ছয়মাসের গর্ভবতী তামিমা, সন্তান কার?

  বাংলাদেশের কথা ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৪০, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬ পৌষ ১৪২৮
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো


ক্রিকেটার নাসির হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী পরিচয় দেওয়া তামিমা সুলতানা তাম্মীর সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেছেন, ‘তামিমা আদালতে বলছেন, তিনি ছয়মাসের গর্ভবতী। 

যদি তাই হয় এবং রাকিব মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে রাকিবের ওপর তামিমার ভবিষৎ এই সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্বের ভারও এসে বর্তাবে। এখানে জটিলতার মধ্যে আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো।’

সোমবার নাসির ও তামিমার জামিন শুনানি শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।

 

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‘আজ আদালতে নাসির ও তামিমার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এ মামলাটি এরই মধ্যে বিচারিক আদালতে বদলি হয়ে এসেছে। মামলায় আজ আসামিপক্ষ তিনটি পৃথক আবেদন করেছে। সেগুলো হলো- জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ, অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছানোর সময়ের আবেদন এবং নাসির ও তামিমাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি। বিচারক প্রথম দুটি আবেদন গ্রহণ করলেও শেষের আবেদনটি গ্রহণ করেননি।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘আদালতে আজ তামিমা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেছেন, তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে সে কাগজটি যেহেতু আমরা দেখিনি, তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করছি না। আদালতে তামিমা বলেছেন, তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু যেখানে স্বামীর বৈধতার বিষয়টিই এখনও মীমাংসা হয়নি, সেখানে তামিমার গর্ভের সন্তান নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। যদি রাকিব এ মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে এ সন্তানের ভরণ-পোষণের বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে, নাসির স্বামী হিসেবে বৈধতা না পেলে তামিমার সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।’

ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘‘‌বিষয়টি খুব বিব্রতকর। এরই মধ্যে তামিমার আগের সন্তান তুবা মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত এবং আরেকজন সন্তান যদি সত্যিই এসে থাকে, তাহলে এখানেও একটা জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ মামলাটি হলো একটা বিয়ে থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে’। এটা নিয়েই বিচার চলছে। সে অবস্থায় আমরা যদি সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারায় আসি, তাহলে ‘যার সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান এবং যিনি স্বামী হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, তাকেই সন্তানের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।’ এখানে রাকিব যদি মামলায় জয়লাভ করেন, তাহলে রাকিবের ওপর সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্বের ভার এসে বর্তায়। এখানে জটিলতার মধ্যে আরও একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো।’

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর নাসির ও তামিমা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে হাজির হয়ে জামিন পান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির হোসেন এবং তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে এ মামলায় সমন জারির নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার তদন্তে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, সৌদিয়া এয়ার লাইন্সের বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মী এবং তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, ‘২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর (রাকিব হাসান) সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামি শরীয়ত অনুযায়ী, তিন লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তাঁদের এক মেয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বয়স আট বছর।’

মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন বিমানবালা। তিনি সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হতো।

মামলায় বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সঙ্গে ২ নম্বর আসামির (ক্রিকেটার নাসির) কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এ ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীকালে পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হন।

এ ছাড়া তাঁদের গায়ে হলুদ ও বিয়ে পরবর্তী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যথাক্রমে ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয়, যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘তামিমা বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় নাসিরের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাসির বাদীকে ফোন করে জানান যে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তার সঙ্গে তামিমা আছেন। বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকাবস্থায় তামিমার নাসিরকে বিয়ে করা, যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। আসামির সঙ্গে তিনি অবৈধ বিয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যা নিকৃষ্ট ব্যভিচার।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘আসামিদের এরূপ অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে বাদী ও তাঁর শিশু কন্যা মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে বাদীর চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা বাদীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

Share This Article