রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এড়াতে খালেদাকে দেয়া হচ্ছে ইনজেকশন

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৯, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭ পৌষ ১৪২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতিই হয়নি। তার শরীরের অভ্যন্তরে থেমে থেমে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আর রক্তক্ষরণের এ ঝুঁকি এড়াতে দেয়া হচ্ছে ইনজেকশন। কেন এই রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার উৎস খুঁজতে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ক্যামেরাযুক্ত ক্যাপসুল, যেটি সেবন করিয়ে পরিপাকতন্ত্রের প্রকৃত রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে। চিকিৎসকরা এটাকে বলছেন, ‘ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি’।

চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, ক্যাপসুল এন্ডোসকপি পরিপাকতন্ত্রের রোগ নির্ণয়ের একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি ভিটামিন সাইজ ক্যাপসুল সেবনের মাধ্যমে রোগীর পারিপাকতন্ত্রের (মুখ থেকে পায়ুপথ) চলমান ও স্থির ছবি সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। ভিটামিন সাইজের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই ক্যাপসুলের মধ্যে রয়েছে একাধিক ক্যামেরা, লাইট, ব্যাটারি এবং তথ্য সংরক্ষণকারী ডিভাইস। পরিপাকতন্ত্রের রোগ নির্ণয়ের গতানুগতিক পদ্ধতির (এন্ডোসকপি ও ক্লোনোসকপি) মাধ্যমে যখন উপসর্গের কারণ নির্ণয় করা যায় না, তখন ক্যাপসুল এন্ডোসকপি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বেগম জিয়ার চিকিৎসক ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বড় ধরনের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এড়াতে তাকে ইনজেকশন দেয়া হচ্ছে। তার শরীর এতটাই দুর্বল যে কথা বলতেও কষ্ট পাচ্ছেন। জটিল এমন শারীরিক অবস্থায় বিবেচনা করেই গত সপ্তাহে ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য বিদেশ থেকে ক্যাপসুল আনা হয়েছে।

ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এটি মুখে খাওয়ানো হয়। ওই ক্যাপসুল শরীরের ভেতরে প্রবেশ করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থিরচিত্র তুলতে থাকে, যা কম্পিউটারে দেখতে পান চিকিৎসকরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা পায়ুপথের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। প্রতি সেকেন্ডে কয়েকটি ছবি তুলতে সক্ষম এই ক্যাপসুল। সাধারণত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে খুবই স্বল্প পরিসরে এর ব্যবহার রয়েছে।

গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মো: সিদ্দিকী (এ এফ এম সিদ্দিকী) প্রথমবারের মতো জানান, ‘খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। উনার মেসিভ রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন।’ গত ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। এই বোর্ডে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার এখন পর্যন্ত পাঁচবার বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়েছে। প্রতিবারই তিনি মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকিতে ছিলেন। রক্তক্ষরণ হলে শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে তিনি উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেন। রক্তবমির কারণে তার খাওয়া দাওয়ায় অনীহাও বেড়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর রাত থেকে বেগম জিয়ার আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়, পরদিন তা আরো বাড়ে। এরপর থেকে থেমে থেমে রক্তপাত হচ্ছে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে মাঝে মাঝে তাকে রক্ত দিতে হয়।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তার যে ধরনের চিকিৎসা দরকার সেই প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই। তাই তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো হলে সুচিকিৎসা সম্ভব।

জাহিদ হোসেন বলেন, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিনই মেডিক্যাল বোর্ড বসে তার চিকিৎসা কী হবে তা ঠিক করছেন। রক্তক্ষরণ বন্ধে তাকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এর আগে ১৩, ১৭, ২৩ ও ৩১ নভেম্বর বড় ধরনের রক্তক্ষরণের কারণে বিএনপি প্রধান মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ২৪ নভেম্বর চিকিৎসকরা তার এন্ডোস্কপি ও কলোনস্কোপি করেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেও আবার কখন শুরু হয় তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত থাকেন। কারণ, থেমে থেমে এই রক্তক্ষরণ অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর ফলে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। তাকে বিদেশ পাঠাতে চিকিৎসকরা সুপারিশ করলেও তাতে কর্ণপাত করছে না সরকার। এতে প্রমাণিত হয়, এই ‘গণবিরোধী, ভয়াবহ দানবীয় ও স্বাধীনতাবিরোধী সরকার’ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে দিতে চায় না। তারা দেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

Share This Article


২২ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ, যাত্রাপথে বাড়তি নিরাপত্তা

১৫০ উপজেলায় ১৮৯১ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করার জন্য বিএনপির জন্ম: সেতুমন্ত্রী

ফখরুলের কাছে ৬০ লাখ কারাবন্দির তালিকা চাইলেন কাদের

ঈদ ও বৈশাখের লম্বা ছুটি শেষে খুলেছে অফিস

দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর

মোমবাতি জ্বালিয়ে সেহরি-ইফতার খাবারের দিন এখন অতীত!

কিশোর অপরাধীদের নিয়ে যে নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ফাঁকা হয়ে আসছে ঢাকা

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গোটা বাংলাদেশ গিলে খাবে : ওবায়দুল কাদের

লাইলাতুল কদর : দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর