ঢাকা ওয়াসা ২ লাখ টাকার পানির বিল দিয়েছে ১২ লাখ

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৩৫, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮ পৌষ ১৪২৮

বিল হতে পারত সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা। সেখানে ঢাকা ওয়াসা পানির বিল দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। ১৩ মাসে দুটি মাত্র ট্যাপের মাধ্যমে ব্যবহৃত পানির এই বিস্ময়কর বিল দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। 

সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুশি না করায় এমনটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসার দায়িত্বশীলদের কাছে ধরনাও দিয়েছেন তিনি। লিখিতভাবে জানিয়ে কোনো সদুত্তর পাননি।

এ বিষয়ে বিল ইস্যুকারী আলমগীর হোসেনের সাথে সাংবাদিক পরিচয় না দিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলতে তার অফিসে গেলে আলমগীর হোসেন জানান, ঠিকাদারকে আগেই বলেছিলাম সবকিছু মিটমাট করে নেন। সে মিটমাট না করে বিভিন্ন লোককে দিয়ে ফোন করায়। বিষয়টি নিয়ে আতিয়া পারভিনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। আতিয়া পারভিনের কার্যালয়ে গেলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টি ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম রায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই আতিয়া পারভিনকে ফোন দেন। তিনি আতিয়া পারভিনকে এক সপ্তাহের মধ্যে আলমগীর হোসেনকে বদলির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মোট বিলের অর্ধেক কমিয়ে নতুন বিল ইস্যুর নির্দেশ দেন।

পরে উত্তম রায় জানান, এখানে বিল ইস্যুকারীর উচিত ছিল পানির সংযোগ নেওয়ার পরের মাস থেকেই প্রতি মাসে বিল ইস্যু করা। কিন্তু সেটা না করে একবারে ১৩ মাসের বিল দিয়েছে। এজন্য আলমগীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আর ওয়াসার নিয়ম অনুযায়ী যেসব এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন আছে, সেখানে পানির বিলের সমপরিমাণ স্যুয়ারেজ বিল ধরা হয়। কিন্তু মাঠ দুটিতে নির্মাণকাজে তারা স্যুয়ারেজ ব্যবহার করেনি। কিন্তু পানির সাথে স্যুয়ারেজের বিলও ইস্যু করা হয়েছে। এখন নির্দেশ দিয়েছি স্যুয়ারেজের বিল বাদ দিয়ে নতুন করে বিল দিতে। এতে ওই বিল অর্ধেক হয়ে যাবে।

ভুক্তভোগী হাসিবুর রহমান বলেন, স্যুয়ারেজের বিল বাদ দিলেও তার মোট বিল দাঁড়াবে ৬ লাখ টাকার মতো। কিন্তু তিনি যে পানি ব্যবহার করেছেন তাতে ২ লাখ টাকাও বিল হওয়ার কথা না। আর ১০ লাখ টাকার কাজে পানির বিল ২ লাখ দিলে ব্যবসা তাহলে কি হবে? এখন মনে হচ্ছে মিটার রিডারের সাথে বোঝাপড়া করে নিলেই ভাল হতো।

গতকাল আবার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'পানির বিল ১২ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৬ লাখ করে দিয়েছে। এখন আর এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। বিলও জমা দিয়ে ফেলেছি।'

