ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি
![ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি](/Uploads/Images/News/2023/11/Image-28672-20231126044859.webp)
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে শুক্রবার থেকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি চলছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল ৩৯ জন ফিলিস্তিনি কিশোর ও নারীকে মুক্তি দিয়েছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার গভীর রাতে ১৩ ইসরায়েলি ও চারজন বিদেশিকে মুক্তি দেয় হামাস। এরপর ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেয়।
ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে সিএনএন জানায়, ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের ড্যামন, মেগিডো ও পশ্চিম তীরের ওফার কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৩ জন কিশোর ও ছয়জন নারী।
মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের অভ্যর্থনা জানাতে পশ্চিম তীরে রামাল্লার কাছে আল-বিরেহ পৌরসভা ভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন হাজারো ফিলিস্তিনি৷ সন্ধ্যা থেকে সেখানে ভিড় করেছেন বন্দিদের স্বজনরা।
ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল ৩৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে।
ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ এবং ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাবের তথ্যের ভিত্তিতে, বন্দীদের অধিকারের প্রচারকারী একটি এনজিও, সিএনএন মূল্যায়ন করেছে যে শনিবার মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৫ জন সাজা ভোগ করছেন, বেশিরভাগই ইসরায়েলিদের উপর হামলার জন্য।
ইসরায়েল জানিয়েছে, যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ১৫ জন ইসরায়েলিদের উপর হামলার জন্য আটক হয়েছিলেন। আর বাকি ২৪ জনকে প্রশাসনিক আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না জেনে বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের আটক করা হয়েছিল।
এদিকে ১৭ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৩ জন ইসরায়েলি আর চারজন থাই নাগরিক।
এদিকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, এমন অভিযোগে আজ শনিবার এক ঘণ্টা বিলম্বের পর আবারও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় উত্তরে সাহায্য সরবরাহ নিয়ে বিরোধ মিটে যাওয়ার পর শনিবার রাতে (স্থানীয় সময়) জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে হামাস।
হামাসের সামরিক কাসেম ব্রিগেডস শনিবার জানিয়েছে, গাজার উত্তর অংশে ত্রাণ সরবরাহ এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে যেসব ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে, তাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তি দিতেও বিলম্ব করছে তারা।
তবে হামাসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুক্তির শর্ত তারা লঙ্ঘন করেনি। একই সঙ্গে এই যুদ্ধবিরতি শেষে হামাসকে নির্মূল করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
চুক্তির শর্তে রয়েছে, প্রতি একজন জিম্মির পরিবর্তে তিন বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
হামাস জানায়, চার দিনের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে ৩৯ ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে ১৩ ইসরায়েলি ও সাত বিদেশিকে মুক্তি দেবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, শনিবার ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ৩৯ থেকে ৪২ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের ১৩ জিম্মি এবং থাইল্যান্ডের ১২ শ্রমিককে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় ৬ হাজার ১৫০ শিশুসহ এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। হামাসের এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত দেড় মাসে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫৩২ জনে। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
১৪ অক্টোবর প্রথম বার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আপত্তির কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
তার দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতির আহ্বানের প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু রাশিয়া ও চীনের আপত্তির কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন প্রস্তাব বাতিল হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কিংবা মানবিক বিরতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছিল কাতার ও মিসর।