে পাহাড়

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:২১, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে পণ্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ সব ক্ষেত্রেই সহজ হচ্ছে জীবনযাত্রা, যা পাহাড়ি জীবনে এনেছে গতি, বেড়েছে কর্মসংস্থান। পর্যটন ক্ষেত্রে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা।

সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা-চিকিৎসা, বাসস্থান আর বিদ্যুতের হাত ধরে বদলে গেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার পুরো দৃশ্যপট। এক সময় যা ছিল পিছিয়ে পড়া জনপদের একটি। সেই পাহাড়ি এলাকা এখন এগিয়ে যাওয়ার, মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় দাড়িয়ে থাকার এক অঞ্চলের বড় উদাহরণ।

স্থানীয়দের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে পণ্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতসহ সব ক্ষেত্রেই সহজ হচ্ছে জীবনযাত্রা, যা পাহাড়ি জীবনে এনেছে গতি, বেড়েছে কর্মসংস্থান। এমনকি তরুণ প্রজন্মকে ক্রীড়ামুখী করতে তৈরি হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, জরুরি সেবামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ফায়ার স্টেশন, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ইসলামীক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে নির্মাণাধীন। এছাড়া পর্যটন ক্ষেত্রে তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা।

উঁচু-নিচু অজস্র ঢেউ খেলানো পাহাড়, আর সাদা মেঘের অপূর্ব মিতালির অপরূপ সৌন্দর্যভূমি রাঙামাটির লংগদু। যদিও পার্বত্যাঞ্চলের সীমান্ত প্রান্তের এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এ উপজেলায় দীর্ঘকাল তেমন সুদৃষ্টি না থাকায় পিছিয়ে থাকতে হয়েছে পাহাড়ি জনপদকে। তবে এখন অতীত সেই সব দিন। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া, সীমাহীন সম্ভাবনা।

গত প্রায় দেড় দশকে নানামুখী পরিকল্পনার ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান এক সময়ের অবহেলিত জনপদে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন আমূল পাল্টে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। এক সময় যেখানে যাতায়াত ছিল একেবারেই দুস্কর, সেই দুর্গম পাহাড়ের বুকে এখন পিচঢালা সড়ক ও বিস্তৃত সেতু। আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন পথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আধুনিক সব যানবাহন। এভাবে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক হারে।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে রাস্তাঘাট এত ভালো ছিল না। ভাঙাচোড়া ছিল। কখনো কল্পনাও করিনি এখানকার রাস্তাঘাট এত ভালো হবে। আগে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে রোগী নেয়াটা কঠিন হয়ে যেত। এখন রাস্তাঘাট হওয়াতে যাতায়াত অনেক সুবিধা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির সুফল মিলছে প্রাণিসম্পদ, মৎস্য চাষ, কৃষিপণ্যসহ সার্বিক উৎপাদন খাতে। আর উন্নত সড়ক যোগাযোগের ফলে পাহাড়ে উৎপাদিত পণ্য নিমিষেই পৌঁছে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে, মিলছে ন্যায্যমূল্য।

সুবিধাভোগীদের কথায়, এই রাস্তা হওয়ার কারণে আমরা যারা চাষাবাদ করি, তাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারছি। এতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি। আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হচ্ছি।

কেবল তাই নয়, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতেও এগিয়েছে লংগদ  । ৬৫ শয্যায় উপনীত করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যা শুধু আনুষ্ঠানিক যাত্রার অপেক্ষায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা উদ্বোধন হলে আশা করা যায়, উপজেলা এবং এর বাহিরের লোকজনও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাবে। এতে করে স্থানীয় জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে।

লংগদুতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলছেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানের ভ্রমণের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এখন এখানে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থায়ও অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে অনেক সময় লাগতো। এখন অল্প সময়ের মধ্যেই যাতায়াত করা যাচ্ছে। এখানে ভ্রমণটা এখন অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

পাহাড়ি জনপদে বৈপ্লবিক বদল এনে দেয়ার আরেক আশীর্বাদ বিদ্যুৎ। আঁধার পেরিয়ে পাহাড়ের ঘরে ঘরে এখন আলোর রোশনাই। যেখানে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছানো দুরূহ, সে সব দুর্গম এলাকা আলোকিত করছে সরকারি সহায়তায় বসানো সোলার প্যানেল।

সুবিধাভোগীরা বলছেন, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ পাবো, সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। এভাবে বিদ্যুৎ পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। বিদ্যুতের কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়েছে। বিদ্যুৎ অনেক কাজে লাগছে।

লংগদু উপজেলায় অবিশ্বাস্য আমূল পরিবর্তন সম্পর্কে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে উপজেলায় অনেক উদ্যোক্তা বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পেরেছে। বিভিন্ন কলকারখানা ছাড়াও আরও অনেক প্রকল্প চলমান আছে।

তিনি আরও বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই পার্বত্যাঞ্চলে এমন নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি বাঙালি ঐক্যের প্রতীক রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার এমপি কয়েকদিন আগেই লংগদুতে ৩৫কোটি টাকার ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে গেছেন। যার সুবিধা উপজেলাবাসী পাচ্ছে। আমরা আশাবাদী উপকারভোগী সহ সাধারণ মানুষ আওয়ামী সরকারের প্রতি আস্থা রাখে।

শিক্ষাক্ষেত্রেও বদলের হাওয়া। বেড়েছে বিদ্যালয় আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা, প্রাথমিকে শতভাগ শিক্ষার্থীই এখন উপবৃত্তির আওতায়। নানামুখী পদক্ষেপে কমেছে ঝরে পড়ার হার। এদিকে উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট লংগদু মডেল কলেজকে জাতীয়করণ করে স্নাতক ডিগ্রী কোর্সে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সাথে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা।

স্থানীয়রা জানান, পার্বত্য এলাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) কিছু স্কুল ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে সেই স্কুলগুলো সরকারি হয়েছে।

দেশের অন্যত্রের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলার উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়নের উজ্জ্বল উদাহরণ এক সময়ের পিছিয়ে থাকা লংগদু। গত ১৫বছরে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক অগ্রগতি; সঙ্গে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতসহ সরকারের সেবাধর্মী নানান উদ্যোগ বদলে দিয়েছে পাহাড়ের জনপদ। আর সমতাভিত্তিক এই দর্শনই বাংলাদেশকে এগিয়ে দিচ্ছে টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে। আর পার্বত্যাঞ্চল থেকে রাজধানী অর্থাৎ সারাদেশের উন্নয়নে এভাবেই বিনির্মাণ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

লংগদুর সার্বিক উন্নয়নে গুলশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সারাবাংলার আনাচে কানাচে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বিশ্বকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করেছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল সহ বিভিন্ন মেঘা প্রকল্প। এ উন্নয়ন দেশ ও জাতির জন্য মাইলফলক।

তিনি আরো বলেন, লংগদুর গুলশাখালী ও কালাপাকুজ্জ্যা এ দুটি ইউনিয়ন ছিল উপজেলা থেকে অনেকটা দুর্গম কিন্তু বর্তমান সরকার সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারের সবকটি পূর্ণ করেছে।

এ বিষয়ে আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অজয় চাকমা মিত্র বলেন, পাহাড়ের এসব উন্নয়ন একমাত্র সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের একনিষ্ঠ চেষ্টায়। এর আগেও অনেক সরকার দায়িত্ব নিয়েছে কিন্তু কেউই কোন কাজ দেখাতে পারেনি। অথচ সারাবিশ্বে করোনা ক্রান্তিলগ্নে এদেশের অর্থনীতি ঠিক রেখে ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি আটারকছড়া ইউনিয়নে পূর্বে তুলনায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

লংগদু উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম জানান, বর্তমান সরকারের আমলে লংগদুতে যথেষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং এখনো অনেক কাজ চলমান রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপজেলা পরিষদের চারতলা বিশিষ্ট ভবন, যার কাজ প্রায় শেষের দিকে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সড়ক, কালভার্ট, সেতুসহ বিভিন্ন সরকারি স্কুল কলেজ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় লংগদুতে কয়েকদিন আগে বিশ কোটি সাতচল্লিত লক্ষ ঊননব্বই হাজার তিনশত ছাপান্ন টাকার কাজের সমাপ্তকৃত প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বিষয়ঃ উন্নয়ন

Share This Article