মহানবী (সা.)-এর মেহমানদারি যেমন ছিল

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৩৩, বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৮

নিউজ ডেস্কঃ মেহমানদারি মানুষের মধ্যে সদ্ভাব তৈরি করে। সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় করে। সামাজিক বন্ধন ও সৌহার্দ্য উন্নত করে। মুসলমানদের জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.) প্রতিদিন মেহমানদারি করতেন। এটা ছিল তাঁর আদর্শ।

কথিত আছে, তিনি মেহমান ছাড়া খুব সহজে খাবার গ্রহণ করতেন না। কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘আমার ফেরেশতারা (পুত্রসন্তানের) সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহিমের কাছে এলো। তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। সে অবিলম্বে কাবাবকৃত গোবৎস (ভুনা গরুর গোশত) নিয়ে এলো।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬৯)

এক. মেহমানকে স্বাগত জানানো : মেহমানকে স্বাগত জানানো ও তার আগমনে খুশি প্রকাশ করা মেজবানের দায়িত্ব। রাসুল (সা.)-এর কাছে কোনো মেহমান কিংবা প্রতিনিধিদল এলে তিনি স্বাগত জানাতেন। ‘মারহাবা’ বলতেন। খুশি প্রকাশ করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আবদুল কায়সের প্রতিনিধিদল নবী (সা.)-এর কাছে এলে তিনি বলেন, এই প্রতিনিধিদলের প্রতি ‘মারহাবা’, যারা লাঞ্ছিত ও লজ্জিত হয়ে আসেনি। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা রাবিয়া গোত্রের লোক। আমাদের ও আপনার মাঝে ‘মুজার’ গোত্র অবস্থান করছে। এ জন্য আমরা হারাম মাস ছাড়া আপনার খেদমতে পৌঁছতে পারি না। সুতরাং আপনি আমাদের এমন কিছু চূড়ান্ত নিয়ম-নীতি বলে দেন, যা অনুসরণ করে আমরা জান্নাতে যেতে পারি এবং আমাদের পেছনে যারা আছে তাদের পথ দেখাতে পারি। তিনি বলেন, আমি চারটি আদেশ ও চারটি নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছি। তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে এবং গনিমতের সম্পদের পঞ্চমাংশ দান করবে। আর কদুর খোল, সবুজ রং করা কলস, খেজুর মূলের এবং আলকাতরা রাঙানো পাত্রে পান করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৭৬)

দুই. অতিথিপরায়ণ ঈমানের আলামত : ঘরে মেহমান এলে তাকে হাসিমুখে সাদরে আমন্ত্রণ জানানো মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মুমিন তার আগমনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবে। খুশির কথা বলবে। সদাচরণ করবে। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের প্রতি সদাচরণ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭)

তিন. মেহমানকে সম্মান জানানোর নিয়ম : মেহমানের সম্মান করা ইসলামের বিধান। মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা। একদিন একরাত মেহমানের জন্য উত্তম ব্যবস্থাপনা করা ওয়াজিব। তিনদিন তিনরাত সাধারণ ব্যবস্থাপনা করা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মেহমানের সম্মান একদিন ও একরাত। আর সাধারণ মেহমানদারি তিনদিন ও তিনরাত। এরপরে (তা হবে) সদকা। মেজবানকে কষ্ট দিয়ে তার কাছে মেহমানের অবস্থান করা বৈধ নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৫)

চার. মেহমানের যত্ন না নিলে করণীয় : সামর্থ্য অনুযায়ী মেহমানের হক আদায় করা মেজবানের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে মুহাম্মদ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাদের কোনো জায়গায় পাঠালে এমন জাতির কাছে গিয়ে উপস্থিত হই, যারা আমাদের মেহমানদারি করে না। এ ব্যাপারে আপনার হুকুম কী? তিনি  বলেন, যদি তোমরা কোনো জাতির কাছে উপস্থিত হও, আর তারা মেহমানদারির জন্য উপযুক্ত যত্ন নেয়, তবে তোমরা তা গ্রহণ করবে। আর যদি তারা না করে, তাহলে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের থেকে মেহমানের হক আদায় করে নেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৭)

পাঁচ. মেহমানের জন্য রোজা ভেঙে ফেলা : দিনেরবেলা কেউ মেহমান হলো ঘরে। ঘরের মালিক রোজাদার—নফল রোজা রেখেছে। মেহমান ঘরের মালিক ছাড়া খাবার গ্রহণ করবে না—এখন মেহমানের সম্মানে ঘরের মালিক নফল রোজা ভেঙে ফেলতে পারবে; বরং তার উচিত, নফল রোজা ভেঙে মেহমানের সঙ্গে খাবার গ্রহণ করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৯)

Share This Article