পবিত্র কোরআনে ঈসা (আ.) সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:২৭, শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০ পৌষ ১৪২৮
পবিত্র কোরআন
পবিত্র কোরআন

ঈসা (আ.) সম্পর্কে আসমানি ধর্ম তথা ইসলাম, খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মের বিশ্বাস হলো, তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। এ বিষয়ে বিশ্বাসের বিরোধ নেই। 

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘মারইয়ামের পুত্র মাসিহ রাসুল ছাড়া আর কিছু নয়। তার আগে বহু রাসুল অতিক্রান্ত হয়েছে আর তার জননী পরম সত্যনিষ্ঠ ছিল। তারা উভয়ে খাদ্য ভক্ষণ করত। দেখো, আমি তাদের জন্য কিরূপ যুক্তি-প্রমাণ বর্ণনা করি; আবার দেখো, এরা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৭৫)

 

ঈসা (আ.) সম্পর্কে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের চিন্তাধারার মধ্যে বাহুল্য ও স্বল্পতা বিদ্যমান। খ্রিস্টানরা তাঁর প্রতি অতি সম্মান দেখিয়ে তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ হিসেবে বিশ্বাস করে। অন্যদিকে ইহুদিরা তাঁর প্রতি এতটুকু ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যে তাঁকে ইউসুফ মিস্ত্রির ‘জারজ সন্তান’ আখ্যায়িত করেছে (নাউজুবিল্লাহ)।

কোরআনের ভাষ্য মতে, তিনি আল্লাহর পুত্রও নন, আবার তিনি অবৈধভাবেও জন্মগ্রহণ করেননি, বরং তিনি অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি আল্লাহর পুত্র নন। তিনি আল্লাহর নবী, যেভাবে ইয়াহইয়া (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল অলৌকিকভাবে। তিনিও আল্লাহর পুত্র নন। তিনিও আল্লাহর নবী। মহান আল্লাহ স্ত্রী ও সন্তান থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।

খ্রিস্টানরা ‘ত্রিত্ববাদে’ বিশ্বাস করে। এটা তাদের বহুল আলোচিত ধর্মবিশ্বাস। ‘ত্রিত্ববাদ’-এর অর্থ হচ্ছে পিতা (গড), পুত্র (ঈসা মাসিহ) ও পবিত্র আত্মার সমন্বয়েই গড। তিনের মধ্যে একজন অংশীদার হলেন গড। এরপর তাঁরা তিনজনই এক এবং একজনই তিন। তিনের সমষ্টি ‘এক’ কিভাবে হয়—এর কোনো যুক্তিসংগত উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই একাধিক গডের অস্তিত্ব নিয়ে পোপদের আমলেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রধানত হেলেনি ও গনোস্টীয় দার্শনিকদের শিক্ষা থেকে এর উদ্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় শতাব্দীতে আন্তাকিয়ার পাদ্রি সিওফিলোস গ্রিক ভাষায় ‘ত্রিয়াস’ পরিভাষা ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যারা বলে যে মারইয়ামের পুত্র মাসিহই আল্লাহ; তারা তো কুফরি করেছে। অথচ মাসিহ বলেছিল, হে বনি ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। নিশ্চয়ই তারা কাফির, যারা বলে, আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যদি তারা তাদের উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফরির ওপর অটল থাকবে, তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।’ (সুরা : আল-মায়িদা, আয়াত : ৭২-৭৩)

ঈসা (আ.)-এর নাজিল হয় ইনজিল শরিফ। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃত ইনজিলের কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে ইনজিল বলতে বোঝায় মথি, মার্ক, লুক ও ইউহান্না এই চারজনের সংকলিত ঈসা (আ.)-এর চারটি জীবনীগ্রন্থকে। এর সঙ্গে লুকের লেখা ‘প্রেরিত পুস্তক’, পৌলের লেখা ১৪ চিঠি এবং পিতর ইউহান্না প্রমুখের লেখা আরো আটটি পত্র ও পুস্তিকাসহ মোট ২৭টির সমষ্টিকেও ইনজিল বলা হয়ে থাকে।

সাধারণত খ্রিস্টানরা ২৭টির সমষ্টিকেই ‘ইনজিল শরিফ’ নামে প্রচার করে থাকে, যদিও এই চারটি গ্রন্থের রচয়িতা সম্পর্কে বিতর্ক আছে। অমরেন্দ্রকুমার সেন তাঁর ‘চিরদিনের বাইবেল’ (পৃষ্ঠা ২২৯)-এ বলেন, নিউ টেস্টামেন্টের চারটি গসপেল বা সুসমাচার পণ্ডিত ও গবেষকরা বিভিন্ন সময় বারবার পড়েছেন। প্রতিটি শব্দ, তার উৎপত্তি, ধাতুগত অর্থ, ব্যাখ্যা—সব কিছু খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে গসপেলগুলোর মূল লেখকরা যিশুকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না বা তাঁর সংস্পর্শে আসেননি।

মহান আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে ঈসা (আ.) যে শিক্ষা দিতেন, তা নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে পাওয়া না গেলে এটা পরিষ্কার যে তিনি তাঁর উম্মতকে তাওহিদ তথা একত্ববাদের শিক্ষা দিয়েছেন। বর্তমানে প্রচলিত ইউহান্নার ইনজিলে আছে, ঈসা মাসিহ (আ.) আল্লাহ তাআলার কাছে মোনাজাত করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অর্থাৎ এক ও সত্য আল্লাহকে আর তুমি যাকে পাঠিয়েছ সেই ঈসা মাসিহ (আ.)-কে জানতে পারাই সত্য জীবন।’ (ইউহান্না ১৭ : ৩)

একজন নেতা ঈসা (আ.)-কে বলেছিলেন, হুজুর! আপনি একজন ভালো লোক। ঈসা (আ.) তাঁকে বলেন, ‘আমাকে ভালো বলছেন কেন? একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ভালো নয়।’ (লুক ১৮ : ১৮, ১৯)

এক যুবক এসে ঈসা (আ.)-কে বলল, হুজুর! অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য আমাকে ভালো কী করতে হবে? ঈসা (আ.) তাকে বলেন, ‘ভালোর বিষয়ে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ? ভালো শুধু একজনই আছেন। যদি তুমি অনন্ত জীবন পেতে চাও, তাহলে তাঁর সব হুকুম পালন করো।’ (মথি ১৯ : ১৬, ১৭)

এসব বক্তব্য থেকে এই উপসংহারে পৌঁছা খুব সহজ যে ঈসা (আ.) তাঁর উম্মতকে তাওহিদ তথা একত্ববাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

Share This Article