সংশ্নিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বনানীর সি ব্লক পার্ক-মাঠ ও বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ির মাঠের কোণে ২৫০ বর্গফুটের একটি কক্ষ তৈরির কাজ পায় ঠিকাদার হাসিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশন। এই দুটি মাঠের এক কোণে ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্পসহ অবৈধ স্থাপনা ছিল। একদিন মেয়র আতিকুল ইসলাম নিজে ওয়াসার দখলে থাকা অংশটি দখলমুক্ত করে ঠিকাদারকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারণ ওই পাম্প দুটির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দোকানপাটে পানি বিক্রি করে ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন। আর অবৈধ অবকাঠামো ভাড়া দিয়েও বাণিজ্য করতো। ২০২০ সালের মে মাসে দুটি মাঠেই একটি করে পানির মিটার লাগিয়ে পৃথক সংযোগ নেন ঠিকাদার। পাঁচ মাস পর আলমগীর নামে ওয়াসার একজন বিল ইস্যুকারী গিয়ে ঠিকাদারকে বলেন, বনানীর সি ব্লকের মিটারে পানির বিল এসেছে ৩ লাখ টাকা। এক লাখ টাকা তাকে দিলে তিনি বিল কমিয়ে এক লাখ টাকা করে দিতে পারেন। ঠিকাদার তাতে রাজি হননি। কয়েক মাস পর আলমগীর গিয়ে ঠিকাদারকে বলেন, আপনার বিল এসেছে ৮ লাখ টাকা। তিন লাখ টাকা দিলে বিল ২ লাখ টাকা করে দেব। ঠিকাদার তাতেও রাজি হননি। তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আতিয়া পারভিনকে জানান। তিনিও কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে জানান।

বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ির মাঠের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটান ওই আলমগীর। ওই মাঠের পানি সংযোগের বিপরীতে বিল দেন ৪ লাখ টাকা।

গত ২৪ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে দেওয়া চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশনের প্রোপাইটার হাসিবুর রহমান বলেন, 'ডিএনসিসির সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় সি ব্লক সংলগ্ন পার্কে পানির সংযোগ গ্রহণপূর্বক পার্কটির নির্মাণকাজ করছি। গত ৩০ জুন তারিখে পানির বিল বাবদ ৭ লাখ ৮১ হাজার ১৫৫ টাকার একটি বিল আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উক্ত পার্কটিতে ২৫০ বর্গফুটের মতো ছোট স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত পানির বিল ৭ লাখ ৮১ হাজার ১৫৫ টাকা অযৌক্তিক ও কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া সরজমিন মিটার পরিদর্শন ছাড়াই মনগড়া একটি বিল প্রস্তুত করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, বাস্তবতার বিচারে অসম্ভব ও ভৌতিক বিলও বটে। এর আগেও প্রতি মাসে কোনো বিলের কপি প্রদান করা হয়নি। পরবর্তীতে এক সাথে এত টাকার বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, পার্কিটির ২৫০ বর্গফুট বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজে একটি মাত্র পানির ট্যাপ ব্যবহার করা হয়। একটি পানির ট্যাপের পানির বিল এত হওয়ায় আমাদের কাছে বাস্তবতার সাথে গরমিল ও অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ জুন ও ২৮ জুলাই উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, রাজস্ব জোন-৫ বরাবর পত্র দিলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ অবস্থায় মিটারটির বিল পুনরায় বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।'
 

ঠিক একইভাবে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ির পার্কের ক্ষেত্রেও আরেকটি চিঠি দেন ঠিকাদার। সেটাতে বিল দেওয়া হয় ৪ লাখ ৯ হাজার ১১৩ টাকা। চেয়ারম্যান বাড়ির মাঠের পানির হিসাব নম্বর ০৫১৫৭৬৪৫০৭ ও সি ব্লকের পানির হিসাব নম্বর ০৫১৫৭৬৪৫১৫।

সূত্র-সমকাল

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


আম্মানকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ

ডেমরায় ২ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে মারধর-হত্যার হুমকি কিশোর গ্যাংয়ের

জবি ছাত্রীর মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষক বরখাস্ত ছাত্রকে বহিষ্কার

আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে যা লেখেন জবি ছাত্রী অবন্তিকা

রমজানেও খলিলের দোকানে মিলছে ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস

রমজানে সুলভমূল্যে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিপণন কার্যক্রমের উদ্বোধন

রমজানের শেষ ১৫ দিন বাড়বে মেট্রোরেলের সময়

কুমিল্লার প্রথম নগরমাতা তাহসিন বাহার সূচনা

রাজধানী থেকে ১০ ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

গুলশানে অভিযান: কাচ্চি ভাইকে লাখ টাকা জরিমানা

বিএসএমএমউর উপাচার্য হচ্ছেন ডা. দীন মোহাম্মদ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে টুইন পিকের রুফটপ রেস্তোরাঁ